টস জিতে নিউজিল্যান্ডকে ব্যাট করতে পাঠিয়ে যে ফাটকাটা খেলেছিল ভারত, শুরুতে ঝটপট তিনটে উইকেট পড়ে যাওয়ায় মনে হয়েছিল, ধোনি বাজিটা বোধহয় জিততে চলেছে। কিন্তু ব্রেন্ডন ম্যাকালাম ও কেন উইলিয়ামসন এসে হাওয়াটা পুরো নিজেদের দিকে ঘুরিয়ে নিল। দিনের শেষে ভারতই উল্টে চাপে পড়ে গেল। নিউজিল্যান্ড বরং বেশ ভাল জায়গায়।
এমন পরিবেশে এটা অবশ্য নতুন কিছু নয়। বলের বয়স কুড়ি ওভারের বেশি হয়ে গেলেই ব্যাটসম্যানদের পক্ষে কাজটা অনেক সহজ হয়ে যায়। তবে চাপের মুখে দুই কিউয়ি ব্যাটসম্যান যে ভাবে পাল্টা আক্রমণ করল, তা সত্যিই অসাধারণ। ম্যাকালাম এ রকমই, বরাবরই ইতিবাচক মনোভাবাপন্ন। এই রকম একটা ইনিংস খেলে ও যে বেশ তৃপ্তি পেয়েছে, এই ব্যাপারে আমি নিশ্চিত। টেস্ট ক্রিকেটে একটা দল শুরু থেকেই যদি চাপ সামলে দেয়, তা হলে সেই দলের আধিপত্য বিস্তারের সম্ভাবনা অনেক বেড়ে যায়। ওয়ান্ডারার্সে ভারতও এমনটাই করতে পেরেছিল বলেই শেষ দিনে খুব ভাল জায়গায় চলে গিয়েছিল। সবুজ, সিমিং পরিবেশে তাই এ রকম ঝুঁকি নেওয়া যেতেই পারে। |
শাসক থেকে শাসিত। দিনের শুরুতে নিউজিল্যান্ডের
তিন উইকেট ফেলে ভারতের উল্লাস। ছবি: এএফপি। |
বিদেশের মাঠে টেস্টের প্রথম দিনই স্পিনারদের পক্ষে প্রভাব ফেলা কঠিন। তাই প্রথম দিনটা স্পিনারদের প্রধান কাজ যত পারো স্কোরবোর্ডের গতিতে রাশ টেনে ধরো। রবীন্দ্র জাডেজা কিন্তু সেটা এ দিন করতে পারল না। ওর প্রতি ওভারে চারের বেশি রান ওঠায় ধোনির পক্ষে ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ রাখা বেশ মুশকিল হয়ে ওঠে। তা ছাড়া হঠাৎ করে মহম্মদ শামির ফর্ম হারিয়ে যাওয়ায় চারজনের ভারতীয় বোলিং বিভাগও শক্তি খুইয়ে ফেলেছে। এটা একটা চিন্তার বিষয়।
শুক্রবার সকালে দ্রুত ওদের ফিরিয়ে দিয়ে ম্যাচে ফিরতে না পারলে ভারত কিন্তু আরও বিপদে পড়বে। সবে দশ ওভার হয়েছে নতুন বল নেওয়া হয়েছে। এখনও এমন কিছু পুরনো হয়ে যায়নি। ভারতকে এই ব্যাপারটা কাজে লাগাতে হবে। ম্যাকালাম ও কোরি অ্যান্ডারসন, দু’জনেই সেট হয়ে গিয়েছে এবং দু’জনেই দ্রুত রান তোলার ব্যাপারে বিশেষজ্ঞ। তাই ওদের দিনের শুরুতেই ড্রেসিংরুমে ফেরাতে না পারলে ম্যাচে ফিরে আসা আরও কঠিন হয়ে পড়বে। নিউজিল্যান্ডের এখন যা অবস্থা, তাতে সাড়ে চারশো-পাঁচশো রানও তুলে দিতে পারে। সত্যিই যদি তা হয়, তা হলে ভারতকে ম্যাচ বাঁচানোর খেলা খেলতে হবে। |
বাকি সময়টা কাটল ব্রেন্ডন ম্যাকালামের ব্যাটে শাসিত হয়ে। ছবি: গেটি ইমেজেস। |
