অনেক হাসিমুখ দেখতে পাচ্ছি, নবান্নে বললেন ব্রিটেনের মন্ত্রী
ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরনের সফরসঙ্গী হয়ে গত নভেম্বরে কলকাতায় এসেছিলেন তিনি। এ বার নিজেই ১৬ সদস্যের এক বাণিজ্য প্রতিনিধিদল নিয়ে ফের এলেন কলকাতায়। এবং ব্রিটিশ মন্ত্রী গ্রেগরি বার্কার বললেন, রাজ্যে সত্যিই বদল এসেছে। মানুষের সুখী ও হাসিমুখ দেখতে পাচ্ছেন তিনি।
বণিকসভা সিআইআই এবং ব্রিটিশ ডেপুটি হাইকমিশন আয়োজিত এক আলোচনাসভায় যোগ দিতে শুক্রবার কলকাতায় আসেন ব্রিটিশ সরকারের জলবায়ু পরিবর্তন ও ভারতের সঙ্গে বাণিজ্যিক সম্পর্ক বিষয়ক দফতরের ভারপ্রাপ্ত মন্ত্রী বার্কার। সঙ্গে এসেছেন ব্রিটিশ সরকারের অনুদান প্রদানকারী সংস্থা ‘ডিপার্টমেন্ট ফর ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট (ডিএফআইডি) ইন্ডিয়ার’ প্রধান স্যাম শার্প। মন্ত্রী জানান, এ রাজ্যের সঙ্গে ব্যবসায়িক সম্পর্ক মজবুত করতেই তাঁর এই সফর। বার্কারের কথায়, “দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার অঙ্গ হিসেবে এ রাজ্যের উন্নয়নের শরিক হতে চাই আমরা। রাজ্য সরকারের স্বপ্ন বাস্তবায়িত করতে পরিকাঠামো, পরিবেশ, শিক্ষার মতো ক্ষেত্রে বহু ব্রিটিশ সংস্থার দক্ষতা ও অভিজ্ঞতা রয়েছে।”
শুক্রবার এক আলোচনাসভায় ব্রিটিশ মন্ত্রী গ্রেগরি বার্কার। —নিজস্ব চিত্র।
এ দিন নবান্নে অর্থ ও শিল্পমন্ত্রী অমিত মিত্রের সঙ্গে বৈঠক করেন বার্কার। সেখানেও তিনি বলেছেন, রাজ্যের আর্থিক বৃদ্ধি বেশ নজরকাড়া। আর্থিক সংস্কারের পথে সরকার এগিয়ে চলেছে। বার্কারকে প্রশ্ন করা হয়, রাজ্য প্রশাসনে পরিবর্তন নিয়ে তাঁর মনোভাব কী? জবাবে বার্কার বলেন, “অনেক দিন ধরেই এ শহর সম্পর্কে জানি। এখন দেখছি, এখানকার মানুষের মধ্যে প্রত্যাশা তৈরি হয়েছে। সর্বত্র কিছু করে দেখানোর চেষ্টা। সত্যিই বদল চোখে পড়ছে। মানুষের সুখী ও হাসিমুখ লক্ষ করছি।”
বস্তুত, রাজ্যে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ক্ষমতায় আসা ইস্তক তাঁর সঙ্গে সুসম্পর্ক গড়তে আগ্রহ দেখিয়েছেন পশ্চিমী দেশগুলির একাধিক শীর্ষ নেতা। ২০১২-য় মহাকরণে এসেছিলেন তৎকালীন মার্কিন বিদেশসচিব হিলারি ক্লিন্টন। মার্কিন রাষ্ট্রদূত ন্যান্সি পাওয়েলও এসেছেন। ক্যামেরনও কমনওয়েলথ শীর্ষ বৈঠকে যাওয়ার পথে আচমকা সফরসূচি পাল্টে চেন্নাইয়ের বদলে কলকাতায় চলে এসেছিলেন। ঘুরে দেখেছিলেন হাওড়া স্টেশন-সহ নানা ঐতিহ্যবাহী জায়গা। এমনকী রাস্তায় নেমে গরম ডালবড়াও খেয়েছিলেন। আর মমতার সঙ্গে বৈঠকে রাজ্যে বিনিয়োগ নিয়ে যেমন আগ্রহ প্রকাশ করেছিলেন, তেমনই মুখ্যমন্ত্রীকে লন্ডনে আমন্ত্রণও জানিয়ে গিয়েছিলেন।
