|
|
|
|
শনিবারের নিবন্ধ ৩... |
সেই চপ কাটলেট সমানে চলিতেছে |
পিৎজা, বার্গার, তন্দুরি, চাইনিজের রমরমার মধ্যেও। শহর ঘুরে দেখলেন তীর্থ আচার্য। |
কড়াইয়ের ফুটন্ত তেল থেকে ঝাঁঝরি-হাতা দিয়ে হাল্কা হাতে তুলে নেওয়া হচ্ছে দুই বাই সাড়ে পাঁচ ইঞ্চির লালচে বাদামি আহ্লাদিকে।
আহ্লাদির সর্বাঙ্গে মুক্তোর মতো ফেনা। নানা মাপের। মুহূর্তে তা মিলিয়েও যাচ্ছে। ইডেন উদ্যানে ইভকে ছুঁয়ে ফেলা সরু সাপের মতো লোভ লকলক করে উঠছে সে রূপ দেখে। কী ভীষণ ইঙ্গিতবাহী!
এর পর প্লেটে কাসুন্দি-চিলি সসের সঙ্গে পরিবেশন। ছোট্ট কামড়! ভেঙে যাচ্ছে ওপরের আপাতকঠিন আস্তরণ। জিভের তিনটে স্বাদ কোরকে কী কমনীয়তায় ছড়িয়ে যাচ্ছে অনির্বচনীয় অশন উপহার।
ব্যস্ততার বিবাদী বাগ। কোল ইন্ডিয়া বিল্ডিং, কাফে ডি প্যারিস। ৬০ বছর হল। আজও একটা বিদেশি ব্যাঙ্ক, এস বি আই-এ নিয়মিত যায় কবিরাজি কাটলেট। কিছু কাল আগে যেত মহাকরণেও। ডিমের ব্যাটার, কাঁচা লঙ্কা, ধনেপাতা, পেঁয়াজ, রসুন এবং আদার আশ্রয়ে চিকেনের ফিলে। মুখে দিয়ে একটু চাপ দিলেই মিলিয়ে যায়।
কয়েক শো বিবাদী বাগ যাত্রীর নিয়মিত যাতায়াত ওই ক্যাফেতে। লোকে বলে, ‘বলো কী আছে গো ওই কাফের কবিরাজিতে’।
‘ইডিয়ট ব্রেনচপ’! কী অদ্ভুত নাম। অথচ এর আবেদন আজ ৮০ বছর ধরে অম্লান! আদতে এটা পাঁঠার মাথার ঘিলু দিয়ে তৈরি এক রকম চপ। ৮০ বছরের পুরনো মিত্র কাফে-র সিগনেচার ডিশ।
শোভাবাজার মেট্রো স্টেশনের উল্টো দিকে সেন্ট্রাল অ্যাভিনিউয়ের উপর সেকেলে দোকান এই ‘মিত্র ক্যাফে’। যার আজও সব কিছু এক রকম। কাটলেট, ফিশ ফ্রাই, ফিশ রোল, ফিশ কবিরাজি, স-ও-ব।
ছিল টাই, হয়ে গেল গোলাপ! ছিল কভারেজ, হয়ে গেল কবিরাজি! আদতে চিকেন-মাটন-মাছের ফিলেকে ‘কভারেজ’ দেয়, মানে ঢেকে রাখে, তাই কভারেজ। সেটাই হয়ে গেল কবিরাজি! |
|
মিত্র কাফে-র বর্তমান কর্ণধার তাপস রায় বললেন: “আমাদের চিকেন আফগানি বা মাটন চপের কদর এখনও এতটুকু কমেনি। তা ছাড়া কবিরাজি, ব্রেন চপ, ফিশ ডায়মন্ড ফ্রাই তো আছেই। চাইনিজ খাবারের যুগেও এগুলো সমান জনপ্রিয়। বিকেল সাড়ে চারটেয় খোলে, রাত ন’টায় বন্ধ। কলকাতায় এখন আমাদের চারটে আউটলেট। শোভাবাজার ছাড়া শ্যামবাজার, গড়িয়াহাট, ভিআইপির রঘুনাথপুরে বিগবাজারের পাশে। গড়িয়াহাট আর ভিআইপি-রটা খুলে যায় ১২টায়। আমরা কাঁচা মাছ-চিকেন-মাটন ব্যবহার করি, সিদ্ধ নয়, আর ব্যাটারটা তৈরি করি হাঁসের ডিমকে বিশেষ ভাবে ফেটিয়ে, তাতে সাদা বিস্কুটের গুঁড়ো দিয়ে। মেশানো হয় নিজস্ব কিছু মশলা। এবং সেটাই আমাদের ইউএসপি।”
