কিছু বাড়ি বাড়ি বালতি দেওয়া হয়েছে ঠিকই, কিন্তু আবর্জনা সংগ্রহের কাজ সেই তিমিরেই, এমনই ছবি দাঁইহাট পুরসভার। গুসকরায় আবার পুরভোটের আগে কয়েকটি বাড়িতে বালতি দেওয়া হলেও, এখনও পুরসভার গুদামে পড়ে রয়েছে প্রায় ১৪ হাজার বালতি। ফলে বাড়ি বাড়ি আবর্জনা সংগ্রহ প্রকল্প শিকেয়।
কালনাতেও কিছুদিন আগে বাঁশি বাজিয়ে সকালে আবর্জনা সংগ্রহ শুরু হয়েছে। কিন্তু বাড়িতে বাড়িতে বালতি দেয়নি কালনা পুর কর্তৃপক্ষ। অন্য পুরসভাতে বাড়ি বাড়ি বালতি দেওয়া হলেও কালনাতে কেন বালতি দেওয়া হয়নি সে নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। পুরসভার কর্তারা অবশ্য আর্থিক সীমাবদ্ধতার কথা জানিয়েছেন।
জেলার গ্রামীণ এলাকায় ৬টি পুরসভার মধ্যে বর্ধমান ও কাটোয়াতে বেশ কয়েক বছর আগে থেকেই বাড়ি বাড়ি গিয়ে আবর্জনা সংগ্রহের পদ্ধতি চালু রয়েছে। কয়েক মাস আগে মেমারিতেও ওই প্রকল্প চালু হয়েছে। সেখানে এ রাজ্যের অন্যতম প্রাচীন পুরসভা দাঁইহাটে এবং ১৪ বছরের পুরসভা গুসকরাতে এই প্রকল্প চালুই করা হয়নি। বিভিন্ন পুরসভা সূত্রে জানা যায়, ‘সলিড ওয়েস্ট ম্যানেজমেন্ট’ প্রকল্পে সকালে বাড়ি বাড়ি গিয়ে পুরকর্মীদের আবর্জনা সংগ্রহ করার কথা। প্রকল্পের নিয়মে, প্রতিটি বাড়িতে লাল ও সবুজ রঙের দুটি করে বালতি দেবে পুরসভা। একটি বালতিতে সাধারণ বর্জ্য ও আর একটি বালতিতে চিকিৎসা-বর্জ্য ফেলা হবে। পুরকর্মীরা ওই দুটি বালতি থেকে বর্জ্য সংগ্রহ করে নির্দিষ্ট জায়গাতে ফেলবেন যাতে বৈজ্ঞানিক উপায়ে ওই বর্জ্য মাটিতে মিশে যায়। কিন্তু প্রকল্প চালু না হওয়ায় দাঁইহাট ও গুসকরাতে এখনও রাস্তা থেকে আবর্জনা সংগ্রহ করে পুরসভার নিকাশি বিভাগের কর্মীরা। বাসিন্দাদের অভিযোগ, ছুটি বা অন্য কোনও দিন কর্মীরা সাফাইয়ে না এলে রাস্তার উপরেই আবর্জনা পড়ে থাকে। পরিবেশ দূষিত হয়।
কালনাতে অবশ্য পুর কর্তৃপক্ষ কোনও বালতি না দেওয়ায় সাধারণ বা চিকিৎসা বর্জ্য আলাদা করার প্রশ্ন নেই। সিপিএমের কালনা জোনাল কমিটির সদস্য স্বপন বন্দ্যোপাধ্যায়ের দাবি, যে উদ্দেশ্য নিয়ে এই পদ্ধতি চালু করা হয়েছে, সেটিই ব্যাহত হচ্ছে। কালনা পুরসভার সদ্য প্রাক্তন উপ-পুরপ্রধান দেবপ্রসাদ বাগও স্বীকার করেছেন, তাঁরা বাড়ি বাড়ি বালতি সরবরাহ করে উঠতে পারেননি। তাঁর কথায়, “কয়েক মাস আগেই ওই পদ্ধতি চালু করেছি। আর্থিক কারণে এখনও বাড়ি বাড়ি বালতি সরবরাহ করে ওঠা যায়নি।” |
আগাম সতকর্তা |
• ১ লিটার জলে কপারহাইড্রক্সাইড ২.৫ গ্রাম, ক্লোরোথ্যালোনিল ২ গ্রাম ও ম্যানকোজেব ২.৫ গ্রাম গুলে স্প্রে করতে হবে।
• স্প্রে করার সময়ে গাছের সমস্ত অংশ যাতে ভেজে সেই খেয়াল রাখতে হবে।
• সংক্রমণ ছড়িয়ে গেলে কিছু দিন রাসায়নিক সার ও অনুখাদ্য দেওয়া বন্ধ রাখতে হবে।
