ঘন কুয়াশায় নাবি ধসার প্রকোপ জেলায়
লুর নাবি ধসা রোগ দেখা দিয়েছে জেলার বেশ কিছু জায়গায়। পাতায় প্রথমে বাদামী ও কালো ছোপ, পরে ধীরে ধীরে ঝিমিয়ে পড়ছে গাছ। কালনা, মেমারি, পূর্বস্থলী ১, জামালপুর, খণ্ডঘোষ-সহ বহু জায়গাতেই আলু গাছের এমন হাল বলে চাষিদের দাবি। কৃষি দফতর অবশ্য জানিয়েছে, এখনও ওই রোগ বড় আকার নেয় নি। তবে চাষিরা সতর্ক না হলে ক্ষতির মুখে পড়তে হতে পারে বলেও তাদের দাবি।
আপাতত জেলার কোথাও আলু চাষ ৬০ দিন পেরিয়েছে, কোথাও বা গাছের বয়স তারও কম। চাষিদের দাবি, রাতে ঘন কুয়াশা পড়তেই গাছে এই রোগ দেখা যাচ্ছে। প্রথমে গাছের পাতায় বাদামী ও কালো ছোপ দেখা দিচ্ছে, পরে তা বৃন্ত ও কাণ্ডে ছড়িয়ে পড়ছে। পরে জমিতেই ঝিমিয়ে পড়ছে গাছ। কালনা ১ ব্লকের সুলতানপুর, বেগপুর, সিমলন, বাঘনাপাড়া প্রভৃতি এলাকাতেও নাবি ধসা রোগের প্রকোপ দেখা দিচ্ছে। সিমলন এলাকার চাষি জগবন্ধু ঘোষ বলেন, “এ বার আলু গাছের বৃদ্ধি ভালই ছিল। দিনকয়েক আগে মাঠে গিয়ে দেখলাম, গাছের পাতায় ছোপ ছোপ দাগ। বেশ কিছু পাতা তুলে এনে মহকুমা কৃষি দফতরের আধিকারিকদের দেখাই।” জগবন্ধুবাবু জানান, আধিকারিকেরাই জানিয়ে দেন, গাছ নাবি ধসা রোগে আক্রান্ত। মেমারির চাষি সহিদুল শেখের আশঙ্কা, “আগেও অনেকবার এই রোগে আলুর ফলন কমে গিয়েছে। এ বারও তেমনটা হলে জেলার লক্ষ লক্ষ চাষির মাথায় হাত পড়বে।” বাঘনাপাড়া পঞ্চায়েতের এক আলু চাষি মতিলাল ঘোষেরও দাবি, “দিন সাতেক আগেও জমিতে পুষ্ট গাছ ছিল। কিন্তু নাবি ধসার প্রকোপে বেশিরভাগ গাছই মরতে বসেছে।”
জমিতেই শুকিয়ে গিয়েছে আলুগাছ। —নিজস্ব চিত্র।
নাবি ধসা রোগের কারণ হিসেবে কৃষি বিশেষজ্ঞেরা মূলত দু’টি বিষয়কে চিহ্নিত করেছেন।
, দেরিতে আলুর চাষ।
, সপ্তাহ দু’য়েক ধরে ঘন কুয়াশা। এমনিতেই এ বার পুজোর আগে ও পরে জেলা জুড়ে প্রচুর বৃষ্টি হয়েছে। ফলে বহু জমিতেই জল জমে যায়। সেই জমিকে আলু চাষের উপযোগী করতেই অনেকটা সময় চলে যায় বলে চাষিদের দাবি। চাষিরা জানান, অন্যান্য বার নভেম্বর মাসে আলু চাষ শুরু হয়। কিন্তু এ বার চাষ শুরুই হয়েছে ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহে। বিশেষজ্ঞদেরও অনুমান, দেরি করে চাষ শুরু করাই নাবি ধসা রোগ ছড়ানোর অন্যতম কারণ।