১৯১০ সালে ‘মিত্র কাফে’ খুলেছিলেন গণেশ মিত্র নামে এক বাঙালি ব্যবসায়ী। “ওই দোকানেই নিয়মিত যাতায়াত ছিল আমার দাদু সুশীল রায়ের। আড্ডা দিতেই যেতেন। সেখান থেকে বন্ধুত্ব। একবার গণেশবাবু দাদুকে বলেন, আমি তো আর চালাতে পারছি না। তুমি বরং দোকানটা নিয়ে নাও। দাদু বলেন, আমি অত টাকা কোথা থেকে পাব? গণেশবাবু তাতে বলেন, সে আমি না হয়, খেয়ে খেয়ে উশুল করে নেব। কী অদ্ভুত সব বন্ধুত্ব ছিল, দেখুন। সেই শুরু। তখন ১৯২০-২১ সাল হবে। তার পর দাদু চলে যাওয়ার পর আমার ঠাকুমা গীতা রায় হাল ধরেন। উনি মারা যান ২০১০-এ। বলতে গেলে ঠাকুমার জন্যই আজ ‘মিত্র ক্যাফে’-র এত রমরমা,” বলছিলেন তাপসবাবু।
গীতাদেবী দু’টাকায় একটা চিকেন স্ট্যু চালু করেছিলেন। সবাই তো আর নামী-দামি খাবার খেতে পারেন, তাই। বলতেন, এই স্টু-এর যেন কোনওদিন দাম না বাড়ানো হয়। আজও ‘মিত্র কাফে’-তে গেলে ওই একই দামে পেয়ে যাবেন সেই একই স্ট্যু।
এলা রঙের দেওয়াল। পাথর সেটিং কাঠের টেবিল। ভেতরে বাইরে বসার জায়গা। বাহুল্যের নামমাত্র নেই। কিন্তু প্রায় সব সময় ভিড়ে ঠাসা। সে ভিড়ে বালিগঞ্জ থেকে বেলুড়, সালকিয়া থেকে শিয়ালদার মানুষ হরবখত। সেই কবে থেকে। এই ট্র্যাডিশন সমানে চলেছে।
“প্রথমবার এসেছি দাদুর হাত ধরে। ১৯৬১-৬২ সাল হবে। তখন কুমারটুলিতে থাকতাম। এখনও মাসে অন্তত তিন-চারবার তো আসা হয়ই।” এক শনিবারের সন্ধেয় সপরিবার এসে বলছিলেন সুদর্শন রায়। তাঁর পাতে তখনও চকচকে করছে কবিরাজির শেষ খণ্ড। পুডিং-এর অপেক্ষায় পরিবারের অন্যরা।
আস্ত একটা হাঁসের ডিমের চপ! নাম কিনা ডেভিল। নিরঞ্জন আগার-এর স্বাক্ষর-সমৃদ্ধ অনুপম অশন। গিরিশ পার্ক মেট্রো স্টেশনের পাশেই, সেন্ট্রাল অ্যাভিনিউয়ের উপর নিরঞ্জন আগর। বয়স নব্বইয়ের বেশি। সেরা ডিশ-- মাটন কোপ্তা-মাটন ব্রেস্ট কাটলেট-মাটন লিভার কারি-মাটন কাটলেট।
কাটলেট অনেকটা কালীচরণের লেট কাট-এর মতো। লাল টুকটুকে বলটা অফ স্টাম্পের বাইরে পড়ে ভিতরে ঢুকছে অথবা স্টাম্পে পড়ে আউট সুইং করে বাইরে বেরিয়ে যাওয়ার শেষ মুহূর্তে কাট। বল সোজা সীমানার বাইরে। ঝুঁকির শট। ওয়েস্ট ইন্ডিজের শিল্পী ক্রিকেটার আলভিন কালীচরণ ছিলেন সিদ্ধহস্ত। তেমনই কাটলেট। যখনই মনে হচ্ছে এ বার উপরের ব্যাটারটা খসে যাবে তখনই আহ্লাদিকে আলতো করে তুলে নিন। কবিরাজি তো আরও আদুরি। ঠিকঠাক ভাজতে না পারলে সব গেল।
কবিরাজিতে অন্যতম সেরা নাম দিলখুশা কেবিন। কলেজ স্ট্রিটে চার মাথার মোড়ে। ১০৬ বছরের ইতিহাসের ছাপ্পা নিয়ে আজও ঠিকঠাক ব্যাটিং করে চলেছে। পিসেমশাই চুনীলাল দে’র তৈরি এই কেবিন উৎপল বসুর হাতে আসে বছর কুড়ি আগে। সেই থেকে পুরোপুরি এর দায়িত্বে তিনি বা তাঁর স্ত্রী বৈশাখী বসু। সময়-সুযোগ পেলে কন্যা পিয়াসা বসুও।
