|
|
|
|
মিলছে না অর্থনীতির হাল শোধরানোর ইঙ্গিত
নিজস্ব সংবাদদাতা • নয়াদিল্লি
৭ ফেব্রুয়ারি |
লোকসভা ভোটের আগে কংগ্রেস নেতৃত্বের জন্য ফের দুঃসংবাদ। কেন্দ্রীয় সরকারেরই পূর্বাভাস বলছে, চলতি আর্থিক বছরেও বৃদ্ধির হার ৫ শতাংশের গণ্ডি পার হতে পারবে না। যার অর্থ, ইউপিএ-জমানায় পরপর দু’বছর আর্থিক বৃদ্ধির হার ৫ শতাংশের নীচে থাকবে। অর্থনীতি পরিচালনায় মনমোহন সরকারের ব্যর্থতার অভিযোগ তুলতে নরেন্দ্র মোদী নতুন হাতিয়ার পেয়ে যাবেন।
এমনিতেই ভোটের বছরে মনমোহন সরকারকে চড়া মূল্যবৃদ্ধি, ডলারের তুলনায় টাকার পতন, শিল্পে মন্দগতির মতো ত্রিমুখী সমস্যার সঙ্গে যুঝতে হচ্ছে। তার মধ্যেই আজ পরিসংখ্যান মন্ত্রক জানিয়েছে, চলতি অর্থ বছরে অর্থাৎ ২০১৩-’১৪-য় আর্থিক বৃদ্ধির হার ৪.৯% পৌঁছতে পারে। অবশ্য গত আর্থিক বছরে বৃদ্ধির হার ছিল এক দশকে সর্বনিম্ন, মাত্র ৪.৫%। সেখান থেকে কিছুটা উন্নতির পিছনে একমাত্র কারণ কৃষিতে উৎপাদন বৃদ্ধির হার বাড়া। কিন্তু পূর্বাভাস অনুযায়ী কারখানা বা খনিতে উৎপাদন বাড়া তো দূরের কথা, কমছে। কারখানায় উৎপাদন কমার অর্থ নতুন চাকরির সুযোগও তৈরি হয়নি।
গত বছর বাজেট পেশের সময়ে অর্থমন্ত্রী পি চিদম্বরম দাবি করছিলেন, চলতি বছরে বৃদ্ধির হারকে তিনি সাড়ে ৬ শতাংশেরও উপরে টেনে তুলতে পারবেন। তা বাস্তবায়িত হলে লোকসভা ভোটের প্রচারেও কংগ্রেস নেতৃত্বের কিছুটা সুবিধা হত। তারপরে তিনি নিজেই লক্ষ্যমাত্রা কমিয়ে ৫ শতাংশে নিয়ে আসেন। তা সত্ত্বেও সরকারি দাবিতে কোনও মহলেরই বিশেষ ভরসা ছিল না। এমনকী রিজার্ভ ব্যাঙ্কের তরফেও বলা হয়েছিল, কৃষিতে উৎপাদন বৃদ্ধি এবং রফতানির সামান্য উন্নতির ফলে চলতি আর্থিক বছরের দ্বিতীয়ার্ধের ফল কিছুটা ভাল হবে। কিন্তু শিল্পে মন্দগতি বজায় থাকবে। ২০১৪-’১৫ সালেই কিছুটা উন্নতি হতে পারে। কিন্তু মূল্যবৃদ্ধির মোকাবিলা এবং খনি ও পরিকাঠামো ক্ষেত্রে লগ্নি টানায় বাধা কাটাতে না-পারলে পাকাপাকি ভাবে অর্থনীতির হাল শোধরাবে না। আজ পরিসংখ্যান মন্ত্রকের অনুমান থেকেও স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে, অর্থনীতির হাল শোধরানোর ইঙ্গিত নেই। আনুমানিক হিসেব অনুযায়ী, কৃষিক্ষেত্রে বৃদ্ধির হার চলতি অর্থবর্ষে ৪.৬% পৌঁছবে। কিন্তু কারখানার উৎপাদন ০.২% হারে কমবে। একইভাবে খনির উৎপাদন ১.৯% হারে কমবে। পরিষেবা ক্ষেত্রে বৃদ্ধির হার থাকবে ৬.৯%।
