|
|
|
|
ম্যাচ ফিক্সিংয়ে কাত বিরোধীরা, গগৈ সুখী
রাজীবাক্ষ রক্ষিত • গুয়াহাটি
৭ ফেব্রুয়ারি |
ভোটের আগের দিনও পরাজয়ের দোরগোড়ায় দাঁড়ানো বিপিএফ প্রার্থী বিশ্বজিৎ দৈমারি বলেছিলেন, “মাননীয় বিধায়কদের ‘ঘোড়া’ বলে অপমান করবেন না। ভোটে ‘হর্স ট্রেডিং’ নয়, বড় জোর ‘ম্যাচ ফিক্সিং’ হতে পারে। বিরোধীরা যাই বলুন, আমিই জিতব।”
হলও তাই। ৩২টি ভোটের নির্ধারিত হিসেব থেকে ৬টি ভোট কম পেয়ে পরাজিত হলেন বিরোধী জোটের প্রার্থী হায়দর হুসেন। যদিও বিরোধীদের একটি ভোটও কংগ্রেসে পড়েনি। কিন্তু আশ্চর্যজনক ভাবে ‘ভুল ভোট’ দেওয়ায় অগপ ও এআইইউডিএফ-এর ৬ পোড় খাওয়া বিধায়কের ভোট বাতিল হয়ে গেল। কোথাও দু’টি টিক চিহ্ন দেওয়া হয়েছে, কোনওটিতে দু’জনের নামে টিক পড়েছে। এআইইউডিএফ বিধায়ক আতাউর রহমান মাঝারভুঁইয়া হজে যাওয়ায় ভোট দিতেই আসেননি। হিসেবে থাকা তৃণমূল বিধায়কও তাঁর ভোট সর্বসম্মত প্রার্থী হায়দর হুসেনকে দেননি। তাঁর ভোটও বাতিল হয়। ফলে হায়দর হুসেন হেরে গিয়েছেন। আর ২৯টি ভোট পেয়ে তৃতীয় পছন্দের প্রার্থী হিসেবে জয়ী কংগ্রেস-বিপিএফ জোটের প্রার্থী বিশ্বজিৎ দৈমারি। কংগ্রেসের প্রথম দুই প্রার্থী ভুবনেশ্বর কলিতা ও সঞ্জয় সিংহ অবশ্য ৩২টি করে ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন। |
|
রাজ্যসভায় জয়ী প্রার্থীদের সঙ্গে অসমের মুখ্যমন্ত্রী তরুণ গগৈ (ডান দিক থেকে দ্বিতীয়)।
রয়েছেন বিশ্বজিৎ দৈমারিও (বাঁ দিক থেকে তৃতীয়)। গুয়াহাটিতে শুক্রবার। ছবি: পি টি আই। |
২০১০ সালের রাজ্যসভা নির্বাচনে বিধায়ক কেনাবেচার ঘটনা অসমে আলোড়ন ফেলে। সে বার অগপ-বিজেপি নির্দেশিকা জারি করেও সব বিধায়ককে ধরে রাখতে পারেনি। ভোটের আগের বিকেল থেকেই বিজেপির চার বিদ্রোহী বিধায়ক রুমি নাথ, কার্তিক সেনা সিংহ, শম্ভু সিংহ মালা ও অভিজিৎ হাজারিকা ‘নিখোঁজ’ হয়ে যান। পরের দিন রাজ্যের মন্ত্রী হিমন্তবিশ্ব শর্মা গাড়ি চালিয়ে তাঁদের বিধানসভায় নিয়ে আসেন। বিজেপি ‘বিশ্বাসঘাতক’ বিধায়কদের বহিষ্কার করে। অগপ বিধায়ক আব্দুল আজিজ, এআইইউডিএফ বিধায়ক রসুল হক ও আনোয়ার উল হক, এএসডিসি বিধায়ক জগৎ সিংহ ইংতি কংগ্রেসের পক্ষে ভোট দেন। বিরোধীদের অভিযোগ বিধায়ক কিনতে দেড় থেকে ৫ কোটি টাকা খরচ করেছে কংগ্রেস।
