আদালত নির্দেশ দিয়েছিল, অটোয় চার জনের বেশি যাত্রী নেওয়া যাবে না। সে কথা জানিয়ে দিয়েছিলেন পরিবহণমন্ত্রী মদন মিত্রও। তবু সেই নির্দেশকে তোয়াক্কা না-করে পাঁচ জনে ফিরে এল দমদম-নাগেরবাজার রুটের অটো। ওই রুটের অটো ইউনিয়নের নেতা ও অটোচালকেরা সাফ বলছেন, যে ভাবে জ্বালানি গ্যাসের দাম বেড়েছে, তাতে ভাড়া না বাড়িয়ে ওই রুটে অটো চালাতে গেলে এক জন বেশি যাত্রী নেওয়া ছাড়া উপায় নেই। যুক্তি আছে আরও একটি। ওই রুটে এত ভিড় হয় যে, পাঁচ জন করে তুললে কিছুটা কম সময় নষ্ট হয় যাত্রীদেরও।
শুক্রবার সকালে অফিসটাইমে নাগেরবাজার মোড়ে দমদম রুটের অটোর সামনে রোজের মতোই লম্বা লাইন। ওঠার সময়ে চালকেরা যাত্রীদের বলে দিচ্ছিলেন পাঁচ জন করে বসতে। এক জন করে যাত্রীকে বসানো হচ্ছিল চালকের ডান দিকে। কিছুটা অবাকই হচ্ছিলেন নিত্যযাত্রীরা। কারণ, আশপাশের রুটগুলিতে পাঁচ জন করে তুললেও এত দিন ওই রুটে চার জনই নিচ্ছিলেন চালকেরা। |
দমদম-নাগেরবাজার রুটে এ ভাবেই অবাধে পাঁচ জন যাত্রী নিয়ে চলছে অটো। ছবি: বিশ্বনাথ বণিক। |
সম্প্রতি নজরদারি বাড়ায় শহরের পথে যাত্রী তোলার ক্ষেত্রে অটো কিছুটা নিয়ম মেনে চললেও শহরতলিতে নজরদারির অভাবে যাত্রী-সংখ্যা নিয়ে অনিয়মের অভিযোগ ছিলই। যেমন নাগেরবাজার-বিমানবন্দর, শ্যামনগর-বাগুইআটি রুটে পাঁচ জন করেই যাত্রী নেওয়া হচ্ছিল। কিন্তু এর ব্যতিক্রম ছিল নাগেরবাজার-দমদম রুট। নিময় মেনে সেখানে চার জন করেই যাত্রী তুলছিলেন চালকেরা। এ বার সেই নিয়ম তাঁরা নিজেরাই ভেঙে দিলেন। এই রুটের অটো ইউনিয়নের আহ্বায়ক তারক সাহা বলেন, “যখন গ্যাসের অটো চালু হয়, তখন গ্যাসের দাম ছিল লিটার-পিছু ২৩ টাকা। এখন দাম হয়েছে ৬২ টাকা। আমরা অর্ধেক বেলা অটো চালাই। গ্যাসের দাম দিয়ে, ট্যাক্স দিয়ে, অটোর মাসিক কিস্তি দিয়ে আমাদের পিঠ দেওয়ালে ঠেকেছে। ভাড়া না বাড়িয়ে এক জন করে বেশি যাত্রী তুললে তা-ও কিছুটা সুরাহা হবে। তাই বাধ্য হয়েই এক জন যাত্রী বেশি তুলতে হচ্ছে।” পরিবহণমন্ত্রী মদন মিত্র যে চার জনের বেশি যাত্রী নেওয়া যাবে না বলেছিলেন, তা-ও তিনি জানেন। আদালতের নির্দেশের কথাও জানেন। তিনি অবশ্য পরিষ্কার বলছেন, “মন্ত্রী নিয়ম করেছেন ঠিকই, কিন্তু তিনি কি আমাদের ভাতের হাঁড়ির খবর জানেন? আইন মেনে চলতে গেলে আমাদের পেট চলবে না।”
ওই রুটের চালক শম্ভু সাহা বলেন, “আশপাশের সব রুটের অটোই তো পাঁচ জন তোলে। আমরা কেন তুলব না? ভাড়া তো সেই ছ’টাকাই রেখেছি। যাত্রীদের সঙ্গে জোর করে কিছু করছি না।” এই রুটে অটো ইউনিয়নের প্রেসিডেন্ট প্রবীর পাল বলেন, “অফিসটাইমে দমদম-নাগেরবাজার রুটের লাইন দমদম আন্ডারপাস ছাড়িয়ে যায়। যাত্রীরাই অনেক সময়ে অনুরোধ করেন পাঁচ জন তুলতে। তা হলে লাইনটা দ্রুত এগোয়। বাস্তব পরিস্থিতির কথা মাথায় রেখেই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।”
এ রুটের নিত্যযাত্রীরা জানান, পাঁচ জন করে যাত্রী তুললে, যে যাত্রী চালকের ডান দিকে বসছেন, তাঁকে বেশি বিপজ্জনক ভাবে যেতে হয়। এক নিত্যযাত্রী শ্যাম বসু বলেন, “চার জন যাত্রীর নিয়মটাই ভাল ছিল। ডান দিকে বসা যাত্রীর প্রায় গা ঘেঁষে উল্টো দিকের গাড়ি চলে যায়। ফলে ডান দিকে বসে থাকা যাত্রীকে যথেষ্টই ঝুঁকি নিয়ে যেতে হয়।” যদিও কোনও কোনও নিত্যযাত্রী আবার দ্রুত পরিষেবা দেওয়ার জন্য পাঁচ জন করে যাত্রী তোলার সিদ্ধান্তকে ফেলে দিচ্ছেন না। এক যাত্রীর কথায়, “অফিস থেকে ক্লান্ত হয়ে বাড়ি ফেরার পথে যখন দেখি অটোর দীর্ঘ লাইনে পঞ্চাশ জনের পরে দাঁড়াতে হচ্ছে, তখন খুবই বিরক্ত লাগে। পাঁচ জন তুললে যদি কিছুটা তাড়াতাড়ি ফেরা যায়, তবে খারাপ লাগে না।” ব্যারাকপুর কমিশনারেটের ডিসি ট্রাফিক দেবাশিস বেজ বলেন, “স্থানীয় পরিস্থিতির কথা বিবেচনা করে কয়েকটি রুটের অটোয় পাঁচ জন যাত্রী নেওয়া হয় বলে শুনেছি। তবে কেউ যদি এই নিয়ে কোনও অভিযোগ করেন, তা হলে আমরা ব্যবস্থা নিই।”
এ দিকে অটোয় কোনও রকমেই পাঁচ জন যাত্রী চাপানো যাবে না বলে সাফ বক্তব্য পরিবহণমন্ত্রীর। তিনি বলেন, “অটোয় চার জন করেই যাত্রী নিতে হবে। এর বেশি যাত্রী তুললেই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” মদনবাবু আরও জানান, অটোর দাপট বন্ধ করতে কোনও ইউনিয়নকেই রেয়াত করা হবে না। লেকটাউন, দমদম, রাজারহাট, সল্টলেক থেকে অটোযাত্রীদের প্রচুর অভিযোগ আসে। তাই এই এলাকাকে একটি বিশেষ জোন হিসেবে দেখা হচ্ছে। আগামী ১৪ তারিখ বিধাননগর কমিশনারেটর পদস্থ পুলিশ কর্তাদের সঙ্গে অটোচালকদের বৈঠক হবে।
|