অটো চলাচলের অনুমতি চেয়ে মহকুমা প্রশাসন ও রাজ্য পরিবহণ দফতরে আর্জি জানিয়েছে আইএনটিটিইউসি অনুমোদিত আসানসোল মহকুমা মোটর ট্রান্সপোর্ট ইউনিয়ন। আসানসোল মিনিবাস আ্যাসোসিয়েশনের দায়ের করা মামলার জেরে এই শিল্পাঞ্চলে প্রায় আট বছর ধরে অটো চলাচলের অনুমতি দেওয়া হচ্ছে না। তবে পরিস্থিতি বিচার করে যে সব রাস্তায় বাস চলে না সেখানে অটো চলাচলের অনুমতি দেওয়া হলে তাদের আপত্তি নেই বলে মহকুমা প্রশাসনকে জানিয়েছে মিনিবাস আ্যাসোসিয়েশন।
যে সব রাস্তায় বাস চলে, সেখানে অটোর চলাচল নিয়ে নানা এলাকাতেই চালকদের মধ্যে বিবাদ লেগে থাকে। আসানসোলে অটো ও বাসের চালক-কর্মীদের মধ্যে বচসা, হাতাহাতি হয়েছে বহু বার। থানা-পুলিশ পর্যন্ত গড়িয়েছে এই ধরনের অনেক ঘটনা। এই প্রেক্ষিতে ২০০৬ সালে আসানসোল মিনিবাস আ্যাসোসিয়েশন শিল্পাঞ্চলে অটো চলাচলের বৈধতাকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে হাইকোর্টে মামলা দায়ের করে। তখন থেকেই আদালতের নিষেধাজ্ঞায় এখানে অটো চলাচলের বৈধ অনুমতি দিচ্ছে না মহকুমা পরিবহণ সংস্থা। তা বলে আসানসোল মহকুমায় অটো চলছে না, তা অবশ্য নয়। পুরুলিয়া, বাঁকুড়া, এমনকী ঝাড়খণ্ড থেকে পারমিট তৈরি করে এনে মহকুমার বিভিন্ন প্রান্তে বেআইনি ভাবে চলছে অটো। |
আসানসোলে অনুমোদন ছাড়াই চলে বেশির ভাগ অটো। —নিজস্ব চিত্র। |
সম্প্রতি রাজ্যের নানা এলাকায় অটোর দৌরাত্ম্যের অভিযোগ উঠেছে একের পর এক। এই ধরনের ঘটনা ঘটেছে আসানসোলেও। কিন্তু এই সব অটোর কোনও নথিপত্র পুলিশ-প্রশাসনের কাছে না থাকায় তাদের খুঁজে বের করা যাচ্ছে না বলে মনে করছেন অনেকে। আইএনটিটিইউসি অনুমোদিত মোটর ট্রান্সপোর্ট ওয়ার্কার্স ইউনিয়নের সম্পাদক রাজু অহলুয়ালিয়ার বক্তব্য, “কোনও অটো চালকের বিরুদ্ধে যদি যাত্রীদের হয়রান করার অভিযোগ ওঠে, তবে তাকে পরে ধরা যাচ্ছে না। শাস্তিও দেওয়া যাচ্ছে না। কারণ, তারা অনুমতি ছাড়াই চলাচল করছে।” তাই অটোর অনুমতি দিলে যাত্রীদের সুরক্ষা বাড়বে বলে মনে করছেন তিনি।
আসানসোল থেকে অটো চলাচলের অনুমোদন দেওয়া হলে স্থানীয় চালকেরা এখান থেকেই পারমিট নেবেন। তাতে সরকারের আয় বাড়ার সঙ্গে এলাকার বেকার যুবকদের আয়ের পথও সুগম হবে বলে মনে করছেন রাজুবাবু। তিনি জানান, এই শিল্পাঞ্চলে প্রায় সাত হাজার অটো চলাচল করে। যার মধ্যে মাত্র ছ’শো অটো বৈধ। সেগুলি ২০০৬ সালের আগেই আসানসোল থেকে পারমিট নিয়েছিল। বাকি অটোগুলি পুরুলিয়া, বাঁকুড়া, ঝাড়খণ্ড থেকে অনুমতিপত্র এনে চালানো হচ্ছে। মহকুমা পরিবহণ সংস্থার এক আধিকারিক জানান, মিনিবাস আ্যসোসিয়েশনের আপত্তিতে এই অনুমোদন আসানসোল থেকে দেওয়া যাচ্ছে না।
আসানসোল মিনিবাস অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক সুদীপ রায়ের দাবি, মহকুমায় প্রায় সাড়ে চারশো মিনিবাস চলে। প্রতিটি বাসে গড়ে তিন জন করে কর্মী কাজ করেন। নির্দিষ্ট রুটের বাইরে মিনিবাস চলাচল করতে পারে না। অথচ, এই সব রাস্তায় লাগামছাড়া অটো চলায় পাল্লা দিয়ে প্রতিযোগিতা বাড়ছে, মিনিবাসের আয় কমছে। সুদীপবাবু বলেন, “আমরাও চাই, এলাকার বেকার যুবকদের আয়ের পথ সুগম হোক, সরকারের আয় বাড়ুক। কিন্তু মিনিবাসের ক্ষতি করে নয়। তাই মহকুমা প্রশাসনকে জানিয়েছি, যে সব রাস্তায় মিনিবাস চলে না, সেখানে অটো চালানোর অনুমতি দিলে আমাদের আপত্তি নেই।” সুদীপবাবুর এই মতামতকে সমর্থন করেছেন রাজুবাবু। মিনিবাসের রুট ছাড়া অন্য রাস্তায় অটো চলাচলের অনুমতি দিক প্রশাসন, চান তিনিও।
আসানসোলের মহকুমাশাসক অমিতাভ দাস জানান, দু’পক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। |