এ বার প্রথম থেকেই সরাসরি বিরোধী বিধায়কদের ভোট নিজেদের দিকে টানার পরিকল্পনা পরিহার করেছিল কংগ্রেস। দুই কংগ্রেস প্রার্থীর জয় নিশ্চিত হলেও দৈমারির জয়ের জন্য ৩টি ভোট কম হচ্ছিল। বিরোধীদের সর্বসম্মত প্রার্থী হায়দর হুসেনের পক্ষে ৩২ থেকে ৩৪টি ভোট নিশ্চিত ছিল। ১২৬ আসনের বিধানসভায় রাজ্যসভার ভোটে জিততে প্রার্থীপ্রতি প্রয়োজন ছিল ৩২টি ভোট। কংগ্রেসের বিধায়ক ৭৯ জন। জোট শরিক বিপিএফ-এর হাতে ছিল ১২টি আসন। দুই নির্দল বিধায়ক কংগ্রেসকেই সমর্থন করেন।
ভোটের ফল প্রকাশের পর দেখা গেল সব অঙ্কই গোলমেলে। হায়দরের পক্ষে এআইইউডিএফ-এর ১৭ জন, অগপ-র ৯ জন, বিজেপির ৫ জন বিধায়ক ভোট দিলেও অগপ-র পদ্ম হাজরিকা ও ইউডিএফের ৫ বিধায়কের ভোট বাতিল হয়। মাঝারভুঁইঞা না আসায় ভোট পড়ে ১২৫টি। ফলে, জয় নিয়ে ‘নিশ্চিত’ হায়দর হুসেন ২৬টি ভোটেই থেমে যান।
এত দিন বিরোধী প্রার্থীকে ভোট দেবেন বললেও শেষে হাইকম্যান্ডের সিদ্ধান্তে তৃণমূলের বিধায়ক দীপেন পাঠকের ভোট বাতিল হয়। দীপেনবাবু এ নিয়ে বিশেষ কিছু বলতে চাননি।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ঘনিষ্ঠ সূত্রে জানা গিয়েছে, হায়দর হুসেনকেই ভোট দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু শেষ মুহূর্তে মমতা নিজে বিজেপি-র সঙ্গে মিলে হায়দরকে সমর্থনে রাজি হননি। তাই দীপেনের কাছে তাঁর ভোট বাতিল করার নির্দেশ যায়। তৃণমূল নেতা মুকুল রায়ের বক্তব্য, “কাউকেই ভোট না-দিতে দীপেনকে নির্দেশ দেওয়া হয়। দলীয় নির্দেশে ভোট বাতিল করা হয়েছে।” |
রাজ্যসভায় খাতা খুলল টিআরএস |
তেলঙ্গানা-বিতর্ক ছাপ ফেলল রাজ্যসভা ভোটে। ক্রস-ভোটিং-এর জেরে রাজ্যসভায় খাতা খুলল তেলঙ্গানা রাষ্ট্র সমিতি (টিআরএস)। শুক্রবার অন্ধ্রপ্রদেশে রাজ্যসভা ভোটে টিআরএস প্রার্থী কে কেশব রাওকে ১৭ জন দলীয় বিধায়ক ভোট দিয়েছেনই। এ ছাড়াও তেলঙ্গানা অঞ্চল থেকে নির্বাচিত কয়েক জন কংগ্রেস বিধায়ক ও সিপিআই বিধায়কের ভোট পেয়েছেন তিনি। অন্ধ্রপ্রদেশে কংগ্রেসের তিন ও তেলুগু দেশমের দুই প্রার্থীও জিতেছেন। ওড়িশায় ভোটে জিতেছেন কংগ্রেস নেতা ও আইপিএল চেয়ারম্যান রঞ্জীব বিশওয়াল ও বিজেডি-র তিন প্রার্থী। বিজেডি-র ছয় বিধায়ক তাঁদের উদ্বৃত্ত ভোট দল-সমর্থিত নির্দল প্রার্থী রঘুনাথ মহাপাত্রকে দিতে রাজি হননি। ফলে, বিশওয়ালের কাছে হেরে গিয়েছেন মহাপাত্র। |
|
|
|
|
|