শনিবারের নিবন্ধ ২...
সব চরিত্র কাল্পনিক নয়
ইমেলা এসে পড়লে চার বান্ধবী, লোরেটোর বসুধা, ব্রেবোর্নের কুসুমকলি আর অনামিকা, গোখেলের দয়ানীর কথাবার্তায় বার কয়েক ঠিক এসে পড়ে বইমেলা-প্রসঙ্গ।
এক কালে এই চার বান্ধবী একসঙ্গে একটা স্টুডেন্টস হোস্টেলে থাকত। কুড়ি বছর পর এখন বসুধা আর অনামিকা বেঙ্গালুরু। কুসুমকলি মুম্বইতে আর কলকাতায় থাকে দয়ানী।
হোয়াটসঅ্যাপ হয়ে এদের নিজেদের মধ্যে যোগাযোগটা এখন অনেক সহজ। গ্রুপ অ্যাকাউন্ট আছে। সারা দিনে কিছু না কিছু কথাবার্তা চলছে সেই গ্রুপের।
দয়ানী যাকে বলে অনন্ত আড্ডা। এত বছরের বন্ধু সব, মন খুলে যে যা খুশি বলছে। কারও কিছু বলার নেই। পাকেচক্রে দয়ানী আজ লেখিকা, অনামিকা আর বসুধা হাউজ ওয়াইফ আর কুসুমকলি একটা বিজ্ঞাপনের এজেন্সিতে ক্রিয়েটিভ ডিরেক্টর।
সকাল থেকে সংসার নিয়ে ব্যস্ততার পর লাঞ্চ টাইমের পরে বসুধা পিং করল ফরেভার ফ্রেন্ডস্-এ। ওদের গ্রুপের নাম সেটাই। সেখানে বসুধা হল বসু, অনামিকা অন্নি, কুসুমকলি হল কলি আর দয়ানী হল দয়া।
বসুধা লিখল: কী রে তোদের আজ সব বোবায় ধরল নাকি? এত চুপচাপ?
প্রথম সাড়া দিল দয়া: হুমমম, বল, শুনছি, লিখছিলাম। এখন কফি করছি একটু!
অমনি কোথা থেকে উদয় হল অন্নি: সে কি, তুই এখন বাড়িতে? বইমেলা যাবি না? মেলা তো শেষ হতে চলল! লেখকের এখন মেলার মাঠে দাঁড়িয়ে অটোগ্রাফ বিলোনোর কথা!
এ বার এন্ট্রি নিল কলি: ইস! কী যে মন খারাপ লাগে, এই সময় কলকাতায় না থাকতে পারলে! বসু: হ্যাঁ, ব্যাঙ্গালোরে কোনও বুকফেয়ার হয় না। বইমেলা কী আমার মেয়েটা তো জানেই না।
কলি: আমার তো কালই একবার কলকাতা যাওয়ার কথা কাজে, যেতে পারলে দয়া তুই আর আমি একসঙ্গে মেলায় যাব?
বসু: তুই কলকাতা যাবি কলি? আমি জেলাস হয়ে যাচ্ছি। সত্যি সত্যি ভীষণ মিস করি বুকফেয়ারটা। সেই যখন ন্যান্সি ডিউ, হার্ডি বয়েজ, সিক্রেট সেভেন পড়তাম, তখন থেকেই বইমেলা যেতাম মা-বাবার হাত ধরে।
অন্নি: আমারও কত ইমপর্ট্যান্ট স্মৃতি রয়েছে বইমেলাকে ঘিরে। বাবার হাত ধরে স্টলে স্টলে ঘোরা, নতুন বইয়ের গন্ধ শোঁকা, ক্যাটালগ কালেক্ট করা। একটু হেঁটেই পায়ে ব্যথা করছে বলে বাবাকে ইন্ডিয়ান কফি হাউজের দিকে টেনে নিয়ে গিয়ে কাটলেট খাওয়ার বায়না। মাঠে তখন ভেসে বেড়াত হেমন্তর গলায় কী সব গান ...‘রানার রানার’, ‘কোনও এক গাঁয়ের বধূ’, ‘পাল্কি চলে রে’... সব সলিল চৌধুরীর সুর, তার পর ‘ঢেউ উঠছে কারা টুটছে’...নয়তো বেগম আখতার...‘চুপি চুপি চলে না গিয়ে’। ‘পিয়া ভোলো অভিমান, মধুরাতি বয়ে যায়’...
