টিএমসিপিতে দ্বন্দ্বের জের, কেশপুর
কলেজে ছাত্র সংসদ গঠন রাত ১০টায়
ছাত্র সংসদ গঠন ঘিরে দীর্ঘ টানাপোড়েন চলল কেশপুর কলেজে। সংসদ গঠন হওয়ার কথা ছিল বেলা ১টার মধ্যে। তৃণমূল ছাত্র পরিষদের গোষ্ঠী কোন্দলের জেরে পুরো প্রক্রিয়া মিটল রাত ৯টা নাগাদ। শেষমেশ, সংসদ গঠন হওয়ার পর রাত ১০টা নাগাদ কলেজ ছাড়লেন ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ সহ কলেজের কর্মীরা। এক সময় টিএমসিপির দুই গোষ্ঠী প্যানেল জমা দেওয়ার তোড়জোড় শুরু করেছিল। ভোটাভুটির পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল। খবর পেয়ে কেশপুরে পৌঁছন সংগঠনের জেলা সভাপতি। তাঁর হস্তক্ষেপেই শেষ মুহুর্তে ভোটাভুটি এড়িয়ে ছাত্র সংসদ গঠন হয়। কেশপুর কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ সুশান্তকুমার দোলুই বলেন, “সুষ্ঠু ভাবেই সংসদ গঠন হয়েছে। তেমন কোনও অশান্তি হয়নি।” অন্য দিকে, টিএমসিপির জেলা সভাপতি রমাপ্রসাদ গিরি বলেন, “কেশপুরে গোষ্ঠী কোন্দলের কোনও ব্যাপার নেই। ছাত্রদের মধ্যে থেকে একাধিক প্রস্তাব উঠে আসতেই পারে। যখনই জানতে পারি, ভোটাভুটির পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে, তখনই আলোচনার মাধ্যমে সমস্যা মেটানোর নির্দেশ দিই।” কেশপুর কলেজের পরিচালন সমিতির সভাপতি তথা জেলা তৃণমূল নেতা চিত্ত গড়াইও বলেন, “তেমন কোনও গোলমাল হয়নি। একটিই প্যানেল জমা পড়েছিল। সেটি সর্বসম্মত ভাবে পাশ হয়েছে।”
যদিও নেতৃত্বের এই দাবিতেও কোন্দল একেবারে চাপা থাকছে না। রাজ্যে পালাবদলের আড়াই বছর পরও কেশপুরে তৃণমূলের গোষ্ঠী কোন্দলের রাশ টানা না- যাওয়ায় দলের অন্দরেই নানা প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। এই পরিস্থিতিতে দলের ছাত্র সংগঠনের মধ্যেও মতবিরোধ চরমে ওঠায় বিড়ম্বনায় পড়েছেন জেলা নেতৃত্বের একাংশ। এই কলেজের ছাত্র সংসদের মোট আসন সংখ্যা ২৫। গেল বারের মতো এ বারও কেশপুর কলেজে নির্বাচন হয়নি। টিএমসিপির ২৫ জন প্রার্থী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী হন। বৃহস্পতিবার ছিল সংসদ গঠন। দীর্ঘ টানাপোড়েনের পর সংসদের সাধারণ সম্পাদক হন রাজেশ মল্লিক। সহ-সম্পাদক হন মানস ঘোষ এবং সভাপতি হন শেখ সানোয়ার। অথচ, দলের অন্দরের খবর, সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্যই শুরুতে রাজেশকে সাধারণ সম্পাদক হিসেবে মানতে চাননি। তাঁরা শেখ আমিন সাহানিকে এই পদে চেয়েছিলেন। এমনকী, টিএমসিপির কেশপুর কলেজ ইউনিটের সভাপতি শেখ আবদুল্লাও শুরুতে আমিনের পক্ষে ছিলেন। পশ্চিম