শিখরদের জন্য এ বার
মনোবিদ আনা হোক
পাঁচশো রানের বোঝা ঘাড়ে যখন নামছি, তখন নিশ্চয়ই টেস্ট জয়ের ভাবনা মাথায় রেখে ব্যাট করতে নামব না। পরিস্থিতিটা অনেকটা ‘টাগ অব ওয়ার’-এর বা মতো। দড়ি টানাটানিতে প্রথমে ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ বিপক্ষের হাত থেকে নিজেদের দিকে নিয়ে আসা। তার পর অন্য ভাবনা। ভারতের পাল্টা ব্যাটিংয়ের শুরুটাও সে রকম ধীরগতিতে, অতি সাবধানে হওয়া উচিত ছিল। কিন্তু শিখরদের শুরুটা দেখে মনে হল, ওরা কিছু ভেবে ওঠার আগেই নিউজিল্যান্ড পেসাররা পাল্টা আক্রমণ হানল।
ভারতের ইনিংস শুরুর আগেই ব্যাপারটা মনে হয়েছিল। স্কোর বোর্ডে দশ রান ওঠার মধ্যে তিন ব্যাটসম্যান ড্রেসিংরুমে ফিরে যাওয়ার পর ধারণাটা আরও দৃঢ় হল ভারতের পক্ষে এই টেস্ট জেতা অসম্ভবেরই সমান। যদিও ক্রিকেটে কিছুই অসম্ভব নয়। কিন্তু এই পরিস্থিতি থেকে ম্যাচ ঘুরিয়ে তা জিতে বেরোনোর জন্য যে কলিজার জোর দরকার, তা ধোনিদের আছে, এটা ভাবার মতো ভুল অন্তত এই মুহূর্তে করতে পারছি না।
তবে এখনও বিশ্বাস করি, এই ম্যাচ ওরা বাঁচাতে পারে। এই দলটার উপর যেটুকু আস্থা আমার এখনও বেঁচে আছে, তার ভিত্তিতেই কথাটা বলছি। ক্রিজে রোহিত ও রাহানে। রোহিত বাউন্সি উইকেটে ভাল খেলে। শর্ট বলেও ও তেমন অস্বস্তিতে ভোগে না। আর রাহানে তো টেকনিকের দিক থেকে যথেষ্ট সাবলীল। ফলে ওরা ইনিংসটা টেনে নিয়ে যেতে চাইলে, পারবে বলেই মনে হয়। সে ক্ষেত্রে ওদের বড় পার্টনারশিপ গড়তে হবে। বাকিটুকু ধোনি, জাডেজাদের উপর।

ঘাতক ও ঘায়েলরা। শুক্রবারের অকল্যান্ডে মাঠ ছাড়ছেন
ব্রেন্ডন ম্যাকালাম। পাশে টিম ধোনি। ছবি: রয়টার্স।
সমস্যা হচ্ছে, এই দলের বেশির ভাগ ব্যাটসম্যান আক্রমণাত্মক। স্ট্রোক প্লেয়ার। ফলে পাঁচশোর উপর রান ঘাড়ে নিয়ে ব্যাট করতে নেমে উইকেট আঁকড়ে পড়ে থাকার জন্য যে অসীম ধৈর্য ও নিয়ন্ত্রণ দরকার, তা ওদের অনেকের মধ্যেই নেই। শিখর ধবনকে দেখলেন না, কেমন নেমেই ফিরে গেল! ওয়ান ডে সিরিজে ওদের যে মানসিক সমস্যাটা ছিল, তা মনে হচ্ছে রয়েই গিয়েছে। অর্থাৎ ওয়ান ডে-র ভূত এখনও ঘাড় থেকে নামেনি। দলে একজন মনোবিদ থাকলে বোধহয় ভূতটা দ্রুত ঘাড় থেকে নামত। আবার বলছি, মনেপ্রাণে বিশ্বাস করি, এদের প্রতিভায় এতটুকু খামতি নেই। দক্ষতাও যথেষ্ট। কিন্তু বিদেশের মাঠে গিয়ে মনস্তাত্ত্বিক সমস্যা হচ্ছে।
এই সমস্যা মেটানোর জন্য দীর্ঘমেয়াদি চুক্তিতে একজন মনোবিদ দরকার ভারতীয় দলে। সামনে কিন্তু পরপর আরও বিদেশ সফর। ইংল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া যেতে হবে ধোনিদের, যেখানে গত বার দুঃস্বপ্নের সফর হয়েছিল ওদের। ওখানে গিয়ে সেই দুঃস্বপ্ন ফের তাড়া করে বেড়াতে পারে ধোনিদের। আবার ভরাডুবি হতে পারে ওই দুই দেশে। তবে শুধু এই দুই সিরিজে নয়, সারা বছরের জন্যই একজন মনোবিদের প্রয়োজন।
ছেলেগুলো ব্যর্থ হতে হতে এমন একটা মানসিক চোরাবালিতে পড়ে যাচ্ছে, যেখান থেকে উঠতে গিয়ে আরও তলিয়ে যাচ্ছে। শিখর এর সবচেয়ে বড় উদাহরণ। ওয়ান ডে সিরিজের ‘ট্রমা’ থেকে বেরিয়ে আসার আগেই এ দিন টেস্টে আউট। এদের জন্যই মনোবিদ দরকার। যাতে এই চোরাবালি থেকে উঠে দাঁড়াতে পারে শিখররা। যাতে মাঠে নামার আগেই মনের মধ্যে বাসা বাঁধা আতঙ্কটা দূরে সরিয়ে দেওয়া সম্ভব হয়।
শনিবার যখন এই লেখা পড়ছেন, তখন ইডেন পার্কে অনেকটা খেলা গড়িয়ে গিয়েছে। তবে আমার মনে হয়, ভারতের এখন একদম ব্যাকফুটে চলে যাওয়া উচিত। শুধু উইকেটে পড়ে থাকো। রান করার কথা ভাবতেই হবে না। উইকেটে পড়ে থেকে যতটা রান আসার, ততটাই আসুক। এর বেশি কিছু দরকার নেই। এ ভাবেই ম্যাচ বাঁচাতে হবে। কাজটা অবশ্য শুরু করেছে রোহিত-রাহানে। কিন্তু কাজটা আরও অনেক এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে।

