সরস্বতী পুজোর বিসর্জন ঘিরে সংঘর্ষ, তাণ্ডব রাতের কৃষ্ণনগরে
বিসর্জনের চেনা ‘ঐতিহ্য’ বজায় রইল এ বারও। পিছনে সরস্বতীর সুবিশাল প্রতিমা। সামনে কিছু মদ্যপ যুবকদের লম্পঝম্প। পুজো কর্তাদের একাংশের রাঙা চোখ, নিজেদের মধ্যে কথা কাটাকাটি, জামার আস্তিন গোটানো, মারধর, তাণ্ডব। শেষতক পুলিশের হস্তক্ষেপে সমাধান হয় সমস্যার। জগদ্ধাত্রী, কালী কিংবা দুর্গাপুজো শেষে বিসর্জনের দিন এমন ঘটনা বিস্তর দেখেছেন কৃষ্ণনগরের মানুষ। বৃহস্পতিবার সরস্বতী পুজোর বিসর্জনে সেই একই ঘটনার সাক্ষী রইলেন কৃষ্ণনগরের মানুষ।
এ দিন সন্ধ্যের পর থেকে শহরের বিভিন্ন এলাকার বারোয়ারি ও ক্লাবের প্রতিমা নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল জলঙ্গির কদমতলা ঘাটের দিকে। কিন্তু রাত বাড়তেই বেশ কিছু শোভাযাত্রার রাশ ক্রমশ মদ্যপ যুবকদের নিয়ন্ত্রণে চলে যায় বলে অভিযোগ। রাজবাড়ি থেকে পোস্ট অফিস মোড় হয়ে বিসর্জনের ঘাট পর্যন্ত বিভিন্ন জায়গায় একাধিক পুজো কমিটিগুলির মধ্যে গণ্ডগোল শুরু হয়। যা সামাল দিতে পুলিশকে লাঠি চালাতে হয়েছে বলে অভিযোগ। যদিও পুলিশ লাঠি চালানোর ঘটনা অস্বীকার করেছে। গোলমাল রুখতে গিয়ে ইটের আঘাতে জখম হয়েছেন জনা কয়েক পুলিশকর্মী। বাদ যাননি রাস্তার দু’ধারে শোভাযাত্রা দেখতে দাঁড়িয়ে থাকা সাধারণ মানুষও। জেলা পুলিশের ডিএসপি (সদর) দিব্যজ্যোতি দাস বলেন, “বিসর্জনের শোভাযাত্রায় বিচ্ছিন্নভাবে কয়েকটি গণ্ডগোলের ঘটনা ঘটেছে। পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থতি নিয়ন্ত্রণে আনে। ওই ঘটনায় নয় জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।”
ভাসানের পথে। কৃষ্ণনগরে তোলা নিজস্ব চিত্র।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, এ ভি স্কুলের মোড়ে রাজবাড়ি থেকে বিসর্জন ঘাটের দিকে যাওয়া দু’টি ক্লাবের সদস্যদের মধ্যে কারা আগে যাবে তাই নিয়েই গণ্ডগোলের সূত্রপাত। বাঁশ, লাঠি নিয়ে তারা মারপিট শুরু করে। এরপরেই শুরু হয় ইটবৃষ্টি। ঘটনাস্থলে পুলিশ গেলে তাঁদের দিকেও ইট ছোড়া হয় বলে অভিযোগ। রাত প্রায় দু’টো নাগাদ চাষাপাড়া থেকে চ্যালেঞ্জ মোড় পর্যন্ত ব্যাপক গণ্ডগোল শুরু হয়। এই গণ্ডগোল থেকে রেহাই পাননি দেবী সরস্বতীও। প্রতিমাও ভাঙচুর করা হয় বলে জানিয়েছেন প্রত্যক্ষদর্শীরা।
তবে প্রতিমা বিসর্জনের শোভাযাত্রায় কৃষ্ণনগরে গণ্ডগোল এই প্রথম নয়। জগদ্ধাত্রী কিংবা কালী পুজোতে বিসর্জনের দিন গোলমাল এ শহরের চেনা ঘটনা। এ বারের কালী পুজোর বিসর্জনে গণ্ডগোলের জেরে এলাকার এক যুবককে পিটিয়ে খুন করা হয় বলে অভিযোগ উঠেছিল। তবে সরস্বতী পুজোর বিসর্জনে এর আগেও ছোটখাটো গোলমাল হলেও সাম্প্রতিক কালে এমন তাণ্ডব এই প্রথম দেখলেন কৃষ্ণনাগরিকরা। সরস্বতী পুজোর বিসর্জনে এই তাণ্ডবে রীতিমত উদ্বিগ্ন শহরের নাগরিক সমাজ। কৃষ্ণনগরের ডিএলরায় কলেজের অধ্যক্ষ সাহাজাহান আলি বলেন, “সরস্বতী পুজোর বিসর্জনকে ঘিরে যা ঘটল তা মোটেও কাম্য নয়। এমন ঘটনা সমাজের অবক্ষয়ের ইঙ্গিত বহন করছে।” কৃষ্ণনগরের বাসিন্দা তথা জেলার চাইল্ড ওয়েলফেয়ার কমিটির চেয়ারপার্সন রিনা মুখোপাধ্যায় বলেন, “বিসর্জনের সময় মদ্যপ যুবকদের যে তাণ্ডব দেখলাম তাতে আমরা উদ্বিগ্ন। বিসর্জনের নামে যা হচ্ছে তা অপসংস্কৃতি ছাড়া কিছু নয়।” কৃষ্ণনগর পুরসভার পুরপ্রধান তৃণমূলের অসীম সাহাও বলছেন, “যেভাবে সরস্বতী পুজোর বিসর্জন হল তা মেনে নেওয়া সত্যিই কঠিন। এমন ঘটনা যাতে আর না ঘটে তার জন্য প্রশাসনকে আরও সক্রিয় থাকতে হবে।”

ঘট বিসর্জন
নাকাশিপাড়ার ধর্মদায় শনিবার সরস্বতী পুজোর ঘট বিসর্জন। শুক্রবার থেকেই এ নিয়ে পুজো উদ্যোক্তা ও এলাকার মানুষের মধ্যে উদ্দীপনা তৈরি হয়েছে।
বিসর্জনে বিপত্তি
• বিসর্জন ঘিরে গোলমাল শহরের বেশ কিছু এলাকায়।
• মদ্যপ যুবকদের বিরুদ্ধে তাণ্ডবের অভিযোগ।
• ইটের আঘাতে জখম পুলিশকর্মী, সাধারণ মানুষ।
• এই ঘটনায় পুলিশ মোট ৯ জনকে গ্রেফতার করেছে।
• কালীপুজোর বিসর্জনেও এক যুবক খুন হয়েছিলেন বলে অভিযোগ।
• বিসর্জন ঘিরে উদ্বিগ্ন শহরের মানুষ।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.