কেবিনের বাইরে এখনও দেওয়ালের গায়ে সিমেন্ট-খোদাই দোকানের নাম, পুরনো কাঠ-পাথরের চেয়ার টেবিল, জানলায় টকটকে লাল পরদা, সেকেলে মেঝে, দেওয়ালে লাগানো তিন-তিনটে বেলজিয়াম গ্লাসের আয়না। শুধু পিছন দিকে ঢাকা কেবিনগুলো যা উধাও। ‘দিলখুশা’য় পা রাখলেই হুশ করে ‘নড়িতে নড়িতে চলা’ পুরনো কলকাতার ছবিটা জ্বলজ্বল করে ওঠে।
দিলখুশা-র আইটেম ২০টা। কবিরাজিকে ছেড়ে দিলে এ মহল্লায় হটলিস্টে মাটন চপ, ডেভিল, ব্রেস্ট কাটলেট। একসঙ্গে ৬৫ জনের জায়গা। তেমন দিনে কম করে পাঁচশো জন আসে দিলখুশার টানে। হঠাৎ হঠাৎ শু্যটিংও হয়। কবিদের আড্ডা, থিয়েটার পাড়ার লোকজনের আনাগোনা সব মিলিয়ে এ যেন মিনি কফিহাউস।
শোভাবাজারের অ্যালেন কিচেন। প্রায় একশো ছত্রিশ কি সাঁইত্রিশ বছরের পুরনো। শোনা যায়, এ দোকান আদতে ছিল স্কটিশ সাহেব মিস্টার অ্যালেনের। তার দোকানেই কর্মচারী ছিলেন জীবনকৃষ্ণ সাহা। অ্যালেন এ দেশ ছেড়ে চলে যাওয়ার সময় দোকানের স্বত্ব দিয়ে যান জীবনবাবুকে। তখন কলকাতায় এঁদের আউটলেট ছিল চারটি। শোভাবাজারেরটি ছাড়া বালিগঞ্জ, হাতিবাগান আর রবীন্দ্র সরণির ওপর আহিরীটোলার কাছে। এখন রয়েছে শুধু শোভাবাজারেরটাই।
সেন্ট্রাল অ্যাভিনিউয়ের একেবারে ওপর। গ্রে স্ট্রিট মোড় থেকে ধর্মতলার দিকে এগোলে বাঁ দিকে। ছোট্ট দোকান। লোহার গ্রিলওয়ালা দরজা। ঢুকেই রান্নাঘর। চড়বড়ে তেলের কড়াই থেকে মাতাল করা খুসবু শরীর অবশ করে দেওয়ার জন্য একটু বেশিই। তার মায়াডোর ছাড়িয়ে ভেতরে ঢুকলেই বসার জায়গা। সাদা পাথর আর কাঠের চৌকো চারটে টেবিল।
সাজগোজে ঝাঁ চকচকে মোটেই নয়, কিন্তু মাথা ঘুরিয়ে দেওয়া এদের চপ-কাটলেটের খাতির। ডাকাবুকো নেতা, আমলা, সাংবাদিক থেকে ব্যান্ডের গানওয়ালা কি সিরিয়ালের অভিনেতা দূর-দূর থেকে গাড়ি হাঁকিয়ে চলে আসেন অ্যালেনের ডেরায়। ইদানীং একটি বিদেশি চ্যানেলে এঁদের খবর বেরোনোর পর ভিড় করছেন ভিনদেশিরাও।
দোকানের অন্যতম কর্ণধার দীপক সাহা বললেন, “চার পুরুষের ব্যবসা। চাহিদা বেড়েছে বই কমেনি। মাঝে মাঝে সাপ্লাই দিতে পারা যায় না। এত চাপ।” হপ্তার প্রায় প্রত্যেক দিন খোলা। বিকেল সাড়ে চারটে থেকে সাড়ে ন’টা। প্রায় কুড়িটা আইটেম। যার মধ্যে প্রন আর ফিশ কাটলেটে ওঁদের স্পেশালিটি।
|
|
ছবি: সুব্রত কুমার মণ্ডল। |
বড়ুয়া অ্যান্ড দে ফাস্ট ফুড সেন্টার! কিছু বোঝা গেল? নাহ্! তা হলে বলি, মামার প্যান্থারাস, শ্যামবাজারে ভূপেন বসু অ্যাভিনিউয়ে। এ বার জলের মতো পরিষ্কার।
মামা ওরফে বিধুভূষণ বড়ুয়া ও ফটিক দে দোকান শুরু করেন, ৭৬ বছর আগে। এখানকার সেরা খাবার প্যান্থারাস। আদতে এটা মাংসের পুর ভর্তি প্যান কেক। আর সেটাই কিনা ৭৫ বছর ধরে এঁদের বক্সঅফিস। দোকানের মালিক রাজু বড়ুয়া জানালেন, “নতুন কোনও পদ যোগ করিনি। একই পদ, একই মশলা, এক স্বাদ।” তাও রসিকের মন পেতে হাফ সেকেন্ডও লাগে না!
