সাত জন এআই থাকার কথা আছেন এক জন। ছ’জন এসআইয়ের জায়গায় এক তিন। নেই অ্যাকাডেমিক জেলা বিদ্যালয় পরিদর্শক (মাধ্যমিক), নেই মহকুমা বিদ্যালয় পরিদর্শক, নেই সেকেন্ডারি এআই। খালি পড়ে সাতটি করণিক, টাইপিস্ট, রেকর্ড কিপার পদ।
এই ভাবেই দীর্ঘ দিন ধরে চলছে জেলা বিদ্যালয় পরিদর্শক (মাধ্যমিক)-এর দফতর। শূন্যপদে কর্মী অফিসার চেয়ে শিক্ষা সচিব থেকে শুরু করে কমিশনার অফ স্কুল এডুকেশনকে জেলা বিদ্যালয় পরিদর্শক একাধিক বার চিঠি পাঠিয়েছেন। কিন্তু এই ব্যাপারে রাজ্য শিক্ষা দফতরের হেলদোল নেই। রাজ্যের শিক্ষা দফতর শূন্য পদে কর্মী-অফিসার না পাঠানোয় মালদহ জেলা বিদ্যালয় পরিদর্শক-এর দফতরের কাজ মুখ থুবড়ে পড়েছে। হাজারেরও বেশি নবনিযুক্ত শিক্ষকের অ্যাপ্রুভ্যাল আটকে। অনেক শিক্ষক অবসরকালীন নথি পাচ্ছেন না, আটকে প্রোমোশন। কর্মী ঘাটতির সুযোগ নিয়ে বহু শিক্ষক অতিরিক্ত বেতন তুলছেন। যাদের এটা দেখার কথা সেই বিভাগে কোনও কর্মী অফিসার নেই। জেলার ৫৫৮ স্কুলে সাড়ে ৯ হাজার শিক্ষকদের কাজ করতে হিমসিম খাচ্ছেন জেলা বিদ্যালয় পরিদর্শক (মাধ্যমিক) ও তাঁর অফিসের কর্মী আধিকারিকেরা।
জেলা বিদ্যালয় পরিদর্শকের জন্য বরাদ্দ কোনও গাড়ি নেই। মাঝেমধ্যে তিনি বাসে চেপে কয়েকটি বিদ্যালয় পরিদর্শন করেন। কিন্তু এখন কাজের চাপে পরিদর্শন কার্যত বন্ধ রয়েছে। জেলা বিদ্যালয় পরিদর্শক (মাধ্যমিক) আশিস চৌধুরী বলেন, “তিন-চার বার রাজ্যের শিক্ষা সচিব ও কমিশনার অফ স্কুল এডুকেশনকে শূন্য পদে কর্মী অফিসার চেয়ে চিঠি পাঠিয়েছি। কিন্তু আজ পর্যন্ত কাউকে পাঠানো হল না। যেখানে জেলায় দুই হাজার শিক্ষককে নিয়োগ করা হচ্ছে, সেখানে কি জেলা বিদ্যালয় পরিদর্শক অফিসে ৮-১০ জন অফিসার কর্মীকে পাঠানো যায় না। বহু শিক্ষক বাড়তি বেতন তুলে যাচ্ছেন, অথচ অফিসার কর্মীর অভাবে তা ধরা যাচ্ছে না। মামলা দেখার অফিসার না থাকায় একের পর এক মামলা সরকার হেরে যাচ্ছে। যে ভাবে কাজের চাপ বাড়ছে তা আর সহ্য করা যাচ্ছে না।”
মালদহ জেলা বিদ্যালয় পরিদর্শক দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, ১৯৮৫ সালে জেলার ১৫টি ব্লকে ১৬০টি স্কুল ছিল। সে সব স্কুলের শিক্ষক শিক্ষা কর্মীদের বেতন-সহ অন্য নথি দেখার জন্য বিদ্যালয় পরিদর্শক অফিসে এক জন বিদ্যালয় পরিদর্শক, সাত জন এ আই, ছয় জন এস আই পদের সৃষ্টি করা হয়েছিল। করণিক ছিল ২০ জন। প্রায় তিন দশকে জেলায় স্কুল বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫৫৮টি। শিক্ষকের সংখ্যা এখন সাড়ে নয় হাজারের বেশি। অথচ জেলা বিদ্যালয় পরিদর্শক অফিসে অফিসার-কর্মীর সংখ্যা আর বাড়নো হয়নি। উল্টে যত জন কর্মী অফিসার ছিলেন তার মধ্যে ৬ জন এ আই নেই। তিন এস আই নেই। এক জন এআই ও তিন জন এস আই গোটা জেলার সব স্কুলের নানা ধরনের কাজ জোড়াতালি দিয়ে সামাল দিচ্ছে। তৃণমূল শিক্ষাসেল জেলা সভাপতি স্বপন মণ্ডল বলেন, “এই সমস্যা দীর্ঘ দিনের। কর্মী আর অফিসারের অভাবে জেলা পরিদর্শক অফিসের কাজ প্রচণ্ড মার খাচ্ছে। শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মীরা হয়রান হচ্ছেন। শূন্য পদে কর্মী অফিসার পাঠাতে সংগঠনের পক্ষ থেকে শিক্ষা দফতরের কর্তাদের সঙ্গে কথা হয়েছিল। কিন্তু কেন কর্মী অফিসার পাঠানো হচ্ছে না বুঝতে পারছি না।” তিনি জানান, মনে হয় মার্চ মাসের মধ্যে রাজ্য সরকার শূন্য পদে কর্মী অফিসার পাঠাবে। |