লোকাল ট্রেন বা প্যাসেঞ্জারে সাধারণ কামরায় সব্জির চলাচল নিত্যদিনের ঘটনা। এ বার চালু হল ‘সব্জিবগি’।
কলকাতার বাজারে রেজিনগরের ছানার ব্যবসা বিস্তারের তাগিদে বছরখানেক আগে শিয়ালদহ-লালগোলা শাখার ট্রেনে বিশেষ কামরা জুড়ে দিয়েছিল রেল। পরে পলাশির নলেন গুড় কলকাতার বাজারে নিয়ে যাওয়ার জন্যও অন্য একটি ট্রেনে একটি বিশেষ কামরা জোড়া হয়। শুক্রবার সেই তালিকায় যুক্ত হল ‘সব্জিবগি’। তবে সেটা শিয়ালদহ পর্যন্ত নয়। সব্জিবগি নিয়ে ডিএমইউ ট্রেন দু’টি চলছে লালগোলা থেকে রানাঘাট। লালগোলা থেকে ট্রেন দু’টি ছাড়বে যথাক্রমে সকাল সেড়ে ১১টা এবং বিকাল পৌনে ৬টায়। মুর্শিদাবাদের বড়, মাঝারি ও ক্ষুদ্র সব্জি ব্যবসায়ীরা তাতেই খুশি।
এ দিন কাশিমবাজার স্টেশনে এক অনুষ্ঠানে সব্জিবগি চালুর কথা ঘোষণা করে রেল প্রতিমন্ত্রী অধীর চৌধুরী বলেন, “এতে মুর্শিদাবাদ ও নদিয়ার সব্জি ও ফল চাষিরা এবং গৃহস্থেরাও দারুণ উপকৃত হবেন। পৃথক বগিতে সব্জি পরিবহণের ফলে সাধারণ যাত্রীদের সঙ্গে ব্যবসায়ীদেরও বিবাদ থেকে রেহাই মিলবে।” শিয়ালদহ বিভাগের সহকারী ডিআরএম এ কে গুপ্তও তাঁর সঙ্গে সহমত।
মুর্শিদাবাদে প্রচুর আলু, কপি, টমেটো, সিম, বেগুন, পটল, ঢেঁড়শ, বরবটি, লাউ, কুমড়ো ও কচু চাষ হয়। হয় আম, লিচু, কলা এবং পেয়ারাও। পরিবহণের সমস্যা থাকায় স্থানীয় বাজার ছাড়িয়ে সে সব দূরে কোথাও নিয়ে যাওয়া যায় না। সংরক্ষণ করার মতো হিমঘরও নেই। বহরমপুর শহরের সব্জির আড়তদার সেলিম শেখ বলেন, “ছোট ব্যবসায়ীদের পক্ষে দূরে সব্জি নিয়ে যাওয়া সম্ভব হয় না। বাজারের অভাবে অনেক সময়ে মাঠের সব্জি মাঠেই পচে অথবা গবাদি পশুর খাদ্য হয়। সব্জির জন্য ট্রেনে পৃথক বগি বরাদ্দ করা ভাল উদ্যোগ।”
উদ্যানপালন বিভাগের জেলা আধিকারিক গৌতম রায়ের মতে, “সড়ক পরিবহণে ঝাঁকুনির কারণেও সব্জি ও ফল নষ্ট হয়। রেলে সেটা হবে না। সময় কম লাগবে। খরচও কম। তার ফলে সব্জি ও ফলের দামও কম পড়বে।” জেলা চেম্বার অব কমার্সের যুগ্ম সম্পাদক স্বপন ভট্টাচার্য বলেন, “শিয়ালদহ পর্যন্ত সব্জিবগি চললে আরও উপকার হত।”
বেগুন, শিম, ফুলকপি, বাঁধাকপি-সহ সব্জি চাষ হয় বেলডাঙা, হরিহরপাড়া ও বহরমপুর-সহ বেশ কয়েকটি এলাকায়। বেলডাঙার সব্জি চাষি নৃপেন মণ্ডল বলেন, “কৃষ্ণনগর, রানাঘাটে আমাদের এলাকার সব্জির চাহিদা বাড়লে দু’ পয়সার মুখ দেখব।” জিয়াগঞ্জের আমাইপাড়া লঙ্কা ব্যবসার অন্যতম কেন্দ্র। সেখানকার লঙ্কা ব্যবসায়ী বীরেন দত্ত বলেন, “কাঁচা লঙ্কা সহজে পচে। ট্রেনে কম সময় লাগায় কাঁচা লঙ্কা ব্যবসায়ীরা উপকৃত হবেন।” কাশিমবাজার স্টেশনে এ দিন কম্পিউটার চালিত যাত্রী সংরক্ষণ কেন্দ্রও উদ্বোধন করেন অধীর। |