সাহসের ইনাম চাকরি। যিনি মানুষের বিপদে ঝাঁপিয়ে পড়ে সাহসের স্বাক্ষর রাখবেন, তাঁকে পুলিশ ও অন্য দফতরে চাকরি দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সাহসের পুরস্কারের সঙ্গে বিশেষ করে পুলিশে চাকরির বিষয়টিকে জুড়ে দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী, শুক্রবার রাজ্য পুলিশের এক অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, “মানুষের বিপদে যাঁরা সাহসিকতার সঙ্গে কাজ করবেন, পুলিশে তাঁদের চাকরি পাকা।” ওই মঞ্চে তখন হাজির ছিলেন রাজ্যের মুখ্যসচিব সঞ্জয় মিত্র, স্বরাষ্ট্রসচিব বাসুদের বন্দ্যোপাধ্যায় এবং ডিজি জিএমপি রেড্ডি। মুখ্যমন্ত্রী তাঁদের এই সরকারি প্রতিশ্রুতি রূপায়ণেরও ব্যবস্থা করতে বলেন।
সাহসিকতা, নিষ্ঠা, সেবার জন্য এ দিন রাজ্য পুলিশের ৭১ জন কর্মীকে পুরস্কৃত করেন মুখ্যমন্ত্রী। একই সঙ্গে দুষ্কৃতীদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের জন্য হাওড়ার তরুণী সাক্ষী সিংহ, হুগলির শেখ নাসের হোসেনকে দেওয়া হয় মুখ্যমন্ত্রীর সাহসিকতা পুরস্কার। গত অক্টোবরে পশ্চিম মেদিনীপুরের আঠাঙ্গি গ্রামে বন্যার কবল থেকে চার জনকে বাঁচানোর জন্য ধুলেশ্বরী দেহুরি এবং বিধ্বংসী আগুনের কবল থেকে অনেককে রক্ষা করায় বর্ধমানের জনাব মুসারফ চৌধুরীকে একই পুরস্কারে সম্মানিত করা হয়। ওই চার জনকে পদক দেন মমতা নিজেই। মঞ্চে দাঁড়িয়েই মুখ্যমন্ত্রী নির্দেশ দেন, সাহসিকতার জন্য পুরস্কৃত এই চার জনকে অবিলম্বে পুলিশে চাকরি দিতে হবে। সেই সঙ্গে আগামী দিনে যাঁরা এই ধরনের কৃতিত্বের স্বাক্ষর রাখবেন, সরকার তাঁদেরও চাকরির বন্দোবস্ত করবে বলে জানিয়ে দেন তিনি।
একই সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “আগুন নেভানোর কাজে বা বিপর্যয় মোকাবিলায় কেউ সাহসিকতা দেখালে সংশ্লিষ্ট দফতরেই তাঁদের চাকরি দেওয়ার ব্যবস্থা করা হবে।” এই ব্যাপারে ওই সব দফতরের কর্তাদেরও প্রয়োজনীয় নির্দেশ দেওয়া হবে বলে মুখ্যমন্ত্রী জানান।
পুলিশের কাজে সাহস, নিষ্ঠার প্রসঙ্গ তুলে তার সঙ্গে আমজনতার শক্তির মেলবন্ধনের প্রয়োজনের কথাও জানান মুখ্যমন্ত্রী। তাঁর বক্তব্য, পুলিশের সব চেয়ে বড় শক্তি জনসাধারণই। এই ব্যাপারে জন-সচেতনতা বাড়াতে হবে। তাতে মানুষের সামাজিক দায়িত্বও বাড়বে। তাঁর কথায়, “পুলিশের মতো আরও একটা ফোর্স আছে। সেটা হচ্ছে জনগণের ফোর্স।” সেই বাহিনীকে কাজে লাগাতে পারলে সমাজের অনেক অপরাধ রোধ করা সম্ভব হবে বলে মনে করেন মুখ্যমন্ত্রী।
পুলিশের কাজের প্রশংসার সঙ্গে সঙ্গে তাদের সতর্কও করে দেন মুখ্যমন্ত্রী। পুলিশকর্মীদের উদ্দেশে তাঁর পরামর্শ, “বেশি করে এলাকায় ঘুরুন। ফাঁকা জায়গায় নজরদারি চালান। কারণ, ওই সব জায়গায় দুষ্টুমি বেশি হয়। আপনারা টহল যত বাড়াবেন, ততই অসামাজিক দৈত্যদের টহল বন্ধ হবে।” কী ভাবে পুলিশকে এই কাজ করতে হবে, তার একটা পরিকল্পনাও পেশ করেন মমতা। তিনি পুলিশকর্মীদের বলেন, “নিজের নিজের থানায় ক’টা ক্লাব আছে, ক’জন দুষ্টু লোক আছে, ক’টা পুজো হয়, ক’টা মন্দির বা মসজিদ আছে তার পুরো চিত্র তৈরি রাখবেন।”
পুলিশকর্মীদের আবাসন-সমস্যা মেটানোর আশ্বাসও দেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি জানান, রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায় পুলিশ আবাসন প্রকল্প রূপায়ণ করা হবে। ফ্ল্যাট হবে প্রায় ১০ হাজার। ওই সব প্রকল্পে যে-জমি লাগবে, সরকার তা নিখরচায় দেবে।
পুলিশের অনুষ্ঠান ছাড়াও মুখ্যমন্ত্রী এ দিন কেএমডিএ এবং কলকাতা পুরসভার উদ্যোগে গঙ্গাতীরের সৌন্দর্যায়ন প্রকল্পের উদ্বোধন করেন। |
কোর্টের সময় বরবাদ, জরিমানা কংগ্রেসের |
অকারণে কলকাতা হাইকোর্টের সময় নষ্ট করার দায়ে প্রদেশ কংগ্রেসের ১০ হাজার টাকা জরিমানা করলেন বিচারপতি দীপঙ্কর দত্ত। প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগের পরীক্ষা (টেট ) নিয়ে কংগ্রেস যে -মামলা করেছিল, সেটিও খারিজ হয়ে গিয়েছে। প্রদেশ কংগ্রেসের তরফে হাইকোর্টে বলা হয়েছিল, তথ্য জানার আইনে তারা প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের কাছে টেট পরীক্ষা সংক্রান্ত কিছু তথ্য জানতে চেয়েছিল। কিন্তু পর্ষদ তা জানায়নি। পর্ষদের আইনজীবী অবশ্য শুক্রবার আদালতে নথি জমা দিয়ে বলেন, প্রদেশ কংগ্রেস যে -সাতটি বিষয়ে তথ্য চেয়েছিল, সবই দেওয়া হয়েছে। আদালতে পেশ করা তথ্য বলছে, প্রদেশ কংগ্রেসের করণিক সই করে পর্ষদের পাঠানো কাগজপত্র গ্রহণ করেছিলেন। ওই নথি দেখার পরেই বিচারপতি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, মামলার ফয়সালার জন্য বহু আবেদনকারী দিনের পর দিন আদালতে ঘুরছেন। বিভিন্ন কারণে তাঁদের বিচার পেতে বিলম্ব হচ্ছে। সেখানে কিছু লোক তথ্যাদি ভাল করে খতিয়ে না -দেখেই মামলা ঠুকে দিচ্ছেন। এটা এক ধরনের অপরাধ। মামলাটি খারিজ করে দিয়ে প্রদেশ কংগ্রেসের ১০ হাজার টাকা জরিমানা ধার্য করেন বিচারপতি। |