|
|
|
|
বনধের জন্য রাহুলকে না পেয়ে হতাশ রাঁচি
নিজস্ব সংবাদদাতা • রাঁচি
৭ ফেব্রুয়ারি |
কখনও নিরাপত্তার বেড়া টপকে পৌঁছে গিয়েছেন দর্শকদের মাঝে। কখনও গ্রামবাসীর ঘরে ঢুকে পড়েছেন খাওয়ার জন্য।
কংগ্রেস সহ-সভাপতি রাহুল গাঁধীর ভাবমূর্তি এমনটাই। ফলে আজও তাঁকে সেই মেজাজেই দেখা যাবে বলে ভেবেছিলেন অনেকে। কিন্তু রাজ্যে মাওবাদীদের ডাকা বনধ। তাই গোলমালের আশঙ্কায় নিরাপত্তা বেষ্টনীর মধ্যেই রাখা হল রাহুলকে। আজ ঝাড়খণ্ড সফরের সিংহভাগটাই রাহুল সারলেন চপারে চেপে। পথে নেমে গাড়িতে ঘুরলেন মাত্র কুড়ি কিলোমিটার। চেনা ভঙ্গিতে তাঁকে দেখতে না পেয়ে হতাশ হল জনতা।
প্রথমে কথা ছিল রাঁচি হয়ে রাহুল হেলিকপ্টারে হাজারিবাগ পৌঁছবেন। তার পরে সেখান থেকে রোড শো করে ফিরে আসবেন রাঁচি। কিন্তু মাওবাদীদের বনধের কারণে গত কাল রাতে এসপিজি রাহুলের রোড শো-এর পরিকল্পনা বাতিল করে দেয়। সভাস্থলও পাল্টাতে থাকে। ফলে সফরে রাহুল বেশির ভাগ সময়টাই ঘুরলেন হেলিকপ্টারে।
রাহুল এসে রোড শো করবেন, চেয়েছিলেন রাজ্যের কংগ্রেস নেতারাও। কারণ মাস খানেক আগেই এখানে চোখ ধাঁধানো অনুষ্ঠান করে গিয়েছেন বিজেপির প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী নরেন্দ্র মোদী। তবে সেখানে তাঁর সঙ্গে আম জনতার দূরত্ব ছিল। ফলে রাজ্য নেতারা চান, রাহুল মানুষের কাছে আসুন। কিন্তু নিরাপত্তার গেরোয় শেষ পর্যন্ত তা সম্ভব হল না। |
|
রাঁচির ওরমানজিতে সমর্থকদের মাঝে। যদিও বনধে গোলমালের আশঙ্কায়
নিরাপত্তার
কড়াকড়িতে অল্প মানুষই ছুঁতে পেরেছেন রাহুলকে।—নিজস্ব চিত্র। |
সকাল ১০টা ৫০-এ বিরসা চকে বিরসা মুণ্ডার মূর্তিতে মালা দিয়ে জনতার উদ্দেশে হাত নেড়েছিলেন কংগ্রেস সহ-সভাপতি। তার পরে ১১টা ১০ থেকে প্রায় সওয়া এক ঘণ্টার অনুষ্ঠানে ডোরাণ্ডার বিলাসবহুল হোটেলে আদিবাসী মহিলাদের সঙ্গে আলাপচারিতায় যোগ দেন রাহুল। মহিলারা ‘রাহুল ভাইয়া’ বলে সম্বোধন করেন। “আপনারা রাজনীতিতে আসুন। আপনাদের অনেকেরই বিধায়ক বা সাংসদ হওয়ার যোগ্যতা রয়েছে। আপনারা যা ভাবতে পারেন, গোটা দেশ তা ভাবতে পারে না। কারণ আপনারা মন থেকে ভাবেন।” মনরেগা প্রকল্পে সরকার মানুষের পরিবর্তে যন্ত্রের ব্যবহার বেশি করছে বলে রাহুলের কাছে অভিযোগ করেন আদিবাসী মহিলারা। রাজ্য সরকারকে বলে পঞ্চায়েতের ক্ষমতা বাড়ানো হবে বলে রাহুল তাঁদের প্রতিশ্রুতি দেন।
টেলিভিশনে এই সব দেখে উৎসাহিত হন অনেকেই। তাই হাজারিবাগ, রামগড়, কুজু, বা ওরমানঝিতে জাতীয় সড়কে ভিড় ক্রমশ বাড়ছিল। গত কয়েকদিন এখানে দলের তরফে রাহুলের রোড শো নিয়ে জোর প্রচারও হয়েছিল।