মেদিনীপুরের এই এলাকায় তৃণমূলের গোষ্ঠী কোন্দল নতুন কিছু নয়। এই পরিস্থিতির জেরে গত আড়াই বছরে চার- চারবার দলের ব্লক সভাপতি বদল হয়েছে কেশপুরে। তাও মতবিরোধ মেটেনি। দলের ব্লক সভাপতি সঞ্জয় পানের সঙ্গে দলেরই জেলা পরিষদ সদস্য মহিউদ্দিন আহমেদের মতবিরোধ রয়েছে। বৃহস্পতিবার ছাত্র সংসদ গঠনে এই বিরোধেরই ছাড়া পড়ে। কেমন? তৃণমূলের অন্দরে আমিন সাহানি মহিউদ্দিন- অনুগামী বলে পরিচিত। অন্যদিকে, রাজেশ মল্লিক সঞ্জয়- অনুগামী বলে পরিচিত। দলীয় সূত্রে খবর, ওই দিন দুপুরে আমিনরা একটি প্যানেল তৈরি করেছিলেন। ওই প্যানেলের পক্ষে ছিলেন ২১ জন।
অন্য দিকে, রাজেশরাও পাল্টা একটি প্যানেল তৈরি করেছিলেন। ওই প্যানেলের পক্ষে ছিলেন ৪ জন। ব্লক তৃণমূলের ক্ষমতাসীন গোষ্ঠী অবশ্য রাজেশকে সাধারণ সম্পাদকের বসে বসাতে তৎপর হয়। তৃণমূলের জেলা পরিষদ সদস্য মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, “শুনেছি, সংসদের অধিকাংশ সদস্য ভোটাভুটি চেয়েছিলেন। কিন্তু, তা হয়নি। কেউ কেউ বলছেন, আমি না কি গোলমাল করছি। আরে, আমি গোলমাল করতে যাবো কেন? কলেজে কী হবে, সেটা ছাত্রছাত্রীদের ব্যাপার। তবে, অধিকাংশ ছাত্রছাত্রী যেটা চান, সেটা হলেই ভাল হয়! আমি শুনেছি, সংসদের অধিকাংশ সদস্য আমিন সাহানিকে সাধারণ সম্পাদকের পদে চেয়েছিলেন। পরে অবশ্য টিএমসিপির জেলা সভাপতি এসে আলোচনা করে একটা সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।” অন্যদিকে, তৃণমূলের কেশপুর ব্লক সভাপতি সঞ্জয় পান বলেন, “সুষ্ঠু ভাবেই সংসদ গঠন হয়েছে বলে শুনেছি। কোনও গোলমাল হয়নি। একটি প্যানেলই জমা পড়েছিল। সর্বসম্মত ভাবে রাজেশ মল্লিক সংসদের সাধারণ সম্পাদক হয়েছেন।” দুপুরে যেখানে তাঁর প্যানেলের পক্ষে ২১ জন ছিলেন, বিপক্ষে মাত্র ৪ জন ছিলেন, সেখানে বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে পরিস্থিতির হেরফের হল কী ভাবে? আমিন সাহানি বলেন, “পুলিশকে দিয়ে সংসদের কয়েকজন সদস্য এবং তাঁদের অভিভাবকদের ভয় দেখানো হয়েছে। প্যানেলে সই করতে বাধ্য করা হয়েছে। না- হলে এই পরিস্থিতি হত না।” তাঁর কথায়, “শুরুতে আমরা সংসদ সদস্যদের মতামত নিয়ে একটি প্যানেল তৈরি করেছিলাম। ইউনিট সভাপতিই নামগুলো প্রস্তাব করেছিলেন। পরে জানতে পারি, আরও একটি প্যানেল জমা দেওয়া হবে। আমরা রমাদার (টিএমসিপির জেলা সভাপতি) সঙ্গেই থাকি। রমাদা মেদিনীপুরে এক কথা বলেছিলেন। কেশপুরে এসে অন্য কথা বলেন! যে ভাবে সংসদ গঠন হয়েছে, তা সত্যিই অনভিপ্রেত।”


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.