পুরসভার পাঠাগারে আকর্ষণ বাড়ছে পড়ুয়াদের
বিশাল হল ঘরটাই ঢুকে থমকে দাঁড়াতে হয়। লোহার তাকে থরে থরে সাজানো বই।
স্কুলের উঁচু ক্লাসের পাঠ্য এবং জয়েন্ট সহ নানা প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার জন্য রেফারেন্স বই মিলিয়ে সংখ্যাটা হাজার পনেরো। টেবিলের উপরে রাখা খোলা বই। নিস্তব্ধ সেই ঘরে বসে বসে দ্রুত হাত চালিয়ে নোট নিচ্ছেন নানা বয়সের পড়ুয়া। সোম থেকে শনি বিকেল তিনটে থেকে পাঁচটার মধ্যে শান্তিপুর পৌর গ্রন্থাগারে গেলে চোখে পড়বে এমন দৃশ্য। আর রবিবার সময়টা সকাল দশটা থেকে দুপুর বারোটা।
২০০৫ সালের অগস্ট মাসে সামান্য কিছু বই নিয়ে যাত্রা শুরু হয়েছিল শান্তিপুর পৌর গ্রন্থাগারে। কর্তৃপক্ষের সংশয় ছিল, ছাত্রছাত্রীরা আদৌ আসবে তো? বিরোধিতা ছিল রাজনৈতিক প্রতিপক্ষেরও। কিন্তু ২০১৪ সালে পাঠাগারে পড়ুয়াদের ভিড় আর রোজ লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়তে থাকা সদস্য সংখ্যা জানান দিচ্ছে, অতীতের আশঙ্কা ছিল একেবারেই অমূলক।
পুরপ্রধান অজয় দে বলছেন, “সাড়ে পাঁচশোর বেশি ছাত্রছাত্রী এখন এই পাঠাগারের নিয়মিত পাঠক। বইয়ের সংখ্যা পনেরো হাজার ছাড়িয়ে গিয়েছে। নিয়ম করে নতুন বইও কেনা হচ্ছে। প্রতি বছর পুর বাজেটে আমরা বই কেনার জন্য অর্থ বরাদ্দ করি।”
সদস্য যে ভাবে বাড়ছে, চেয়ার ফাঁকা পাওয়াই কঠিন। —নিজস্ব চিত্র।
কিন্তু পুরসভায় গ্রন্থাগার কেন? অজয়বাবু জানান, নানা উন্নয়নমূলক কাজ করলেও পুরসভা গ্রন্থাগার তৈরি করছেএমন নজির খুব বেশি হয়তো নেই। কিন্তু শান্তিপুরের ছবিটা একটু অন্যরকম। বাংলার শিক্ষা-সংস্কৃতির ক্ষেত্রে প্রাচীন এই জনপদের একটা আলাদা স্থান ছিল। বর্তমানে এখানকার বেশির ভাগ মানুষ তাঁতশিল্পী। আর হস্তচালিত তাঁতের কী হাল তা বলাই বাহুল্য। এইসব হত দরিদ্র তন্তুবায় পরিবারের ছেলেমেয়েদের যাতে বইয়ের অভাবে পড়াশোনা বন্ধ না হয় সেই কারণেই এমন ব্যবস্থা। অজয়বাবু দাবি, “এখন এই গ্রন্থাগার শান্তিপুরের ছাত্রছাত্রীদের সব চেয়ে প্রয়োজনীয় প্রতিষ্ঠান হয়ে উঠেছে।”
পুরসভার এই পাঠাগারটিকে নিয়ে আপ্লুত শান্তিপুরের ছাত্র-শিক্ষক-অভিভাবক মহলও। উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী শান্তনু নন্দী বা দশম শ্রেণির নিবেদিতা দত্তের কথায়, “পৌর গ্রন্থাগারের উপকার বলে শেষ করা যাবে না। নিত্য নতুন বইয়ের পাশাপাশি ওখানে গেলে নিজেদের মধ্যে গ্রুপ স্টাডিও হয়ে যায়। শান্তিপুরের মতো শহরে এই গ্রন্থাগার সত্যিই খুব বড় পাওনা।” স্থানীয় ইংরেজি শিক্ষক অকৈতব মৈত্র বলেন, “সব থেকে বড় কথা, পাঠাগারটি নিয়মিত চলছে। ছাত্রছাত্রীরা সারা সপ্তাহ ধরেই বই দেওয়া নেওয়া করতে পারে। লেখাপড়ার ক্ষেত্রে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিচ্ছে এই পাঠাগারটি।”
সপ্তাহে ছ’দিন পুরকর্মীরা গ্রন্থাগার চালান। কিন্তু রবিবার ব্যাপারটা অন্যরকম। রবিবার পাঠাগারটি খোলা থাকে সকাল ১০টা থেকে ১২টা পর্যন্ত। আর সেদিন উপস্থিত থাকেন স্থানীয় শিক্ষকদের অনেকেই। তাঁরা পড়ুয়াদের প্রয়োজনীয় সাহায্য করেন। অজয় দে বলেন, “শুধু গ্রন্থাগারের মাধ্যমেই নয়, এলাকার পড়ুয়াদের যাতে বইয়ের অভাব না হয়, সে জন্য প্রতি বছর পুর এলাকার ২৪টি ওয়ার্ড এবং ৬টি গ্রাম পঞ্চায়েতের সমস্ত মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক স্কুলের পড়ুয়াদের শিক্ষাবর্ষের শুরুতেই পাঠ্যবই দেওয়া হয়।”
সম্প্রতি সেই বই বিতরণের অনুষ্ঠানে প্রায় সাড়ে চার হাজার ছাত্রছাত্রীকে পুরসভার পক্ষ থকে বই তুলে দেওয়া হয়েছে। রাজ্যের গ্রন্থাগার মন্ত্রী আব্দুল করিম চৌধুরী বলেন, “ওই পুরসভার উদ্যোগ প্রশংসনীয়। অন্য পুরসভাগুলিও যদি এই ব্যাপারে উদ্যোগী হয় তাহলে স্থানীয় পড়ুয়ারা উপকৃত হবেন।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.