স্বাভাবিক ভাবেই পরিসংখ্যান মন্ত্রকের আজকের আনুমানিক হিসেব দেখে বিস্মিত হননি শিল্পমহল বা বণিকসভার শীর্ষকর্তারা। বণিকসভা ফিকি-র সভাপতি সিদ্ধার্থ বিড়লা বলেন, “আমরা মনে করছিলাম, বৃদ্ধির হার ৪.৮ শতাংশে থাকবে। সে দিক থেকে এই অনুমান অপ্রত্যাশিত নয়। কারখানার উৎপাদনের মন্দগতি অর্থনীতির সার্বিক বৃদ্ধিতে প্রভাব ফেলছে। পরিষেবা ক্ষেত্রেও এর ধাক্কা লাগছে।” একই বক্তব্য সিআইআই-এর ডিরেক্টর জেনারেল চন্দ্রজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়েরও। তিনি বলেন, “কেনাকাটার পরিমাণ বাড়ছে না। বিনিয়োগ ও সরকারি খরচও কম হচ্ছে। তাই অর্থনীতির হাল শোধরানোর ইঙ্গিত এখনও মিলছে না।” অর্থনীতিবিদরা মনে করছেন, মূল্যবৃদ্ধিতে লাগাম পরাতে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক সুদ বাড়ানোর ফলেও শিল্পে প্রভাব পড়েছে।
২০০৫-’০৬ থেকে লাগাতার তিন বছর আর্থিক বৃদ্ধির হারকে ৯ শতাংশের উপরে ধরে রাখার হ্যাটট্রিক করেছিল মনমোহন সরকার। তারপরেই আন্তর্জাতিক অর্থনীতির মন্দার ধাক্কা লাগে দেশের অর্থনীতিতেও। তার সঙ্গে যোগ হয় মূল্যবৃদ্ধি মোকাবিলায় রিজার্ভ ব্যাঙ্কের চড়া সুদের হার। আন্তর্জাতিক অর্থনীতির মন্দা কাটতে দেরি হওয়াতেও সমস্যা তৈরি হয়েছিল। তা সত্বেও ভারতের বিরাট বাজারের বিপুল চাহিদা অর্থনীতির হাল ধরে রেখেছিল। কিন্তু এখন দেখা যাচ্ছে, সেই বাজারের চাহিদাও কমছে। সরকারি হিসেব বলছে, চলতি আর্থিক বছরে চাহিদার পরিমাণ মাত্র ৪.৪ শতাংশ হারে বাড়বে। গত বছর যা ছিল ৫.২ শতাংশ। ওয়াশিং মেশিন, রেফ্রিজারেটর, বৈদ্যুতিন পণ্যের মতো জিনিসপত্রের কেনাকাটা কমেছে। তার ফলে কারখানার উৎপাদনও কমেছে। সুদের হার, মূল্যবৃদ্ধি, জ্বালানির দাম বাড়ায় গাড়ির চাহিদাও কমেছে।
লোকসভা ভোটের আগে ১৭ ফেব্রুয়ারি অন্তর্বর্তী বাজেট পেশ করতে চলেছেন অর্থমন্ত্রী চিদম্বরম। সেখানে তিনি অর্থনীতিকে চাঙ্গা করতে বেশি মন দেন, না ভোটের দিকে তাকিয়ে জনমোহিনী নীতি ঘোষণা করে বাড়তি খরচের পথে হাঁটেন, সে দিকে তাকিয়ে রয়েছে শিল্পমহল। অর্থ মন্ত্রকের খবর, কারখানা ক্ষেত্রে উৎপাদনের চাকায় গতি আনতে উৎপাদন শুল্ক কমানো হতে পারে। শিল্পমহল মনে করছে, বিনিয়োগের ক্ষেত্রে এখনও স্পষ্ট নীতি নিয়ে টালবাহানা কাটাতে পারেনি কেন্দ্র। ফিকি সভাপতির মতে, “আগামী দিনে অর্থনীতিকে চাঙ্গা করতে হলে সুশাসন, স্পষ্ট নীতি প্রণয়ন এবং তার কার্যকরী রূপায়ণ প্রয়োজন।” সিআইআই-এর দাবি, পরিকাঠামো, শিল্প ও খনিতে নতুন লগ্নির পথে যে-সব বাধা রয়েছে, সেগুলি দ্রুত সরানোর ব্যবস্থা করুক সরকার। অ্যাক্সিস ব্যাঙ্কের মুখ্য অর্থনীতিবিদ সৌগত ভট্টাচার্যের মন্তব্য, “বৃদ্ধির হার ৫.২ বা ৫.৩ শতাংশের ঘরে পৌঁছবে কি না, তার অনেকটাই নির্ভর করছে কেন্দ্রে পরবর্তী সরকারের নীতির উপর। |
|
|
|
|
|