কাটলেট কী করে ‘ফাউল’ হয়। ফাউল তো ফুটবলের শব্দ! হয় হয়। ছোট চিকেনের কাটলেট, তাই ফাউল কাটলেট। চাচার হোটেলের সেরা খানা ফাউল কাটলেট। সঙ্গে শিক কাবাব-চিকেন কবিরাজি-মাটন কাটলেট, তো আছেই। তবে লা জবাব ফাউল কাটলেট। বিধান সরণিতে বিবেকানন্দের বাড়ির উল্টো দিকে, ১৩৪ বছরের পুরনো চাচার হোটেল! প্রতি দিন সকাল ১১টা থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত চাচার হোটেল খোলা। যার ইভনিং শো প্রায় রোজই হাউসফুল।
চাচা ছেড়ে চলুন হাতিবাগান হয়ে শ্যামবাজার। পায়ে পায়ে ‘কেবিন’। পূর্বানি, মিতালি, ফেন্ডস্, দিলরুবা আজও বহাল তবিয়তে। একমাত্র বলরাম ঘোষ স্ট্রিটের কাছে বিধান সরণির ওপরে ‘জোনাকি’-ই এখন নামী একটি জুতো কোম্পানির শোরুম। ‘মালঞ্চ’ বন্ধ হলেও তার কর্মচারীদের তৈরি ‘কেয়ার অব ফুটপাথ’ সংস্করণটি তুখড়। কলকাতা উল্টে গেলেও সেখানে হর-সন্ধে থইথই ভিড়।
আরেকটু এগিয়ে গেলে পাবেন হাওড়া স্টেশনের ‘বড় ঘড়ির’ মতো পাঁচ মাথার মোড়ে বাঙালির বিখ্যাত ল্যান্ডমার্ক গোলবাড়ি।
বাড়িটা যদিও আদৌ গোল নয়। তবু বিখ্যাত গোলবাড়ি নামে, কালো কালো কষা মাংসের জন্য। পরোটা আর গোলবাড়ির কষা মাংস! যেন সলিল চৌধুরির সুরে লতার গান। তার সঙ্গে ওদের শো-কেশ উপচে পড়ে ফ্রাই আর কাটলেটের ঋষ্টপুষ্ট শরীরে। কোনও কথা হবে না, শুধু দেখা হবে গোলবাড়িতে, কতবার যে উচ্চারিত হয়েছে এই কথাগুলো।
বাঙালির পৈটিক গণ্ডগোলের অন্যতম উৎস নাকি তেলেভাজা? আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র রায় বলতেন, “বাঙালির স্টমাক নস্ট করে দিয়েছে তেলেভাজা।” আর কী আশ্চর্য, তাঁরই প্রিয় ছাত্র সত্যেন্দ্রনাথ বসু, তিনিও বিশিষ্ট বিজ্ঞানী, ছাত্রদের টাকা দিয়ে বলতেন তেলেভাজা আনতে!
মোহনবাগানের কাছে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড হারছে, ভাবা যায়? তেমনই রোল-চাউমিনের কাছে তেলেভাজা হারতে পারে?
