|
|
|
|
চেনা উন্মাদনা নিয়ে মহিষাদলে ফিরছে সতীপ্রসাদ চ্যালেঞ্জ কাপ |
আরিফ ইকবাল খান • মহিষাদল |
রাজপরিবারের হাত ধরে ফিরে আসতে চলেছে ফুটবলের প্রাচীন ঐতিহ্য। প্রতিযোগিতার প্রাণপুরুষরা আজ আর নেই। কিন্তু তাঁদের উত্তরাধিকারীদের হাত ধরে আজ, শনিবার থেকে শুরু হতে চলেছে সতীপ্রসাদ গর্গ চ্যালেঞ্জ কাপ।
মহিষাদলের রাজবাড়ির সাথে সাংস্কৃতিক ও বিনোদন জগতের যোগসূত্র দীর্ঘদিনের। ১৯৫৪ সালে এই পরিবারের হাত ধরে শুরু হয়েছিল সতীপ্রসাদ গর্গ চ্যালেঞ্জ কাপ। বাঙালির সেরা খেলা ফুটবলের চেনা উন্মাদনা নিয়ে এই প্রতিযোগিতা এক সময় রাজ্যের ফুটবলপ্রেমীদের নয়নের মনি হয়ে উঠেছিল। ১৯৭২ সালে প্রতিযোগিতাটি বন্ধ হয়ে যায়। ফের ১৯৮৪ সালে প্রতিযোগিতা শুরু হলেও তা তিন বছরের জন্য চালু ছিল। ১৯৮৬ সালে রাজা দেবপ্রসাদ গর্গ মারা যান। তারপর থেকেই বন্ধ হয়ে যায় খেলা।
রাজপরিবারের কনিষ্ঠ সদস্য সতীপ্রসাদ গর্গের প্রপৌত্র শৌর্যপ্রসাদ গর্গের হাত ধরে ফের ওই প্রতিযোগিতা শুরু হতে চলেছে। দাদু দেবপ্রসাদ গর্গের আমলে বন্ধ হয়ে যাওয়া প্রতিযোগিতার ব্যাটন নিয়ে শৌর্যপ্রসাদের হাত ধরে ফিরতে চলেছে আগের সেই চেনা উন্মাদনাও। শৌর্যপ্রসাদ বলেন, “ছোটবেলা থেকে বাবা-মা-ঠাকুমা সবার কাছ থেকে এই প্রতিযোগিতার অনেক গল্প শুনেছি। বিশেষ করে আমার মা রাজপরিবারের বর্তমান রাজমাতা ইন্দ্রাণী দেবীও আমাকে এবিষয়ে উৎসাহ দিয়েছেন। তাছাড়া রাজপরিবারের সবার এই ফুটবল কাপকে ঘিরে আবেগও রয়েছে। তাই মহিষাদলের ক্রীড়াপ্রেমী মানুষদের নিয়ে পুনরায় এই প্রতিযোগিতা শুরু করতে উদ্যোগী হলাম।”
প্রতিযোগিতার আগের রুপোর তৈরি কাপ আর নেই। তবে সেই কাপের ছবি দেখে অবিকল একটি কাপ তৈরি করা হয়েছে। শৌর্যপ্রসাদ জানান, উদ্বোধনের দিন প্রথমে গোপাল জিউয়ের মন্দিরে কাপ নিয়ে যাওয়া হবে। সেখান থেকে রাজবাড়ির ফুলবাগ ও রাজময়দান যাওয়ার পথে কাপ ঘুরবে মহিষাদলে। প্রতিযোগিতা চালু করতে শৌর্যপ্রসাদ পাশে পেয়ে গিয়েছেন প্রাক্তন ফুটবলার পুলক বাগ, প্রদীপ কুইতি, সংগঠক সুকুমার ভৌমিক এবং মহিষাদলের বিশিষ্ট মানুষ সুরজিৎ সিনহা, রমেশ সাঁতরাদেরও। |
|
সতীপ্রসাদ চ্যালেঞ্জ কাপের পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠান। (ছবি: রাজপরিবারের অ্যালবাম থেকে প্রাপ্ত) |
