|
আপনার সাহায্যে... |
|
শীতের রোদে একটু হাঁটুন
ব্যথা কমাতে সাহায্য করে। পরামর্শ দিচ্ছেন
ডা. মৌলিমাধব ঘটক। লিখছেন রুমি গঙ্গোপাধ্যায়। |
|
|
প্র: কখনও হাল্কা ঠান্ডা, কখনও বেশি। যার যত ব্যথা সব যেন চাগাড় দিয়ে উঠছে। বয়স্কদের তো কথাই নেই। কী করব?
উ: শীতের উষ্ণ রোদে বসুন না।
প্র: রোদ পোহালেই ব্যথা কমবে?
উ: ঠান্ডায় শরীর জমে গিয়ে ব্যথা বাড়ে। রোদে আরাম পাবেন।
প্র: কিন্তু অনেকে বলেন রোদ সরাসরি না লাগাতে?
উ: সকালের রোদটা লাগাবেন। এই ধরুন সকাল আটটা-ন’টা অবধি। তবে ত্বকের কোনও সমস্যা থাকলে স্কিন স্পেশালিস্টের সঙ্গে পরামর্শ করে নেবেন।
প্র: কিন্তু সকালে ওঠাটাই তো মুশকিল।
উ: মানসিক ভাবে নিজেকে প্রস্তুত করলে আড়ষ্টতা কাটিয়ে সকালে ঠিকই উঠতে পারবেন। রোদে দাঁড়িয়েই দিনের ব্যায়ামটাও সেরে নিতে পারেন।
প্র: বুড়ো বয়সে কি আর ব্যায়াম পোষায়?
উ: সাধ্যের মধ্যে হাল্কা এক্সারসাইজ করবেন। পিটি’র মতো। যাতে হাত-পা-কোমরের জয়েন্টগুলোর নড়াচড়া হয়। নইলে মাঝারি বেগে হাঁটতেও পারেন। বয়স ও শরীর বুঝে দিনে ২ থেকে ৪ কিলোমিটার। রক্তচলাচল ভাল হবে। শীতও কাবু করতে পারবে না।
প্র: ট্রেডমিলে হাঁটলে চলবে?
উ: হ্যাঁ। তবে খুব জোরে হাঁটবেন না। ট্রেডমিলে হাঁটলেও আলাদা করে সকালের রোদটা লাগিয়ে নেবেন।
|
|
প্র: রোদটা জরুরি?
উ: হ্যাঁ। শীতের ভয়ে অনেক বয়স্ক মানুষ চাদর-কম্বল মুড়ি দিয়ে দরজা-জানলা বন্ধ করে ঘরে বসে থাকেন। আর রোদের মুখ দেখেন না। তার জন্যই তো শরীরে ভিটামিন-ডি’র ঘাটতি হয়ে যত সব ব্যথা-বেদনা চাড়া দিয়ে ওঠে।
প্র: কিন্তু হাঁটুর ব্যথা বাড়লে? তখন তো হাঁটতেও কষ্ট হবে।
উ: আগে থেকে হাঁটুতে বাতের ব্যথা থাকলে হাঁটবেন না। হাঁটু মুড়ে বসবেন না। বেশি সিঁড়ি ভাঙা চলবে না। এবড়ো খেবড়ো রাস্তায় সাবধানে চলবেন। বাইরে বেরোনোর সময় নি-ক্যাপ পরবেন। আর হাঁটুর পেশির শক্তি বাড়াবেন।
প্র: সেটা কী ভাবে?
উ: ডাক্তার বা অভিজ্ঞ ফিজিয়োথেরাপিস্টের পরামর্শ মতো পেশির কিছু এক্সারসাইজ করে যেতে হবে। তাতেই হবে।
প্র: সে তো বুঝলাম। কিন্তু হঠাৎ করে ব্যথা বাড়লে কী করব?
উ: খুব বেশি ব্যথা হলে বা জায়গাটা লাল হয়ে ফুলে গেলে ঠান্ডা সেঁক দেবেন। আর অল্প-স্বল্প ব্যথায় হালকা গরম সেঁক দিনে এক থেকে দুই বার দিতে পারেন। তবে বাতের পুরনো ব্যথা থাকলে শীত শুরুর আগেই ব্যবস্থা নিলে ভাল হয়। ফিজিয়োথেরাপি ও ওষুধ লাগতে পারে।
প্র: কোমরের ব্যথায়-ও কি গরম সেঁক দেব?
