এক যে ছিল রাজা, তার ভারী দুখ...
রাজার খুব অসুখ। তাই রাজার মনও ভাল নেই। পারিষদেরা উদ্বিগ্ন। কেমন করে সারবে রাজার অসুখ? ভিন্দেশি এক চিকিৎসক এসে নিদান দিলেন, এক সুখী মানুষের জামা পড়লে তিনি সেরে উঠবেন। অনেক খুঁজে দেখা গেল, ‘যার ভাণ্ডারে রাশি রাশি সোনাদানা ঠাসাঠাসি’, সে-ও সুখী নয়। সুখী বরং গাছতলার এক ভবঘুরে। একমাত্র তার কাছেই দুনিয়াটা এক মজার জায়গা।
আজ থেকে প্রায় একশোরও বেশি বছর আগে ‘রাজার অসুখ’ গল্পটা লিখেছিলেন সুকুমার রায়। আর সত্তরের দশকে এমনই এক নাটক লিখেছিলেন ফরাসি নাট্যকার পিয়ের ফুরে। সেটির নাম ‘লা শোমিজ দ্যা’নোম ওরো’ বা ‘এক সুখী মানুষের জামা’। আর এই গল্পেই গাঁটছড়া বাঁধছেন সুকুমার রায় আর পিয়ের ফুরে, এক বঙ্গ-ফরাসি নাটকের মাধ্যমে। সামনের সপ্তাহ মেলবন্ধনের সাক্ষী হবে মহানগর। উদ্যোগে কলকাতায় ফরাসি দূতাবাসের সাংস্কৃতিক শাখা ‘আলিয়ঁস ফ্রঁসেজ দ্যু বেঙ্গাল’।
‘আলিয়ঁস ফ্রঁসেজ দ্যু বেঙ্গাল’-এর ডিরেক্টর স্তেফান আমালির বললেন, “কলকাতায় থিয়েটার চর্চাটা খুব ভাল সময়ের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে। ভাবলাম, বাংলা ও ফ্রান্সকে নাটকের মাধ্যমে মেলালে কেমন হয়! জনপ্রিয় কমেডির চাহিদা তো সব সময়েই বেশি। তাই আমাদের এই নাটক ‘লা শোমিজ দ্যা’নোম ওরো’। যে নাটকটা হচ্ছে, সেটা দ্বিভাষিক বাংলা ও ফরাসিতে।”
নাটকের বাঙালি ও ফরাসি অভিনেতারা ‘আলিয়ঁস ফ্রঁসেজ দ্যু বেঙ্গাল’-এর সঙ্গে যুক্ত। কেউ সেখানে পড়েন, বা কাজ করেন। পরিচালনায় রয়েছেন ‘আলিয়ঁস ফ্রঁসেজ দ্যু বেঙ্গাল’-এর ফরাসি শিক্ষক অসিত রায়। নতুন অভিনেতারা তৈরি হয়েছেন এক কর্মশালার মাধ্যমে। ‘আলিয়ঁস ফ্রঁসেজ দ্যু বেঙ্গাল’ ও ‘বর্গি’ নামে এক সংস্থার যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত হয়েছিল সেই কর্মশালা। শিক্ষকের ভূমিকায় ছিলেন রুদ্রপ্রসাদ সেনগুপ্ত, আনন্দ লাল, সব্যসাচী চক্রবর্তী, অশোক বিশ্বনাথন, চন্দন সেন প্রমুখ।
দ্বিভাষিক এই নাটকের নতুন অভিনেতাদের পড়ানো হয়েছে বাংলা, ফরাসি ও গ্রিক নাটকের ইতিহাস। পাঠ্যসূচিতে ছিলেন শেক্সপিয়ার, সার্ত্র, মাইকেল মধুসূদন দত্ত, দীনবন্ধু মিত্র, দ্বিজেন্দ্রলাল রায়, গিরিশ ঘোষ,
শিশির ভাদুড়ী। সামনের সপ্তাহে আইসিসিআর-এ এই নাটকের সঙ্গে থাকবে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আনন্দ লালের পরিচালনায় সপ্তদশ শতকের ফরাসি নাট্যকার মোলিয়েরের ‘লো মালাদ ইম্যাজিন্যার’ বা ‘দ্য ইম্যাজিন্যারি ইনভ্যালিড’ নাটকটিও। সেটির কলাকুশলীরা হলেন যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীরা। |