• গাছের বৃদ্ধি অনুযায়ী ৯০-১০০ লিটার জল স্প্রে করতে হবে। |
|
তৃণমূলেরই আরেক পুরসভা গুসকরায় আবার আড়াই বছর আগে বালতি কিনেও ওই প্রক্রিয়া চালু করা যায়নি। পুরসভা সূত্রে জানা যায়, ২০১১ সালের মাঝামাঝি গুসকরার তৎকালীন পুরপ্রধান চঞ্চল গড়াই বাড়ি বাড়ি আবর্জনা সংগ্রহের জন্য কয়েক লক্ষ টাকা খরচ করে প্রায় সাড়ে ১৪ হাজার বালতি কেনেন। পুরভোটের আগে মাত্র কয়েকশো বালতি বাড়ি বাড়ি বিলি করা হলেও বাকি ১৪ হাজারের কাছাকাছি বালতি পুরসভার গুদামে পড়ে নষ্ট হচ্ছে। এ নিয়ে ক্ষোভ রয়েছে তৃণমূলের অন্দরে। গুসকরা পুরসভার তৃণমূলের সদস্য নিত্যানন্দ চট্টোপাধ্যায়ের অভিযোগ, “আড়াই বছর আগে বালতিগুলো কেনা হয়েছে। কি উদ্দেশে এই বালতিগুলো কেনা হয়েছিল, তাও আমাদের কাছে পরিস্কার নয়। সব গুদামে পড়ে নষ্ট হচ্ছে।” কিন্তু বালতি বিক্রি করে আবর্জনা সংগ্রহের প্রক্রিয়া চালু করা গেল না কেন? তৃণমূলের গুসকরা শহরের সভাপতি তথা প্রাক্তন পুরপ্রধান চঞ্চল গড়াই বলেন, “ভেবেছিলাম বর্জ্য রাখার জন্য প্রতিটি বাড়িতে বালতি দেওয়া হবে। কিন্তু নানা কারণে তা হয়নি। এ ছাড়া আমরা পরিকাঠামোও গড়ে তুলতে পারিনি।” তৃণমূল সূত্রে জানা যায়, কোন ওয়ার্ডে কত বালতি সরবরাহ করা হবে এবং আবর্জনা সংগ্রহের জন্য নিকাশি কর্মী নিয়ে দলের নেতাদের মধ্যে দ্বন্দ্ব থাকায় ওই প্রক্রিয়া গুসকরা শহরে চালু করতে পারেনি পুরসভা। সিপিএমের অভিযোগ, তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বে জনগণের টাকায় কেনা বালতি গুদামে পড়ে নষ্ট হচ্ছে। গুসকরার পুর পরিষেবাও ভেঙে পড়েছে। তবে পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, ৩১ জানুয়ারী কাউন্সিলরদের সভায় ঠিক হয়েছে, গুদামে পড়ে থাকা বালতি নষ্ট না করে শহরের গরীব মানুষদের মধ্যে বিলি করে দেওয়া হবে।
দাঁইহাট পুরসভা অবশ্য গুদাম থেকে বেশিরভাগ বালতি বের করে শহরের কয়েকটি ওয়ার্ডে মাস আটেক আগেই বাড়ি বাড়ি বিলি করে দিয়েছে। কিন্তু এখনও পর্যন্ত বাড়ি বাড়ি আবর্জনা সংগ্রহের প্রক্রিয়া চালু করতে পারেনি। দাঁইহাট পুরসভার কংগ্রেসের পুরপ্রধান সন্তোষ দাস বলেন, “কর্মী অপ্রতুল। কর্মী নেওয়ার অনুমোদন চেয়ে পাঠানো হয়েছে সংশ্লিষ্ট দফতরে। আশা করি ফেব্রুয়ারির শেষ দিকে বাড়ি বাড়ি আবর্জনা সংগ্রহ করার কাজ শুরু করা হবে।” যদিও পুরপ্রধানের দাবির সঙ্গে একমত নন কংগ্রেস থেকে তৃণমূলে যোগ দেওয়া দাঁইহাটের কাউন্সিলর সুদীপ্ত রায়। তিনি বলেন, “পশ্চিমবঙ্গ কর্মসংস্থান প্রকল্প থেকে কর্মী ও সুপারভাইজার নিয়োগ করে ওই প্রক্রিয়া চালু হবে বলে ঠিক হয়েছিল। সুপারভাইজার নিয়োগ হলেও বাড়ি বাড়ি আবর্জনা কিন্তু নেওয়া হচ্ছে না।” এখন নানা চাপানউতোর পেরিয়ে প্রাপ্য পুর পরিষেবা কবে মিলবে, সেই আশাতেই রয়েছেন পুরবাসীরা। |