এবারের প্রতিযোগিতায় মোটি ছ’টি দল অংশগ্রহণ করবে। প্রথম দিন মহিষাদলের কসমস ক্লাব ও পাঁশকুড়ার সারদা ক্লাবের মধ্যে খেলা হবে। এছাড়াও প্রতিযোগিতায় অংশ নেবে নন্দকুমার একাদশ ও মহিষাদল স্পোর্টিং ক্লাব। প্রতিযোগিতার সেমিফাইনাল থেকে খেলবে কলকাতার ডালহৌসি ও এরিয়ান্স ক্লাব। ফাইনাল খেলা অনুষ্ঠিত হবে আগামী ১৬ ফেব্রুয়ারি। উদ্যোক্তারা জানান, ১৯৫৪ সালে প্রতিযোগিতার প্রথম বর্ষে এই দুটি ক্লাব ফাইনাল খেলেছিল। তাই এবার ওদের আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। স্থানীয় প্রাক্তন ফুটবলার তথা শিক্ষক পুলক বাগ বলেন, “আমার বাবা জন্মেঞ্জয় বাগ এই খেলা পরিচালনার সাথে যুক্ত ছিলেন। বাবার সাথে আমি মাঠে থাকতাম। বাবা পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে দাঁড়িয়ে আছেন এমন ছবিও রয়েছে। তাই এই কাপ আমার কাছে খেলার চেয়ে অনেক বেশি কিছু। প্রতিযোগিতার কথা বলতে গিয়ে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন পুলকবাবু। কিছুক্ষণ থেমে ফের তিনি বলেন, “সেই সময় প্রতিযোগিতায় মোহনবাগান, এরিয়ান্স, বেহালা ইউথ, টালিগঞ্জ-এর মতো প্রথম সারির দল খেলতে আসত।” খেলোয়াড়রা সেই সময় প্রতিযোগিতার ক’দিন রাজবাড়িতেই থাকতেন। গেঁওখালি থেকে ইলিশ, ভেটকি নিয়ে আসা হত। খেলোয়াড়দের জন্য রান্না হত নানা মাছের পদ। মোহনবাগানের হয়ে খেলে যাওয়া মঙ্গল পুরকায়স্থের খেলা আজও মনে গেঁথে রয়েছে সকলের।
মহিষাদলের সতীশ সামন্ত গ্রাম পঞ্চায়েতের সদস্য সুকুমার ভৌমিক বলেন, “বাড়ির জমি বিক্রি করে একদিন প্রতিযোগিতার জন্য ফুটবল দল তৈরি করেছিলাম। আমার আনন্দ ভাষায় প্রকাশ করতে পারব না। মহিষাদলে খেলার প্রসারে এই প্রতিযোগিতার গুরুত্ব অপরিসীম।” প্রতিযোগিতার উদ্বোধনের দিনে মাঠে থাকবেন সতীপ্রসাদ গর্গের নাতি শঙ্করপ্রসাদ গর্গ ও নাতনি মৃদুলা মুখোপাধ্যায়। শঙ্করপ্রসাদ গর্গের কথায়, “সম্পূর্ণ রুপোর তৈরি ওই কাপের কারুকার্য ছিল দেখার মতো। আমাদের আক্ষেপ, সেই অসাধারণ কাপটা আর পাওয়া যায়নি।” এছাড়াও উদ্বোধন অনুষ্ঠানে থাকার কথা ফুটবল ময়দানের পরিচিত নাম মহিউল ইসলাম, বিকাশ পাঁজি ও অলোক মুখোপাধ্যায়ের। রাজঘরানা মেনে ফাইনালের শেষে খেলা হবে আবিরও।
তাই দীর্ঘ বিরতি কাটিয়ে ফুটবলের চেনা উন্মাদনা ফেরার অপেক্ষায় মহিষাদলবাসীরা। |
|
|
|
|
|