গোঘাট ১ ব্লকের কুমুড়শা পঞ্চায়েতে একশো দিনের কাজের প্রকল্পে সুপারভাইজার নিয়োগ এবং প্রকল্প রূপায়ণকে কেন্দ্র করে দুর্নীতির অভিযোগ তুললেন পঞ্চায়েতেরই এক সদস্য।
তৃণমূল পরিচালিত পঞ্চায়েতেটির ৭ নম্বর সংসদের ওই নির্দল সদস্য মিঠু কুণ্ডু নানা তথ্য দিয়ে জানুয়ারি মাসের গোড়ায় অভিযোগপত্র পাঠিয়েছেন বিডিও, মহকুমাশাসক থেকে শুরু করে দফতরের রাজ্য কমিশনারেরর কাছেও। মহকুমাশাসক অরিন্দম রায় বলেন, “আমরা ইতিমধ্যেই ওই অভিযোগ খতিয়ে দেখে পদক্ষেপ করেছি। একজন সুপারভাইজারকে পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। কাজে গরমিলের অভিযোগ নিয়ে তদন্ত চলছে। প্রকল্পের আইন অনুযায়ী সামাজিক নিরিক্ষক দলও যাবেন।”
মিঠুদেবীর অভিযোগ, কুমুড়শা গ্রামের ৭ নম্বর সংসদের তিনি জনপ্রতিনিধি হওয়া সত্ত্বেও ১০০ দিনের কাজ তদারকির জন্য তাঁর পাঠানো ৬ জন সুপারভাইজারের তালিকা বাদ দিয়ে অবৈধ ভাবে ৬ জনকে সুপারভাইজার নিয়োগ করা হয়েছে। তাঁরা তাঁদের মধ্যে একজনের বিরুদ্ধে আবার মাস্টার রোলে ভুয়ো শ্রমিকের নাম ঢুকিয়ে প্রকল্পের টাকা আত্মস্মাৎ করার অভিযোগ ছিল। তদন্তে সেই অভিযোগ প্রমাণ হওয়ায় গত বছরের গোড়ায় বিডিও তাঁর বিরুদ্ধে থানায় এফআইআর-ও করেন। হেমন্ত সিংহ নামে ওই ব্যক্তিকে সে সময়ে সরিয়েও দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু হেমন্তবাবুকে দিয়েই তিনটি কাজ হয়েছে। মিঠুর অভিযোগ, আগের মতোই এ ক্ষেত্রেও প্রচুর ভুয়ো শ্রমিকের নাম মাস্টার রোলে তুলে টাকা সরানো হয়েছে। তাঁর বক্তব্য, “স্রেফ দলের গোষ্ঠী বিবাদের জেরে আমার সংসদ এলাকায় এ সব অনিয়ম সৃষ্টি করে আমাকে অপদস্থ করা হচ্ছে। পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি মৃণাল আলু এবং প্রধান-সহ ওদের অনুগামী সদস্যেরা আমার সংসদকে উন্নয়ন থেকে বঞ্চিত রেখেছেন।”
এ বিষয়ে কুমুড়সা পঞ্চায়েতের প্রধান হানুফা খাতুন বলেন, “আমি সদস্যদের মাধ্যমে পাওয়া নাম ছাড়াও একই সংসদ থেকে ওই পদে উপযুক্ত আরও নাম পাই। তাঁদের মধ্যে থেকে ৬ জনকে বেছে নেওয়ায় জটিলতা দেখা দেওয়ায় সমস্ত নাম পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতির কাছে পাঠিয়েছিলাম। তিনি যা ভাল বুঝেছেন তাই করেছেন।” তাঁর আরও বক্তব্য, “প্রকল্পের কাজে দুর্নীতি হয়েছে কিনা, তা নির্মাণ সহায়ক দেখেন।” নির্মাণ সহায়ক ইশা খানের কথায়, “রাজনৈতিক কারণে কয়েকটি সংসদে কাজ করানোই যাচ্ছিল না। অবশেষে কাজ চলছে। যে তিনটি কাজ নিয়ে অভিযোগ, সেখানে দুর্নীতি হয়েছে কিনা দেখা হচ্ছে।”
অতীতে দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়া হেমন্ত সিংহকে আবার দায়িত্ব দিয়ে ঠিক কাজ হয়নি বলে মেনে নিচ্ছেন মৃণালবাবু। তিনি বলেন, “বিষয়টা মনে ছিল না। ওঁকে সরিয়েও দেওয়া হয়েছে।” গোঘাট ১ বিডিও দেবেন্দ্রনাথ বিশ্বাস বলেন, “সুপারভাইজারদের বিরুদ্ধে নির্দিষ্ট অভিযোগ থাকলে প্রকল্পের আইন মোতাবেক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
গত পঞ্চায়েত ভোটে গোঘাটের বিভিন্ন পঞ্চায়েত এলাকায় তৃণমূলের প্রার্থিপদ নিয়ে গোষ্ঠীবিবাদ এবং বিক্ষিপ্ত সংঘর্ষও হয়। জেলা নেতারা এসে বিবাদ মেটাবার চেষ্টা করলেও অধিকাংশ জায়গায় তা মেটেনি। কুমুড়সা পঞ্চায়েত এলাকার ১৮টি আসনের মধ্যে তৃণমূলের এক গোষ্ঠী নির্দল হিসাবেও কয়েক জনকে দাঁড় করিয়ে দেয়। গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের কথা অবশ্য মানছেন না দলের স্থানীয় নেতারা। |