সেটাও সেই উত্তর কলকাতাতেই। সুরুচি-মুখরুচি-অভিরুচি শিয়ালদহের কাছে উড়াল পুলের একটু আগে তিনটে দোকান। চপ-বেগুনি-ফুলুরি-পিঁয়াজি--- সকাল থেকে রাত, ভাজা হচ্ছে আর বিকোচ্ছে।
কিন্তু কৌলীন্য? সে কথা বললে পাল্লায় ভারী লক্ষ্মীনারায়ণ সাউ। হেদুয়ায়, সাবেক থিয়েটার হল রংমহলের উল্টো দিকে। জনশ্রুতি, নেতাজিও নাকি তেলেভাজা খেতে আসতেন এখানে।
১৯১৮ সাল থেকে চলেছে লক্ষ্মীনারায়ণের দোকান। বর্তমান মালিক কেষ্টকুমার সাউ (গুপ্ত) জানালেন, “আগে শুধু ফুলুরি-বেগুনি-পিঁয়াজি-পলতাপাতা ভাজা-কাঠিভাজা ছিল। এখন অনেক নতুন পদ যোগ হয়েছে। আমের চপ, পনির চপ, পনির কাটলেট ...।” এ ছাড়া ফুলুরি, আলুর চপ, সোয়াবিনের চপ, বেগুনি, পিঁয়াজি তো আছেই।
এবার প্রশ্ন উঠতেই পারে, ভাজাভুজির ‘মনোপলি’ কি তবে উত্তরে? না, না, সব উত্তর উত্তরে নেই। দক্ষিণে আছে। তবে ছবিটা এখানে যেন একটু যেন অন্য।
যতীন দাস পার্ক মেট্রো স্টেশনের কাছে নিজের ‘ক্যাফে’-তে সে কথাই বলছিলেন সিদ্ধেশ্বর মুখোপাধ্যায়, “একটু হলেও বাজারটা থমকেছে। দেখুন না, এখানকার স্যাঙ্গুভ্যালি আর নেই। অত দিনের ক্যামেলিয়া বন্ধ। তবে আমাদের চলে যাচ্ছে বলতে পারেন। কিন্তু আগের সেই সর্বক্ষণের উপচে পড়া ভিড়টা কিছুটা যেন কমেছে।” ১৯৩৭ সালে অনাথনাথ ও অমরনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়ের তৈরি এর মালিক এখন তিনিই।
শোনা গেল, এক কালে ‘ক্যাফে’-তে আসতেন উত্তমকুমার, সত্যজিৎ রায়। ক’দিন আগে কবিরাজি নিয়ে গেলেন বিপ্লব চট্টোপাধ্যায়। ফ্রাই-কবিরাজি-কাটলেটের এখানে প্রায় ৭টি আইটেম। মহানায়কের স্মৃতি জড়িয়ে আছে আরেকটি কেবিনেও। পূর্ণ সিনেমার উলটো দিকে রমেশ মিত্র রোডে ‘শোভা কাটলেট’। হোয়াট বেঙ্গল ইটস টু ডে, ইন্ডিয়া ইটস টুমরো!
স্যাঙ্গুভ্যালি। এস পি মুখার্জি রোড+মনোহরপুকুর রোড= স্যাঙ্গুভ্যালি। ১৯৪৫ সালে এইচ পি বড়ুয়া ১১টাকা দিয়ে জায়গাটা কিনে নেন। আর তার পর থেকেই শুরু হয় স্যাঙ্গু-জাদু। মোগলাই পরোটা বা চিকেন কাটলেট আর শঙ্খ নদীর উপত্যকার চায়ের বাগানের সুগন্ধি চা। ছবি বিশ্বাস-ভানু বন্দ্যোপাধ্যায়-অনিল চট্টোপাধ্যায়-নবদ্বীপ হালদার-রবিন গুহ থেকে ইস্টবেঙ্গেলে ইতিহাস হয়ে যাওয়া গোলকিপার থঙ্গরাজ এবং ধনরাজ-ভেঙ্কটেশ সবাই নিয়মিত যেতেন স্যাঙ্গুভ্যালিতে। এমনকী দীনেশচন্দ্র সেনও। যোগমায়া দেবী কলেজে পড়ার সময় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও!
শহর জুড়ে আছে এমন অসংখ্য বিখ্যাত চপ-কাটলেটের গন্ধে ম’ ম’ করা সাবেক খাবারের দোকান। পিৎজা-বার্গার চিনে-চাউমিন, কেউই ভাগ বসাতে পারেনি তার অমোঘ টানে। সে দিন যা ছিল, আজও তাই। অন্তত এই জায়গায় কলকাতা কিন্তু দিব্যি আছে সেই কলকাতাতেই। |
সহ প্রতিবেদক: দেবশঙ্কর মুখোপাধ্যায়। |
|
|
|
|
|