তবে মাস দেড়েক আগে নাবি ধসা রোগের আশঙ্কায় ব্লক এবং পঞ্চায়েত স্তরে লিফলেট বিলি করে চাষিদের সতর্ক করেছিল কৃষি দফতর। জমিতে আগাম কী কী প্রতিষেধক প্রয়োজন, তা বলা ছিল ওই লিফলেটে। কালনা মহকুমা কৃষি দফতরের সহ-কৃষি অধিকর্তা পার্থ ঘোষ বলেন, “ভিজে ও স্যাঁতসেতে আবহাওয়ায় এই রোগের প্রকোপ বাড়ে। গত দু’সপ্তাহ ধরে সন্ধ্যার পর থেকেই ঘন কুয়াশা থাকায় আলু গাছের এই হাল। তবে দিনের বেলায় রোদের দেখা মেলায় এখনও পর্যন্ত রোগ খুব একটা ছড়াতে পারেনি। কিন্তু চাষিদের সতর্ক থাকতে হবে।” জেলার সহ-কৃষি অধিকর্তা (শস্য সুরক্ষা) সুপ্রিয় ঘটক জানান, এখনও পর্যন্ত জামালপুর, খণ্ডঘোষ ও কালনার বেশ কিছু অঞ্চলে নাবি ধসার লক্ষণ দেখা গিয়েছে। তবে ডিসেম্বরে এই রোগের সম্বন্ধে গ্রামে-গ্রামে প্রচার চালানোয়, চাষিরা সতর্কতা অবলম্বন করতে পেরেছেন।
নাবি ধসা রোগ আটকাতে বেশ কিছু ওষুধ প্রয়োগের পরামর্শ দিয়েছেন কৃষি বিশেষজ্ঞেরা। তাঁরা জানান, নাবি ধসা আক্রান্ত জমিতে সাইমক্সানিল এবং ম্যানকোজেব অথবা মেটালক্সিল এবং ম্যানকোজেব অথবা ফেনামিডোন এবং ম্যানকোজেবের মিশ্রণ স্প্রে করতে হবে। প্রতিটি ওষুধের মিশ্রণ প্রতি লিটার জলে ২ গ্রাম করে প্রয়োগ করতে হবে। ওষুধ স্প্রে করার সময় লক্ষ রাখতে হবে, গাছের সমস্ত অংশ যাতে ভেজানো হয়। কৃষি বিশেষজ্ঞেরা মনে করেন নাবি ধসা রোগের লক্ষণ দেখা দিলে চাষিদের বেশ কয়েকটি সতর্কতা অবলম্বন করা প্রয়োজন। যার মধ্যে রয়েছে ভেলির নালা এক তৃতীয়াংশের বেশি ডুবিয়ে সেচ না দেওয়া। পুরোপুরি ভেলি ডুবিয়ে সেচ দিলে ক্ষতিকারক ছত্রাক জমির এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে দ্রুত চলে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। বিশেষজ্ঞেরা জানিয়েছেন, দুপুর ১২টা থেকে ১টা সেচ দেওয়ার উপযুক্ত সময়। ধসার সংক্রমণ রুখতে কিছু দিন রাসায়নিক সার এবং অনুখাদ্য দেওয়া বন্ধ রাখতে হবে। গাছের বৃদ্ধি অনুযায়ী বিঘা প্রতি ৯০ থেকে ১০০ লিটার জল স্প্রে করতে হবে। তাঁদের পরামর্শ, স্প্রে করার আগে ছত্রাক নাশকের সঙ্গে আঠা মেশানোর প্রয়োজন। যাতে গাছের পাতা, কাণ্ডে দীর্ঘক্ষণ লেগে থাকে স্প্রে করার ওষুধ।
এছাড়া যে সব জমিতে এখনও নাবি ধসার লক্ষণ দেখা যায়নি, সেখানেও সতর্কতা প্রয়োজন বলে মনে করেন কৃষি বিশেষজ্ঞেরা। আগাম সতর্কতা হিসেবে কপারহাইড্রক্সাইড ২.৫ গ্রাম, ক্লোরোথ্যালোনিল ২ গ্রাম এবং ম্যানকোজেব ২.৫ গ্রাম প্রতি লিটার জলে গুলে স্প্রে করলে চাষিরা উপকৃত হবেন বলে জানান তাঁরা।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.