তথ্যপ্রযুক্তি শিল্প, শপিং মল, মাল্টিপ্লেক্স -সহ বেশ কয়েকটি কাজের ক্ষেত্রকে ন্যূনতম মজুরির আওতায় আনছে রাজ্য সরকার। সম্প্রতি কলকাতার নিউ সেক্রেটারিয়েট ভবনে শ্রম দফতরের ন্যূনতম মজুরি সংক্রান্ত উপদেষ্টা কমিটির বৈঠকে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। বৈঠকে পাঁচটি শ্রমিক ইউনিয়ন, বণিক সভার প্রতিনিধিরা ছাড়াও রাজ্য সরকারের প্রতিনিধিরা হাজির ছিলেন। রাজ্যের শ্রমমন্ত্রী পূর্ণেন্দু বসু বলেন, “এর ফলে রাজ্যের প্রায় পাঁচ লক্ষের বেশি মানুষ উপকৃত হবেন।” চলতি মাসেই এ বিষয়ে বিজ্ঞপ্তি বার করা হবে বলে শ্রম দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে। তথ্যপ্রযুক্তি শিল্পের সফ্টওয়্যার তৈরি এবং আন্তর্জাতিক বিপিও সংক্রান্ত শিল্পে মজুরির অঙ্ক নিয়ে খুব বেশি ক্ষোভ নেই। কিন্তু দেশীয় বিপিও শিল্পে শ্রম আইন কার্যত মানাই হয় না বলে অভিযোগ। শ্রমিক ইউনিয়নগুলির বক্তব্য, এই শিল্পে অধিকাংশ কর্মী ১০ হাজার টাকার কম বেতন পান। তিন থেকে ছ’হাজার টাকায় রাতদিন কাজ করতে হয় অনেককেই। ন্যূনতম দৈনিক মজুরি চালু হলে তাঁদের লাভ হবে। সিটু -প্রভাবিত আইটি সার্ভিসেস অ্যাসোসিয়েশনের নেতা সোমনাথ ভট্টাচার্য বলেন, “আমরা ২০০৬ সাল থেকে তথ্যপ্রযুক্তি শিল্পে ন্যূনতম মজুরি নিয়ে আন্দোলন করছি। সরকারের এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত।”
ন্যূনতম মজুরি বেঁধে দেওয়া হলে লাভ হবে বলে মনে করছে শিল্প মহলও। তথ্যপ্রযুক্তির বিভিন্ন সংস্থার মালিকদের সংগঠন সেক্টর ফাইভ স্টেক হোল্ডার অ্যাসোসিয়েশনের ভাইস প্রেসিডেন্ট কল্যাণ কর বলেন, “সরকারের এই সিদ্ধান্তে তথ্যপ্রযুক্তি শিল্পের লাভ হবে। ভাল ছেলেরা কাজ করতে আসবেন। কাজের মান বাড়বে।” |
ন্যূনতম মজুরির আওতায় এল |
• শপিং মল, মাল্টিপ্লেক্স • ডিপার্টমেন্টাল স্টোর, মেগাস্টোর
• বটলিং -প্যাকেজিং • ড্রাগস অ্যান্ড ফার্মাসিউটিক্যালস • হোটেল ও রেস্তোরাঁ
• বরফ কল • অটোমোবাইল গ্যারাজ • বড় ক্লাব, গেস্ট হাউস • লোডিং -আনলোডিং কেন্দ্র
• বোর্ডিং হল (২০ -র বেশি কর্মী ) • ছোট চা বাগান (১৫ একরের নীচে ) |
|