অন্নি: এখন তো সব ব্যান্ডের গান বাজে শুনেছি...
বসু: এই বেনফিশ-এর ফিশ বাটার ফ্রাইটা ভুলে মেরে দিলি? যেটা প্রায়ই বাঙালিরা বলত ফিশ বাটারফ্লাই! একটা বিয়েবাড়ির মেনু কার্ডেও লেখা ছিল দেখেছিলাম।
কলি: তোদের মনে আছে একবার আমরা একসঙ্গে বইমেলা গেছিলাম। তখন আমরা সব তাঁতের শাড়ি পরতাম। বড়জোর সালোয়ার কামিজ, বসু একটুআধটু প্যান্টস পরতিস অবশ্য। তো আমি একটা চওড়া সবুজ পাড় শাড়ি পরে গেছিলাম। সে দিন শক্তি চট্টোপাধ্যায় ইউবিআই অডিটোরিয়ামে কবিতা পড়েছিলেন। আমরা ওঁর সঙ্গে আলাপ করব কী করব না ভেবে ঠেলাঠেলি করছি নিজেদের, হঠাৎ উনি আমার দিকে হাত তুলে ডেকে বললেন, “এই যে মামণি, তুমি কি স্কুল পালিয়ে বইমেলা এসেছ নাকি?”
দয়া: ও বাবা সে আর মনে নেই? সে বারই তো আমাদের সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের সঙ্গে দেখা।
বসু: মিথ্যে কথা বলিস না দয়া, তোর সঙ্গে কোথায় দেখা হল? তুই তো সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়কে দেখে কেমন একটা হয়ে গেলি, অমনি মাঠের মধ্যে বসে ‘আমি সেই নীরা’ বলে একটা কবিতা লিখে ফেলে আমায় বলতে লাগলি, ওঁকে দিয়ে আসতে। আমি লোরেটোর মেয়ে হলে কী হবে, বাংলা কবিতার খুব ভক্ত ছিলাম। শক্তি, সুনীল, পূর্ণেন্দু, বুদ্ধদেব সবই পড়েছি প্রচুর। এখনও পড়ি। তো সোজা গিয়ে হাজির হলাম ওঁর সামনে। বললাম, সুনীল, আপনাকে আমার বান্ধবী একটা কবিতা লিখে পাঠিয়েছে। উনি কিন্তু আমার স্পর্ধা দেখে, ‘সুনীল’ বলে ডাকা শুনে একটুও রাগ করলেন না। কবিতাটা পড়লেন মন দিয়ে। তার পর পকেটে ভরে দু’বার পকেট চাপড়ালেন। বললেন, “ইস, নীরা নিজেই এল না কেন? বান্ধবীকে পাঠাল? তা হলে তো নীরার সঙ্গে বসে বইমেলায় এক কাপ কফি খাওয়া যেত!”
ছবি: সুব্রত কুমার মণ্ডল।
দয়া: প্রায় ষোলো বছর পর ওই ইউবিআই অডিটোরিয়ামে একটা সেমিনারে আমি আর সুনীলদা বক্তা, বসলাম পাশাপাশি...খুব অদ্ভুত লেগেছিল সে দিন। তার পর তো কত বার এ রকম হয়েছে।
বসু: উফ্ পারি না। ছবি তুলেছিল কেউ?
