আমনের ফলন মার খেয়েছে। পাটের দামও গত বছরের থেকে অনেকটা কম। তারমধ্যেই ধসায় আক্রান্ত হয়ে কোচবিহারের বিস্তীর্ণ এলাকায় আলুর ফলন মার খাওয়ায় চাষিদের মাথায় হাত পড়েছে। এবার ক্ষতিগ্রস্ত ওই আলু চাষিদের কৃষি ঋণ মুকুবের দাবিতে আন্দোলনে নামলেন কৃষকরা। বৃহস্পতিবার কোচবিহার জেলা আলু, পাট, ধান চাষি সংগ্রাম সমিতির সদস্যরা নষ্ট আলু গাছ নিয়ে জেলাশাসকের দফতরের সামনে বিক্ষোভ দেখান হয়। এই পরিস্থিতিতে আজ, শুক্রবার কোচবিহারে আসছেন কৃষি প্রতিমন্ত্রী বেচারাম মান্না।
তৃণমূল কৃষক সংগঠনের নেতারা জানিয়েছেন, ধসার ক্ষতি নিয়ে মন্ত্রীকে সব জানানো হবে। কোচবিহারের জেলাশাসক মোহন গাঁধী বলেন, “ধসায় ক্ষয়ক্ষতির রিপোর্ট উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে আগেই পাঠানো হয়েছে।” কৃষি দফতরের কোচবিহারের আধিকারিক বিপ্লব ঘোষ বলেন, “সমীক্ষা করে জেলায় প্রায় সাড়ে ছয় হাজার হেক্টর আলু চাষের এলাকা ক্ষতি হয়েছে বলে রিপোর্ট দেওয়া হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্থ কৃষকের সংখ্যা প্রায় ২৪ হাজার। ওই ক্ষতিগ্রস্থ চাষিদের বিকল্প ভুট্টা চাষের সুবিধা দিতে মিনিকিট দেওয়ার কাজ শুরু হয়েছে।” |
ধসায় ধাক্কায় ক্ষতিগ্রস্তদের বিক্ষোভ জেসাশাসকের
দফতরের সামনে। ছবি তুলেছেন হিমাংশুরঞ্জন দেব।
|
জেলা আলু, পাট, ধান চাষি কমিটি অভিযোগ করেছে, জেলায় ২৮ হাজার হেক্টর এলাকায় আলু চাষ হয়েছে। তারমধ্যে অন্তত ২০ হাজার হেক্টর এলাকার আলু খেত ধসায় নষ্ট হয়ে গিয়েছে। অথচ কৃষি দফতরের হিসাব বলছে, জেলায় ধসা সংক্রমণে ক্ষতিগ্রস্থ আলু চাষের জমির এলাকা ৬ হাজার হেক্টর। এছাড়াও জেলায় প্রায় ২ লক্ষ চাষির কৃসান ক্রেডিট কার্ড থাকায় তাদের কমবেশি বীমার সুবিধে পাওয়ার সম্ভবনা রয়েছে। অথচ জেলায় আরও লক্ষাধিক আলু চাষির ওই কার্ড নেই। কৃষি ঋণ মুকুব করা হলে সকলেই উপকৃত হবেন। কমিটির সম্পাদক নৃপেন কার্জি বলেন, “সরকারি হিসাবে পুরো ক্ষতির তথ্য নেই। কৃষি ঋণ মুকুব না হলে চাষিরা পথে বসবেন।”কৃষি দফতর সূত্রেই জানা গিয়েছে, পর্যাপ্ত বৃষ্টি না হওয়ায় কোচবিহারে এবার আমনের ফলন মার খেয়েছে। অন্যবার যেখানে প্রায় ২ হাজার টাকা দামে প্রতি মণ পাট বিক্রি হয়। এবার তা কমে প্রায় অর্ধেক দাঁড়িয়েছে। গত মরসুমে আলুর চড়া বাজার দামের কথা মাথায় রেখে তাই জেলায় আলু চাষে বাড়তি উৎসাহ তৈরি হয়। কিন্তু তাতেও ধসা সংক্রমণের জেরে উদ্বেগ বেড়েছে।
একই রকম অবস্থা ইসলামপুরের আলু চাষিদের। আজ, শুক্রবার স্থানীয় বিধায়ক তথা রাজ্যের জনশিক্ষা ও গ্রন্থাগার মন্ত্রী আবদুল করিম চৌধুরীর সঙ্গে দেখা করবেন আলু চাষিরা। বিক্ষোভে সামিল চাষিরা জানাচ্ছেন, ইসলামপুর দাড়িভিট-সহ বহু এলাকায় আলুর গাছের পাতা কুকড়ে গিয়ে পচন ধরছে। পচন ধরেছে কাণ্ডেও। ঘন কুয়াশা ও প্রবল ঠান্ডায় গাছের অবস্থা খারাপ। বহু চাষি লক্ষাধিক টাকার ঋণ নিয়ে চাষ করেছেন। তাঁদের রাস্তায় বসা ছাড়া উপায় নেই। ইসলামপুর ব্লকের কৃষি আধিকারিক সনাতন দাস জানিয়েছেন, ব্লকের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আলুগাছে ধসা রোগের খবর আসছে। রোগ ঠেকাতে চাষিদের নানা পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। |