অনেক জায়গায় কাজ দেওয়া হয়েছে ৭০ দিন। কোথাও আবার সেই সংখ্যা তিন বা ছয়। একশো দিনের প্রকল্পে কাজ দেওয়ার ব্যাপারে জেলার নানা এলাকার মধ্যে এমন ফারাক নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করলেন জেলাশাসক সৌমিত্র মোহন।
বর্ধমানের সংস্কৃতি লোকমঞ্চে এক বিশেষ সভায় জেলাশাসক বলেন, “১০০ দিনের প্রকল্পে সকলকে ন্যূনতম ১৫ দিন কাজ দিতে হবে। কোথাও ৭০ দিন কাজ দেওয়া হয়েছে। কোথাও আবার ৩০, ৩২, ২২ দিন কাজ দেওয়া গিয়েছে। কোথাও আবার তিন দিন, ছ’দিন কাজ দেওয়া গিয়েছে। কিন্তু পঞ্চায়েতগুলি ন্যূনতম ১৫ দিন করে কাজ দিতে না পারলে উপভোক্তা পরিবার রাষ্ট্রীয় স্বাস্থ্য বিমা যোজনার হেল্থ কার্ড পাবেন না। আর্থিক বছর শেষ হতে চলেছে। তাই মার্চের মধ্যে এই প্রকল্প কতটা এগিয়ে নিয়ে যাওয়া যায় দেখতে হবে।”
পঞ্চায়েতের প্রধান, উপপ্রধানদের জেলাশাসক বলেন, “১০০ দিনের প্রকল্পের জন্য আপনাদের প্রায় সকলেই ৩০-৪০ লক্ষ টাকা করে চাইছেন। আমরা ৭-৮ লক্ষ টাকা করে দিতে পারছি। কিন্তু তা বলে কাজ বন্ধ করিয়ে হাত গুটিয়ে বসে থাকবেন না। কাজ করাতে থাকুন, আমরা বকেয়া দিয়ে দেব।” তাঁর আরও বক্তব্য, “যে সব পঞ্চায়েত ৭০ দিন কাজ দিতে পেরেছে, তাদের চেষ্টা করতে হবে তা ১০০ দিনে এগিয়ে নিয়ে যেতে।”
আলোচনা সভায় জেলাশাসক প্রশ্ন ১০০ দিনের কাজে মহিলাদের যোগদান সম্পর্কেও প্রশ্ন তোলেন। তিনি বলেন, “এই প্রকল্পের কাজে মহিলাদের যোগদান কাগজে-কলমে অন্তত কম। অথচ, বিভিন্ন জায়গায় প্রকল্প পরিদর্শন করতে গিয়ে দেখছি, মাঠে মহিলাদের সংখ্যা অন্তত অর্ধেক। মনে হচ্ছে পুরষদের সঙ্গে যৌথ অ্যাকাউন্ট থাকার কারণে মহিলাদের সংখ্যা সে ভাবে ধরা পড়ছে না। রাজ্য থেকে নতুন করে নির্দেশ এসেছে, প্রতিটি মহিলার নাম আলাদা করে নথিভুক্ত করতে হবে মাস্টাররোলে। তাঁদের জন্য আলাদা ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট খুলতে হবে।” তিনি যোগ করেন, “পরিবার পিছু কম কাজ, ন্যূনতম ১৫ দিন করে কাজ না দেওয়া, মাস্টাররোলে মহিলাদের নাম কম থাকা ইত্যাদি নিয়ে আমাদের সমালোচিত হতে হচ্ছে রাজ্য পর্যায়ে। অথচ, আমরা এই প্রকল্পে যথেষ্ট ভাল কাজই করছি।”
বিডিও, পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি, পঞ্চায়েতের প্রধানদের উদ্দেশ্যে জেলাশাসকের বার্তা, আগে কাজ শেষ করা হবে, তার পরে পরিদর্শন, শেষে ইউটিলাইজেশন সার্টিফিকেট দেওয়ার ধারণা ছাড়তে হবে। তাঁর মতে, “কাজে গতি আনতে কোনও প্রকল্পের অর্ধেক বা সিকি ভাগ হয়ে গেলেই ইউটিলাইজেশন সার্টিফিকেট দিয়ে দিতে হবে।” দ্রুত কাজ করার জন্য পরের কিস্তির টাকা পেতে হলে এরকম করতে হবে বলে তাঁর মত।
সভায় কয়েক জন জেলা পরিষদ, পঞ্চায়েত সমিতি ও পঞ্চায়েত সদস্যেরা জানান, নির্মল ভারত অভিযানের অঙ্গ হিসেবে পারিবারিক শৌচাগার নির্মাণের জন্য সম্প্রতি দশ হাজার টাকা মঞ্জুর করা হয়েছে। আগে তা এর চেয়ে অনেকটাই কম ছিল। কিন্তু এই টাকা দিয়েও পরিবার পিছু শৌচাগার তৈরি করা সম্ভব হচ্ছে না বলে দাবি করেন ওই সদস্যেরা। জেলাশাসক বলেন, “যদি ঠিকাদারদের দিয়ে ওই টাকায় কাজ না করা যায়, তাহলে স্বনির্ভর গোষ্ঠী, গ্রামের ছেলেমেয়েদের ওই কাজের প্রশিক্ষণ দিয়ে শৌচাগার নির্মাণ করানো হবে।”
জেলাশাসক আরও বলেন, “গত আর্থিক বর্ষে পারিবারিক শৌচাগার নির্মাণের জন্য দশ হাজার টাকা মঞ্জুর করা হয়েছিল। তবে তার পরে পঞ্চায়েত ভোট-সহ নানা কারণে বেশি শৌচাগার গড়া হয়নি। সেপ্টেম্বর থেকে এ পর্যন্ত চার-পাঁচ মাসে প্রায় ৫০ হাজারের বেশি শৌচাগার নির্মাণ হয়েছে। তবে আমরা ঠিক করেছিলাম, চলতি বছর মার্চের মধ্যে বর্ধমানকে ‘নির্মল জেলা’ বলে ঘোষণা করা হবে। ফলে, এই কাজে যেমন করে হোক গতি আনতে হবে।” |