দয়া: তুলেছিল। আমার কাছে নেই।
অন্নি: এখন তো তোরও কত পাঠক, কত ভক্ত, মেলায় ঢুকলে কত নাটকীয় পরিস্থিতির তুই কেন্দ্রবিন্দু!
দয়া: নাটকীয় পরিস্থিতি তো হত তসলিমা নাসরিন মেলায় এলে। এক দল পুলিশ গার্ড দিয়ে নিয়ে আসত। আর কাতারে কাতারে মানুষ তসলিমাকে দেখতে চাইছে। তসলিমা শিশুর মতো চোখে চেনা মুখদের খুঁজছে। পেলেই অনর্গল কথা বলবে হাতে হাত জড়িয়ে।
কলি: এই দয়া, তুই জানিস তো আমার আর অভীকের প্রেমটা কিন্তু প্রকৃতপক্ষে শুরু হল বইমেলার মাঠে। যে বার আগুন লাগল!
দয়া: তাই? বল বল শুনি।
কলি: সে দিন চারটে নাগাদ অভীকের দাঁড়ানোর কথা আনন্দ-র সামনে। তখনও আমরা জাস্ট বন্ধু। আমি পাড়ার একটা বাচ্চা ছেলে দীপুকে নিয়ে অনেক আগেই মেলায় চলে গেছি। মিত্র ঘোষ-এ ঢুকে মনের আনন্দে বই ঘাঁটছি। কী বই সেটাও এখনও মনে আছে। বাংলা আদিরসাত্মক গল্প। হঠাৎ দীপু ছুটে এসে বলল কলিদি, কলিদি বইমেলায় আগুন লেগেছে। বাচ্চা ছেলে কী বলছে না বলছে ভেবে প্রথমে পাত্তা দিইনি, তার পর শুনি অ্যানাউন্সমেন্ট হচ্ছে। বাইরে বেরিয়ে দেখি কাতারে কাতারে লোক ছুটছে, আর ধোঁয়ায় ছেয়ে গেছে চারদিক। পুলিশ সবাইকে বার করে দিচ্ছে মেলা থেকে। আমি তো কিছুতেই যাব না। চারটে বেজে গেছে। অভীকও এসে গেছে মেলায়। আমি দীপুর হাত ধরে কী ভাবে যেন পৌঁছে গেলাম আনন্দ-র সামনে। দেখি অভীক পুলিশকে বলছে ‘আমি স্টলের লোক, আমায় থাকতে দিন।’ আমায় দেখে বলল, তুই দীপুকে নিয়ে চলে যা। আমায় থাকতে হবে। চোখের সামনে বই পুড়ে যাচ্ছে। আমায় অন্তত কিছু বই সেভ করতে হবে। বলে ঝাঁপিয়ে পড়ল বই বাঁচাতে। এ দিকে তখন আমাদের চোখের সামনে বই লুঠ হচ্ছে। অভীক বই-পাগল জানতাম, কিন্তু সে দিন এক অন্য অভীককে দেখলাম। আগুনের গ্রাস থেকে বই বের করে নিয়ে আসছে। সেই দেখেই আমি প্রেমে পড়ে গেলাম অভীকের!
দয়া: তার মানে তোদের প্রেমের কুড়ি বছর হল এ বার কলি?
বসু: উই নিড টু সেলিব্রেট দিজ।
কলি: হোয়াটসঅ্যাপেই সেলিব্রেট করবি নাকি ঢঙীর দল?