রোড শো করতে না পারলেও হাজারিবাগে নেমে ফিরতি সফরটা তাঁর মতো করেই শুরু করতে চেয়েছিলেন রাহুল। দেড়টা নাগাদ হাজারিবাগের পুলিশ প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের মাঠে তাঁর চপার নামে। তখনই তাঁর সঙ্গে হাত মেলাতে বা মালা হাতে এগিয়ে আসেন অনেকে। রাহুলও এক সময়ে গাড়ির দরজা খুলে পাদানির উপরে দাঁড়িয়ে তাঁদের সঙ্গে হাত মেলান। এসপিজির কড়া নজরদারিতে তা বেশি ক্ষণ চলতে দেওয়া হয়নি। রাহুল নিজেই এক এসপিজি অফিসারকে ধমক দিয়ে বলেন, “আরে ইয়ার, মালা তো লেনে দো।” একমাত্র এখানেই রাহুলের সঙ্গে ৪০-৫০ জন হাত মেলানোর সুযোগ পেয়েছেন।
এর পরে চপার রওনা হয় রামগড়ের কুজুর দিকে। দুপুর দু’টোর পরে কুজুর মুরপা গ্রামের মাঠে নামেন রাহুল। দশ মিনিট ছিলেন সেখানে। আগে থেকেই জনতা থেকে রাহুলের দূরত্ব তৈরি করে দিয়েছিল এসপিজি। কংগ্রেসের কর্মীদের সঙ্গে হাত মিলিয়ে রাহুল মাইকে বলেন, “কিছু মানুষ আজ বনধ ডেকেছেন। তাই রোড শো বাতিল করতে হয়েছে। আপনাদের লড়াই আমি লড়ব।” আবারও জানান, কংগ্রেস লোকসভা ভোটে জিতে এলে প্রধানমন্ত্রী হতে তিনি রাজি।
কুজু থেকে উড়ে গিয়ে সওয়া তিনটে নাগাদ ওরমানঝির এসএস হাইস্কুলের মাঠে রাহুলের চপার নামে। গাড়ির কাচ সামান্য নামিয়ে হাত নেড়ে রাঁচির দিকে বেরিয়ে যান রাহুল। যাঁরা গাড়ির কাছাকাছি পৌঁছতে পেরেছিলেন, তাঁরা ‘রাহুলজী প্রণাম’ বলে চিৎকার করেছেন। গাড়ির ভিতরেই হাত জোড় করে তাঁদের প্রতি নমস্কার জানান রাহুল। তবে কোথাওই মানুষের কথা শোনেননি তিনি। ওরমানঝির খটঙ্গা আর লেটুয়া এই দু’গ্রামের মানুষ এসেছিলেন সমস্যার কথা জানাতে। ওই দু’টি গ্রামকে ‘আদর্শ গ্রাম’ তৈরি করা হবে বলে দু’বছর ধরে শিলান্যাস হয়ে পড়ে রয়েছে। কাজ হয়নি। গ্রামের বাসিন্দা সুনীলকুমার মাহাতোর কথায়, “শুনেছিলাম উনি আমাদের সমস্যার কথা জানতে আসছেন। তাই সকাল থেকে রাস্তায় দাঁড়িয়ে আছি। কিন্তু পুলিশ তো গাড়ি পর্যন্তই যেতে দিল না। এই সফরের মানে কী!”
শেষে রাজ্যের সংখ্যালঘুদের সঙ্গেও রুদ্ধদ্বার বৈঠক করেন রাহুল। বিজেপির নাম না করে তিনি সেখানে বলেন, “আমি রাজনীতিতে হিংসার বিরোধী। ভারতবর্ষে এটা চলতে পারে না। মোহনদাস কর্মচন্দ গাঁধী শুধু অহিংস আন্দোলনেই ইংরেজদের দেশ থেকে তাড়াতে পেরেছিলেন।”
আজ রাহুলের সঙ্গে দেখা করেন রাঁচির বেশ কয়েক জন বাঙালি। রাজ্যে বাংলা ভাষাকে দ্বিতীয় রাজভাষা ঘোষণা সত্ত্বেও তা কার্যকর হয়নি। রাহুলের কাছে সেই অভিযোগ জানান তাঁরা। বাঙালি সমাজের তরফে চঞ্চল চট্টোপাধ্যায় বলেন, “এখানে ২৬% বাঙালি থাকা সত্ত্বেও আমরা অবহেলিত। রাজ্য সংখ্যালঘু কমিশনে আমাদের প্রতিনিধিকেও রাখা হয়নি।” |
|
|
|
|
|