এ বার ক্যামেরনের মন্ত্রিসভার সদস্যের মুখে রাজ্যের প্রশংসা শুনে স্বভাবতই খুশি অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্র। তিনি বলেন, “যাত্রা হল শুরু। এই প্রতিনিধিদলের সঙ্গে আলোচনার ভিত্তিতে বেশ কিছু লগ্নির ক্ষেত্র প্রস্তুত হবে। পরিকাঠামো উন্নয়ন, শিক্ষা ও দক্ষ মানবসম্পদ তৈরির ক্ষেত্রে ব্রিটিশ সংস্থার লগ্নি আসছে। বন্দর, অভ্যন্তরীণ জলপথ পরিবহণ ব্যবস্থা, বিকল্প শক্তি ও জল পরিশোধনেও মোটা টাকা বিনিয়োগের সম্ভাবনা রয়েছে।” রাজ্যের বিদ্যুৎমন্ত্রী মণীশ গুপ্তের সঙ্গেও বৈঠক করে ব্রিটিশ প্রতিনিধিদলটি। অপ্রচলিত শক্তি ক্ষেত্রে ব্রিটিশ সংস্থাগুলি প্রযুক্তিগত সহায়তা করতে চায় বলে এ দিনের বৈঠকে বার্কার জানিয়েছেন।
ডিএফআইডি ইন্ডিয়ার প্রধান স্যাম শার্প জানান, আর্থিক উন্নয়ন ও দারিদ্র দূরীকরণের লক্ষ্যে তাঁদের কাজ জারি থাকবে। তবে আর্থিক অনুদানের ক্ষেত্রে নতুন পন্থা নেওয়া হচ্ছে। তিনি বলেন, “সরকারি প্রকল্পে আর্থিক অনুদানের বদলে আমরা বেসরকারি সংস্থাকে ঋণ দেব কিংবা সেই সংস্থায় লগ্নি করব।” স্বাস্থ্য, বিদ্যুৎ, ত্রিস্তর পঞ্চায়েতের মতো ক্ষেত্রে এ ধরনের লগ্নি ভারতে ইতিমধ্যেই হয়েছে। এ বার ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পোদ্যোগীদের পুঁজি জোটাতে আগামী পাঁচ বছরে বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠানে ঋণ বা ইকুইটিতে ২৫ কোটি পাউন্ড বিনিয়োগ করতে চায় ডিএফআইডি। ওই ঋণ পরিশোধ হলে তা আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলিতে ফিরে আসবে। ফের তা পূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলিতেই বিনিয়োগ করা হবে।
পরিবেশ রক্ষার ক্ষেত্রেও কলকাতাকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেবে ব্রিটেন। কলকাতা পুর এলাকার কার্বন দূষণের পরিমাণ কমাতে অনুদান দেবে ক্যামেরন সরকার। তবে তার আগে ২০১৪ সালের সেপ্টেম্বরের মধ্যে মহানগরীর বাতাসে কার্বনের পরিমাণ কমাতে একটি রোডম্যাপ তৈরি করতে হবে। বার্কার বলেন, “প্রাথমিক ভাবে এই কাজ সন্তোষজনক হলে ব্রিটিশ সরকার আরও সহায়তা করবে।” মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায় জানান, বিশেষজ্ঞ কমিটি গড়ে প্রকল্পের অগ্রগতি যাচাই করা হবে। পরিবেশ সংক্রান্ত রোডম্যাপ তৈরিতে প্রযুক্তিগত সহায়তার আশ্বাসও দিয়েছে ব্রিটেন। রাজ্যের নগরোন্নয়ন সচিব দেবাশিস সেন জানান, শহরের উন্নয়নে যে কোনও ধরনের নতুন ভাবনা-চিন্তা ও সংশ্লিষ্ট দক্ষতা গ্রহণ করতে আগ্রহী রাজ্য সরকার।
বার্কারকে পঞ্জাবে অপারেশন ব্লু-স্টার সংক্রান্ত বিতর্ক নিয়ে প্রশ্ন করা হয়। এ বিষয়ে তাঁদের সরকারের ভূমিকা ‘ন্যূনতম’ বলে মন্তব্য এড়িয়ে যান তিনি। তবে ভারতে ভোডাফোনের কর বিতর্ক সম্পর্কে তিনি জানান, এ ধরনের বিষয় যত দ্রুত নিষ্পত্তি হয়, ব্যবসার জন্য ততই ভাল।

পুরনো খবর:
 
 
 


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.