দয়া: সত্যি এক সময় বইমেলাকে কেন্দ্র করে কী আনন্দই না করেছি। তখন নতুন নতুন কবির সঙ্গে আলাপ হত মেলার মাঠে। আড্ডা দিতে দিতে এমন অবস্থা... আড্ডা আর শেষ হয় না। মেলার পর সোজা অলিপাবে বা ট্রিঙ্কাসে কিংবা আদার রুমে। একবার মেলার মধ্যে আমার চটি ছিঁড়ে গেল। তাই নিয়েই ঘুরতে লাগলাম মেলায়। আনন্দ-র সামনে বিরাট আড্ডা বসত। কত বিখ্যাত লেখকরা আসতেন। চা-সিঙাড়া খাওয়া হত। লোকজন হাঁ করে তাকিয়ে থাকত একটু দূর থেকে। একটা ভীষণ গোপন কথা শেয়ার করব তোদের সঙ্গে কলি? জীবনের প্রথম অটোগ্রাফটা দিয়েছিলাম মেলার মাঠে। আর তাও নিজের নামের বানান নিজেই ভুল লিখেছিলাম। কারণ তার আগে জীবনে দু’এক বার ছাড়া কখনও বাংলায় নাম সই করেছি নাকি?
অন্নি: মরণদশা আর কাকে বলে! যাক এখন তো তুই এক্সপার্ট হয়ে গেছিস বল? গার্লস, আমাকে এবার কাটতে হবে। মেয়েকে স্কুল থেকে আনতে চললাম। তোরা চালিয়ে যা! আমি পরে ধরে নেব। বাই!
কলি: তা হলে কখন যাবেন বুক ফেয়ারে লেখিকা? পারলে ক’টা ছবি তুলে হোয়াটসঅ্যাপে দিস। দেখেও শান্তি। আনন্দ-র স্টলটা কেমন সাজিয়েছে দেখব। এখন আর দেশ-এর প্যাভিলিয়নটা হয় না রে দয়া? কী দারুণ সব ডিসকাশন হত। চমৎকার সব মানুষরা আসত। লেখক, কবি, খেলোয়াড়, ফিল্ম স্টার, পেন্টার...জমজমাট ব্যাপার!
দয়া: আসলে লেখক হিসাবে নয়, পাঠক হিয়াবে বইমেলায় যেতে ইচ্ছে করে আমার। কিন্তু গিয়ে যেই দাঁড়াই অমনি সব উল্টোপাল্টা হয়ে যায়, ভয় করে। এত এত বই, মানে এত এত লেখা। সবই তো বলা হয়ে গেছে, লেখা হয়ে গেছে, আমি আর নতুন করে কীই বা বলব, লিখব, এই ভেবেই তখন আমার মাথা খারাপ হয়। আনন্দটা বিভীষিকা হয়ে যায়। সব লেখকেরই এটা হয় হয়তো, কেউ স্বীকার করে না।
সে দিনের হোয়াটসঅ্যাপ কথোপকথনের শেষে দয়া লেখে: আর এ রকম মনে হয় বলেই কিন্তু শেষ অবধি বইমেলাকে এড়িয়ে যেতে চেয়েও ঠিক সেই প্রতি বছরই গিয়ে দাঁড়াই বইমেলার মাঠে। কারণ আমার তো পাঠক হয়ে ওঠা হতই না, যদি না কেউ কেউ লেখক হয়ে ওঠার, লেখা সৃষ্টি করার যন্ত্রণা সহ্য করত আমার সত্তাকে বিকশিত করতে, প্রশমিত করতে! সুন্দর সুন্দর সব বই নেড়ে ঘেঁটে দেখলে কি আর বোঝা যায় লেখক আসলে সব সময় ভীষণ একা, লেখা আসলে একটা ভীষণ লোনলি প্রফেশন!