প্রথম টেস্ট শুরুর আগের দিন গভীর রাত পর্যন্ত পানশালায় কাটানোয় শৃঙ্খলাভঙ্গের অপরাধে জেসি রাইডার ও ডুগ ব্রেসওয়েলকে সাসপেন্ড করল নিউজিল্যান্ড। ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে নিউজিল্যান্ড বোর্ড। দুই ক্রিকেটারই দোষ স্বীকার করে জানিয়েছেন, বৃহস্পতিবার প্রায় ভোর পর্যন্ত তাঁরা অকল্যান্ডের এক পানশালায় কাটান। ক্ষুব্ধ নিউজিল্যান্ড টিম ম্যানেজার মাইক স্যান্ডল বলেছেন, “এই আচরণ বরদাস্ত করা যায় না। ওরা দলের আস্থা ভঙ্গ করেছে।” প্রসঙ্গত, এই দুই ক্রিকেটার ২০১২-র ফেব্রুয়ারিতেও নেপিয়ারের এক পানশালায় ঝামেলায় জড়িয়ে টিম থেকে এক ম্যাচ সাসপেন্ড হয়েছিলেন। গত বছর মাদক পরীক্ষায় ধরা পড়ায় ছ’মাসের নির্বাসন হয়েছিল জেসি রাইডারের।

“৩০-৩ হয়ে যাওয়ার পর ভাবতেই পারিনি যে পাঁচশো তুলতে পারব। ভারতকে যদি যথেষ্ট বড় টার্গেট দেওয়া যায়, তা হলে কুড়িটা উইকেট নেওয়ার মতো বোলার আমাদের আছে। আর আমার মনে হয় আমরা ওদের যথেষ্ট রানের টার্গেট দিতে পেরেছি...প্রথম ওভারে ভারতের দুটো উইকেট নেওয়া দুর্দান্ত ব্যাপার। বিশেষ করে পূজারার উইকেট, কারণ ও এক বার সেট হয়ে গেলে সপ্তাহের পর সপ্তাহ ব্যাট করে যেতে পারে! শেষের দিকে ভারতের একটা ভাল পার্টনারশিপ হয়েছে, কিন্তু আশা করছি শনিবার সকালে মেঘলা পরিবেশে বল সুইং করবে।”

“পিচ বা পরিবেশের চেয়েও বেশি তফাত গড়েছে নতুন বল। দুটো টিমেই। প্রথম দিকে বল বেশি সুইং করলেও পরে ব্যাট করা কিছুটা সহজ হচ্ছে। আশা করি রোহিত আর অজিঙ্ক ভাল পার্টনারশিপ করতে পারবে... ওদের বোলাররা বল সুইং করাচ্ছিল। কিন্তু আমরা আরও অনেক ভাল ব্যাট করতে পারতাম। আশা করছি পরের ইনিংসে সেটা করতে পারব। পিচ এখনও ব্যাটিংয়ের জন্য যথেষ্ট ভাল আছে। আশা করছি ওদের স্কোরের কাছাকাছি রান তুলে ওদের উপর চাপ তৈরি করতে পারব...ব্রেন্ডন দুর্দান্ত ব্যাট করল। এই ব্যাটিংয়ের সামনে বোলারদের প্রায় কিছুই করার থাকে না।”

পুরনো খবর:




First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.