কিন্তু আজকাল বহু সংস্থা তাদের কাজ ‘আউটসোর্স’ করে দেয়। ঠিকাদার সংস্থাগুলি কর্মীদের কত বেতন দিচ্ছে, সে বিষয়ে বহু সংস্থাই কোনও দায়িত্ব নিতে অস্বীকার করে। সে ক্ষেত্রে ন্যূনতম মজুরি বেঁধে দিয়ে কতটা লাভ হবে ওই কর্মীদের? শ্রম দফতরের এক কর্তা জানিয়েছেন, আউটসোর্সিং করা হলেও ন্যূনতম মজুরির দায় এড়াতে পারবেন না কর্তৃপক্ষ। ঠিকাদার সংস্থা নিয়ম মেনে বেতন দিচ্ছে কি না, তা দেখার দায়িত্ব থাকবে মূল সংস্থার ওপরে। অনিয়ম নজরে এলে মূল সংস্থার বিরুদ্ধেও আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
তথ্যপ্রযুক্তি শিল্প ছাড়াও আরও ৩১টি পেশাকে ন্যূনতম মজুরির আওতায় আনতে চলেছে রাজ্য শ্রম দফতর। এর ফলে রাজ্যে মোট ৯৩টি পেশাকে ন্যূনতম মজুরির আওতায় আনা হচ্ছে বলে রাজ্য শ্রম দফতরের কর্তারা জানিয়েছেন। এর মধ্যে রয়েছে শপিং মল, মাল্টিপ্লেক্স, ডিপার্টমেন্টাল স্টোর, মেগা স্টোরের কর্মীরাও। ঝকঝকে ইউনিফর্মে সেজে উচ্চমূল্যের পণ্য বিক্রি করলেও, বেতনের অঙ্কে তাঁদের অনেকেই দারিদ্রসীমার নীচে। একটি রিটেল চেন -এর কর্মী জানান, দিনে ১০ -১২ ঘণ্টা কাজ করেও তাঁরা মাসে তিন থেকে ছ’হাজার টাকা বেতন পান। কেউ কেউ তার সঙ্গে ফুড কুপন কিংবা শপিং ভাউচার। ন্যূনতম মজুরির আওতায় আনলে তাদের বেতনও বাড়াতে হবে অনেকটাই। বেশ কয়েকটি রিটেল চেন -এর মালিক কিশোর বিয়ানি অবশ্য বলেন, “আমাদের কর্মীরা ন্যূনতম মজুরি পাচ্ছেনই। তবু পশ্চিমবঙ্গ সরকারের এই উদ্যোগকে স্বাগত জানাই।”
তথ্যপ্রযুক্তি শিল্প এবং ছোট চা বাগানগুলির ন্যূনতম মজুরি কত হবে, তা ঠিক করার জন্য দু’টি কমিটি তৈরি করেছে শ্রম দফতর। তার সদস্যেরা মজুরির সুপারিশ করবেন। প্রসঙ্গত, রাজ্যে বর্তমানে অদক্ষ শ্রমিকদের জন্য ন্যূনতম দৈনিক মজুরির হার ২৩১ টাকা। দক্ষতা অনুসারে বাকি চারটি ধাপের জন্য প্রতিটিতে ১০ শতাংশ করে বাড়ানো হয়েছে। এ ছাড়াও মেডিক্যাল রিপ্রেজেন্টেটিভদের জন্য হাইকোর্টের নির্দেশে নতুন করে বিজ্ঞপ্তি জারির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। মেডিক্যাল রিপ্রেজেন্টেটিভরা অধিকাংশই দক্ষ শ্রমিক ধরে নিয়ে তাঁদের ন্যূনতম বেতন ৮৫০০ -৯০০০ টাকা ঠিক করা হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে রাজস্থান শ্রম দফতরের নিয়মকে মেনে এগোতে চাইছে রাজ্য।
শ্রম দফতরের আধিকারিকেরা জানিয়েছেন, বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করার পরে ৬০ দিন ওয়েবসাইটে রাখা হবে। কেউ কোনও আপত্তি বা পরামর্শ জানাতেই পারেন। সেই আপত্তি বা পরামর্শ খতিয়ে দেখবে ন্যূনতম মজুরি সংক্রান্ত উপদেষ্টা কমিটি। তার পরে মজুরির হার ঠিক করা হবে। |