কথামেলা
ছবিটা এখনও আমার কাছে রাখা আছে
সালটা ঠিক মনে করতে পারছি না। বোধহয় ’৮৯ বা ’৯০ হবে। তখন আমি ফিল্মে কেরিয়ার সবে শুরু করেছি। বইমেলায় গিয়ে কিছুটা ঝামেলায়
রূপা গঙ্গোপাধ্যায়
পড়ে গিয়েছিলাম। হঠাৎ দেখলাম চারপাশে বেশ কিছু লোক। তাদের মধ্যে আমি প্রায় আটকা। দেখতে না দেখতে, শুরু হল ধাক্কাধাক্কি, ঠেলাঠেলি। সেখান থেকে কোনওক্রমে পুলিশ আমাকে বের করে নিয়ে একটা বুকস্টলে ঢুকিয়ে দেয়। খুব অস্বস্তিতে পড়ে গিয়েছিলাম। এর পর প্রায় সাত-আট বছর আর যাইনি। কিন্তু মনটা তো যাই-যাই করতই। পরে যখন আবার গেলাম মনে আছে, ভূতের মতো সেজেছিলাম। যাতে কেউ চিনতে না পারে। ইদানীং যাই আমার পাবলিশার্স কাম প্রেসওনার এক বন্ধু আর তার স্ত্রী-র সঙ্গে। ওরা খুব পড়ুয়া। প্রচুর ঘুরি। প্রচণ্ড বই কিনি। একদম প্ল্যান করে কিনি। গত বছর যেমন নীহাররঞ্জন গুপ্তর ‘কিরীটি অমনিবাস’-এর পুরো সিরিজটা কিনেছিলাম। অভিধানও কিনেছি অনেকগুলো। বেঙ্গলি টু বেঙ্গলি, ইংলিশ টু বেঙ্গলি, এমনকী সমার্থক শব্দকোষও। এটা আমার ছোট বয়সের ফ্যাসিনেশন বলতে পারেন। কিন্তু অভিধানগুলো আমায় বেশ হতাশই করেছে। এত ভুল, এত ভুল। ‘বাঁটুল দি গ্রেট’, ‘হাঁদাভোঁদা’-ও কিনেছি। তার সঙ্গে সুবোধ ঘোষের গল্পও। সব পড়া হয় না। মাঝে মাঝে কেনাটা ‘রিপিট’ও হয়ে যায়। তবু এই কেনাটা নেশার মতো। কয়েক বছর আগে মেলায় ঘুরতে ঘুরতে অদ্ভুত একটা ‘গিফ্ট’ পেয়েছিলাম একদম অপরিচিত একজন শিল্পীর কাছ থেকে। হঠাৎ দেখি ছেলেটি এগিয়ে এসে আমায় একটা কাগজ বাড়িয়ে দিয়ে বলল, ‘এই নিন, আপনার একটা পোর্ট্রেট করেছি।’ ঘটনাটা খুব মনে পড়ে। ছবিটা এখনও আমার কাছে রাখা আছে।

আনন্দবাজার ছ’ইঞ্চি সাইজের, কী যে ইন্টারেস্টিং
শ্রীকান্ত আচার্য
প্রথম বার যখন গিয়েছিলাম তখন আমি যোধপুর পার্ক বয়েজে ক্লাস টেন। এর পর যখন সেন্ট জেভিয়ার্সে পড়তাম, তখন তো ময়দানে বইমেলা। প্রায় দিনই যেতাম। পায়ে হেঁটে। এক দল বন্ধু মিলে। কিন্তু বইটই কেনা তেমন হত না। তখন পয়সা কই যে, বই কিনব! পলিটিকাল সায়েন্স পড়তাম। তো, সাবজেক্টের কোনও বই না পেলে তখন বইমেলাতে খোঁজ করতাম, এই যা। বরাবরই আমার সত্যজিৎ রায়ের প্রতি একটা দুর্বলতা। ফলে ‘আনন্দ’-তে যেতামই যেতাম। যদি কোনও নতুন কালেকশন বেরোয়, অন্তত চোখের দেখা দেখব। তখন প্রচুর রাশিয়ান বই বিনে পয়সায় পাওয়া যেত। আর মনে আছে, আনন্দবাজার পত্রিকার দৈনিক সংস্করণ ছ’ইঞ্চি সাইজের। ভীষণ ইন্টারেস্টিং দেখতে। এ রকম প্রায় ৮-১০টা আমার