খেয়াল করে দেখুন, ধোনি প্রায় একই দল নিয়ে দক্ষিণ আফ্রিকায় গিয়েছিল। এটা অধিনায়ক ধোনির একটা প্রবণতা বলতে পারেন। ও কিন্তু বরাবরই ওর দলের ক্রিকেটারদের সময় ও সুযোগ দিয়ে এসেছে। কিন্তু এ বার তো শিখর, বিজয়দের মাথা উঁচু করে দাঁড়াতেই হবে। এই সিরিজে ওদের দু’জনেরই ভূমিকা খুব গুরুত্বপূর্ণ। শুধু ওদেরই নয়, রোহিত শর্মাকেও প্রমাণ করতে হবে যে, বিদেশে ওরাই অপরিহার্য। কারণ, এমন দু’জন চ্যাম্পিয়নের জায়গায় ওদের নিয়ে আসা হয়েছে, যারা দলে ফেরার অপেক্ষায় বসে রয়েছে। ওদের নিজেদের জন্যও ওদের ফর্মে ফেরা দরকার। না হলে নিজেদের দক্ষতা নিয়েই একসময় সন্দেহ দেখা দেবে ওদের মনেই। যেটা ওদের আত্মবিশ্বাসের পক্ষে মারাত্মক।
ক্যাপ্টেনের ব্যাটিংও অবশ্য এই সিরিজে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। ওয়ান ডে-তে ওর পারফরম্যান্স খুবই ভাল ছিল। কারণ এই ফর্ম্যাটে ও দুর্দান্ত। কিন্তু দেশের বাইরে টেস্ট ক্রিকেটে ধোনি কিন্তু এই ফর্ম দেখাতে পারেনি। এ বার সেটাই ওকে দেখাতে হবে।
|
গাওস্করের কাছে ফিল্ডাররাই ভিলেন
নিজস্ব প্রতিবেদন
৬ ফেব্রুয়ারি |
ভারত-নিউজিল্যান্ড প্রথম টেস্টের প্রথম দিনের শেষে সুনীল গাওস্করের চোখে খলনায়ক নম্বর ওয়ান হল ভারতীয় ফিল্ডিং। গাওস্কর পরিষ্কার বলেছেন, “মানছি ক্রিকেটে একটা ভাগ্যের ব্যাপার থাকে। খেলাটা মাঝে মাঝে ভাগ্যের জোরে ঘুরে যায়। কিন্তু সেটা মাথায় রেখেও বলছি, মাঠে তো একটা চেষ্টা করতে হবে। আজ ভারতীয় ফিল্ডারদের ক্যাচ নেওয়ার চেষ্টা মোটেই আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের মান অনুযায়ী হয়নি।” এ দিন ভারতীয় ফিল্ডাররা লাঞ্চের আগে ও পরে মিলিয়ে চারটে ক্যাচ ফস্কান।
তবে ভারতীয় বোলারদের কিন্তু প্রশংসাই করছেন গাওস্কর। “এ দিনটা জাহির খানের ছিল না। সব রকম ভাবে জাহির উইকেট নেওয়ার চেষ্টা করে গিয়েছে। কিন্তু ওর দুর্ভাগ্য, প্রথম দিকে সফল হলেও পরের দিকে কোনও লাভ হয়নি।” এমনকী ইশান্তের হয়েও সওয়াল করেছেন গাওস্কর। তাঁর মতে, “চাপের মুখে দায়িত্ব নিয়ে বল করেছে ইশান্ত। প্রথম ওভারে উইকেট নেওয়ার পর ও নিউজিল্যান্ড ব্যাটসম্যানদের উপর টানা চাপ রেখে গিয়েছে। ফিল্ডাররা ক্যাচগুলো ধরলে ইশান্তের নামের পাশে আরও উইকেট থাকত। ভারতও ভাল জায়গায় পৌঁছে যেত।”
|
নিউজিল্যান্ড
প্রথম ইনিংস
৩২৯-৪ |
ফুলটন এলবিডব্লিউ জাহির ১৩
রাদারফোর্ড ক রাহানে বো ইশান্ত ৬
উইলিয়ামসন ক ধোনি বো জাহির ১১৩
টেইলর ক জাডেদা বো ইশান্ত ৩
ম্যাকালাম ব্যাটিং ১৪৩
অ্যান্ডারসন ব্যাটিং ৪২
অতিরিক্ত ৯
মোট ৪ উইকেটে ৩২৯
পতন:১৯, ২৩, ৩০, ২৫১
বোলিং: শামি ২২-৬-৬৬-০, জাহির ২৩-২-৯৮-২, ইশান্ত ২১-৪-৬২-২,
জাডেজা ২০-১-৮১-০, কোহলি ১-০-৪-০, রোহিত ৩-০১২-০। |
|
|