প্রকাশ্যে স্বীকার করতে রাজি নন কোনও নেতাই। কিন্তু আড়ালে তাঁদের প্রায় সকলেই মেনে নিচ্ছেন, ধর্মঘটের অস্ত্র ভোঁতা হয়ে গিয়েছে। এই অবস্থায় ১২ ফেব্রুয়ারি চটকল ধর্মঘটের ডাক দিয়েও তা নিঃশর্তে প্রত্যাহার করে নিল সিটু -সহ ২০টি কেন্দ্রীয় শ্রমিক সংগঠন। শুক্রবার শ্রমিক, মালিক ও শ্রম দফতরের মধ্যে তিন ঘণ্টার বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
চটকল শিল্পে শ্রমিকদের বেতন -কাঠামো নিয়ে শেষ বার ত্রিপাক্ষিক চুক্তি হয়েছিল ২০১০ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি। কিন্তু সেই চুক্তির সম্পূর্ণ রূপায়ণ এ -পর্যন্ত সম্ভব হয়নি। সেই চুক্তির বাস্তবায়ন করার দাবি তো আছেই। তা ছাড়াও অন্য কয়েকটি দাবিতে এবং চটের বস্তার বরাত কমিয়ে দেওয়ার কেন্দ্রীয় সরকারি সিদ্ধান্ত ও দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির প্রতিবাদে ১২ তারিখে চটশিল্পে এক দিনের প্রতীক ধর্মঘটের ডাক দিয়েছিল ২০টি শ্রমিক সংগঠন। তাদের মধ্যে আছে সিটু, এআইটিইউসি, আইএনটিইউসি, বিএমএস এবং তৃণমূল সাংসদ সৌগত রায়ের নেতৃত্বাধীন রাষ্ট্রীয় চটকল মজদুর সঙ্ঘও। একমাত্র তৃণমূলের শ্রমিক সংগঠন আইএনটিটিইউসি ওই ধর্মঘটের বিরোধিতা করছিল।
রাজ্যের শ্রম কমিশনার জাভেদ আখতারের ডাকে এ দিন নব মহাকরণে ২০টি শ্রমিক সংগঠন, মালিক পক্ষের সংগঠন ইন্ডিয়ান জুট মিলস অ্যাসোসিয়েশন বা আইজেএমএ -র বৈঠক বসে। সেখানে সিটু -র গোবিন্দ গুহ, এআইটিইউসি -র দেবাশিস দত্ত, আইএনটিইউসি -র গণেশ সরকার প্রমুখ শীর্ষ নেতা প্রস্তাবিত ধর্মঘটের পক্ষে যুক্তি দেখান। কিন্তু আইএনটিটিইউসি -র রাজ্য সভানেত্রী দোলা সেন জানান, চুক্তি রূপায়ণের জন্য রাজ্যের শ্রম দফতর ত্রিপাক্ষিক আলোচনা করছে। কেন্দ্রীয় বস্ত্র মন্ত্রক বস্তার বরাত কমানোর যে -সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তার বিরোধিতা করে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দিল্লিতে দরবার করছেন। লোকসভা ভোটের আগে বিষয়টি নিয়ে দিল্লির উপরে রাজনৈতিক চাপও তৈরি করা হচ্ছে। এই অবস্থায় ধর্মঘট করলে বিরূপ প্রতিক্রিয়া হবে বলে মন্তব্য করেন তৃণমূলের ওই শ্রমিক নেত্রী।
এ দিনই জুট কমিশনারের দফতর থেকে দিল্লিতে পাঠানো এক রিপোর্টে বলা হয়, জানুয়ারিতেও চটকলগুলিকে আগের মতোই মাসিক আড়াই লক্ষ চটের বস্তার বরাত দেওয়া হয়েছে। চটশিল্প মহলের একাংশের বক্তব্য, বস্ত্র মন্ত্রক বস্তার বরাত কমানোর সিদ্ধান্ত নিলেও তা এখনও কার্যকর হয়নি। সেই জন্যই চটকলগুলি আগের মতো বস্তার বরাত পেয়ে চলেছে। তাই উৎপাদন কমে যাওয়া এবং আর্থিক দৈন্যের অজুহাত তোলা যায় না। জুট কমিশনারের রিপোর্টের কথা এ দিনের বৈঠকে ওঠার পরে ধর্মঘটের ডাক তুলে নেওয়া ছাড়া গত্যন্তর ছিল না ২০টি শ্রমিক সংগঠনের। ধর্মঘটে না -যেতে অনুরোধ করেন আইজেএমএ -র চেয়ারম্যান রাঘব গুপ্তও।
অন্যান্য শ্রমিক সংগঠনের কথা বাদ দিলেও চটশিল্পে ধর্মঘট ডেকে তা থেকে সিটু -র পিছিয়ে আসা এই প্রথম। বৈঠকের পরে সিটু -র গোবিন্দবাবু বলেন, “বৃহত্তর শ্রমিক -স্বার্থেই আমরা ধর্মঘটের সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করেছি। ২০ ফেব্রুয়ারির মধ্যে শ্রম দফতরে আবার বৈঠকের অনুরোধ জানিয়েছি।” আর দোলাদেবীর অভিযোগ, “এই সব সংগঠন কখনওই শ্রমিক -স্বার্থে কাজ করেনি। চটকলের এই শুখা মরসুমে মালিক পক্ষের সঙ্গে ষড়যন্ত্র করে ইউনিয়নগুলি বারবার ধর্মঘট করেছে নিজেদের অস্তিত্ব বাঁচাতে। চরম দুর্দশায় পড়েছেন গরিব শ্রমিকেরা। আমরা সেটা আর হতে দেব না।”
শ্রমমন্ত্রী পূর্ণেন্দু বসু জানান, ২০ তারিখে শ্রমিক সংগঠনের প্রতিনিধিদের সঙ্গে আবার বৈঠক হবে। আর মালিক পক্ষের সঙ্গে শ্রম কমিশনার কথা বলবেন ২৫ তারিখে। |