কাছে ছিল। বাড়ি বদল করতে করতে সেগুলো যে কোথায় গেল! বইমেলার আরেকটা ভাল লাগার জায়গা আমার কাছে ‘লাইভ পারফরমেন্স’। তবে সেটা গানের নয়, আঁকার। সব জায়গায় গানটাকে কাঁঠালি কলার মতো গুঁজে দেওয়াটা আমার ভাল লাগে না। এ যে কী আমাদের স্বভাব! সব কিছুতে একটা গান চাই। যেন পৃথিবীতে আর কোনও শিল্প নেই। বইমেলায় যাঁরা আঁকতে বসেন, তাঁদের অনেকেই বেশ গুণী শিল্পী। আর আমি যেহেতু এককালে একটুআধটু আঁকতাম, ফলে এ দিকে আমার ইন্টারেস্টটা খুব সহজাত। প্রায়ই দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখতাম ওঁদের কাজ। তার আরেকটা বড় কারণ বোধহয়, রঙিন পেন্টিং বা স্কেচের চেয়ে কালিকলমের সাদা-কালো ছবি আমার বেশি ভাল লাগে। এই ভাল লাগাগুলো ছাড়া বইমেলার একটা বিরক্তিকর জায়গাও আমার ছিল। মাইকের গান। নয় হেমন্ত, নয় বেগম আখতার। ওঁরা প্রণম্য শিল্পী, কিংবদন্তি নিঃসন্দেহে। ওঁদের প্রতি শ্রদ্ধা কারও চেয়ে আমার কম নয়। কিন্তু কেবলই ভাবতাম, দুনিয়ায় কি আর কোনও গান নেই? এটা যে কার ঊর্বর মস্তিষ্কের ফসল ছিল, কে জানে! ইদানীং আর যাওয়া হয় না বইমেলায়। এমনিতে সেলস্-এর চাকরির জন্য যখন থেকে উত্তরবঙ্গে থাকতাম, তখন থেকেই যাওয়াটা হত না। আজকাল যেতে যে ভাল লাগে না বা ইচ্ছে করে না, তা নয়। কিন্তু ওই ভিড় আর ধুলোটা আমার খুব আতঙ্কের। কী করি...।

অনুষ্ঠানটা খুব ‘স্পিরিটেড’ ছিল
বাণী বসু
একেবারে ’৭৬ সাল থেকে যাচ্ছি। যখন হাওড়ায় থাকতাম, গার্লস কলেজে পড়াতাম, তখন তো প্রায়ই ছুটির পর চলে আসতাম। এ বছর এখনও যাওয়া হয়ে ওঠেনি। তবে বই তেমন একটা কিনি না। বড়জোর ‘উইন্ডো শপিং’টা করি। বই কেনার জন্য আমার কলেজ স্ট্রিটই ভাল। বই ছাড়া আমার অবশ্য বইমেলার আর একটা আকর্ষণের জায়গা, মাঠে বসে যাঁরা আঁকেন, তাঁরা। ইদানীং যাওয়াটা হয় বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই কিছুটা অনুরোধ আসে, তাই। কিংবা অনুষ্ঠান বা সেমিনার ইত্যাদির কারণে। যে বার জাক দেরিদা এসেছিলেন, ওঁর বক্তৃতাটা খুব ভাল লেগেছিল। আরেক বারের অভিজ্ঞতা সম্পূর্ণ অন্য রকম। যে বার বইমেলা পুড়ে গেল। ভস্মীভূত হওয়ার পরেও আবার করে শুরু হল মেলা। ইউবিআই অডিটোরিয়ামে একটা অনুষ্ঠান হয়েছিল সে দিন। সুনীলদা তো ছিলেনই, ‘বুধসন্ধ্যা’র অনেকে ছিলেন। যাঁরা তাঁর বাইরে, তাঁরাও। খুব ‘স্পিরিটেড’ একটা অনুষ্ঠান হয়েছিল। খুব ভাল লেগেছিল।

সাক্ষাৎকারভিত্তিক লেখা।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.