উ: হ্যাঁ। দিতে পারেন। কোমরে ব্যথা থাকলে সামনে ঝুঁকে ভারী জিনিস তুলবেন না। অনেক ক্ষণ কোমর বাঁকিয়ে কিছু করবেন না। খুব বেশি ব্যথা বাড়লে ডাক্তার দেখাতে হবে। কিছু কিছু বিষয়ে একটু সতর্ক থাকলে অনেক ব্যথাই কিন্তু এড়াতে পারেন।
প্র: যেমন?
উ: যেমন সেলুনে চুল কাটার পর অনেক সময় ভাল করে ঘাড় মাসাজ করে দেয়। সেটা থেকে সাবধান। ঘাড়ের হাড়ে ক্ষয়জনিত কোনও রোগ থাকলে উল্টে সমস্যা তৈরি হয়ে যাবে। বয়স্কদের কোমরে ক্ষয় জনিত সমস্যা থাকলে বাসের পেছনের সিটে না বসাই উচিত। বাসের ঝাঁকুনি থেকে বিপত্তি হতে পারে। অনেকেরই আঙুল মটকানোর বাতিক আছে। তা থেকেও আঙুলে ব্যথা হতে পারে। বালিশে হেলান দিয়ে একটানা টিভি দেখার অভ্যাস থেকেও ঘাড়ে ব্যথা হতে পারে।
প্র: ঘাড়ে ব্যথা হলে কী করব?
উ: কিডনির সমস্যা বা অ্যালার্জি না থাকলে হাল্কা ব্যথার ওষুধ সাময়িক ভাবে খেতে পারেন। ঘাড় ঝুঁকিয়ে দীর্ঘ ক্ষণ কোনও কাজ করবেন না।
প্র: আর আঙুলের ব্যথার জন্য?
উ: আঙুলে আগে থেকে বাতের ব্যথা থাকলে ঠান্ডা জলে আঙুল বেশি ক্ষণ ডুবিয়ে রাখবেন না। দিনে দুই বার ঈষদুষ্ণ জলে হাত ডুবিয়ে আঙুলের ব্যায়াম করতে হবে। তাতে না কমলে প্যারাসিটামল খেয়ে দেখতে পারেন।
প্র: ব্যথা এড়াতে আর কী করব?
উ: অনেকক্ষণ একই ভাবে বসে থাকবেন না। মাঝে মাঝে পজিশন চেঞ্জ করবেন। চেয়ারে বসলে বা গাড়িতে যাওয়ার সময় কোমরের পিছনে একটা কুশন অবশ্যই দেবেন। যাতে মেরুদণ্ড সোজা থাকে। কোনও কিছু নীচ থেকে তোলার সময় হুট করে সামনে ঝুঁকবেন না।
প্র: আর খাওয়াদাওয়া?
উ: কোলাইটিসের সমস্যা না থাকলে শীতের নানারকম সব্জি ঘুরিয়ে ফিরিয়ে প্রচুর পরিমাণে খাবেন। ভিটামিন, মিনারেল আর ক্যালসিয়ামে ভরপুর। তবে ডায়বেটিস, থাইরয়েড বা ইউরিক অ্যাসিডের সমস্যা থাকলে ডাক্তারের সঙ্গে কথা বলে নেবেন।
|
একটানা বসবেন না |
১) কবজি বা কনুইতে ব্যথা থাকলে ভারী জিনিস তুলবেন না।
২) ঘাড়ে ব্যথা হলে জোরে কিছু ছুড়বেন না বা টানবেন না।
৩) বসার সময় কোমরের পিছনে কুশন রাখবেন
৪) পায়ের পাতা সমান অর্থাৎ ফ্ল্যাট হিল হলে জুতো পরার সময় মিডিয়াল আর্চ ব্যবহার করবেন। এটি পায়ের মাঝখানের অংশকে উঁচু করে রাখবে।
৫) শুধু স্নান নয়, সারা দিনই ঈষদুষ্ণ জলে কাজ সারুন।
৬) অনেক ক্ষণ একই ভাবে বসে থাকবেন না। মাঝে মাঝে পজিশন চেঞ্জ করুন। |
|
যোগাযোগ:
৯০৫১৬০৩৪৩১ |
|