বুধবার রাতে এক বধূর শরীরে কেরোসিন তেল ঢেলে আগুন লাগিয়ে দেওয়ার অভিযোগ ওঠেছে তাঁর স্বামীর বিরুদ্ধে। অগ্নিদগ্ধ অবস্থায় ছবি রাম (২৪) নামের ওই বধূকে মালদহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হলে বৃহস্পতিবার সকালে তিনি মারা যান। মালদহ থানার সাহাপুরের সেতু মোড়ের কাছে ঘটনাটি ঘটেছে। পুলিশ জানিয়েছে, ঘটনায় সঞ্জয় রামও জখম হয়েছেন। তাকেও মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে। পুলিশ প্রাথমিক তদন্তের পর জেনেছে, ওই দম্পতির তিন বছরের একটি কন্যা সন্তান রয়েছে। মেয়ের জন্মের পর থেকেই ওই মহিলার উপর অত্যাচার করা হত বলে অভিযোগ। অভিযোগ, বুধবার রাতে অত্যাচারের হাত থেকে বাঁচতে মেয়েকে নিয়ে বাপের বাড়ি চলে যাচ্ছিলেন ছবিদেবী। সেই সময় ঘটনাটি ঘটে। |
পুলিশ জানিয়েছে, মৃত মহিলার বাবা মালদহ থানায় জামাই সঞ্জয় রাম, তার মা রামবতি রাম, জা মুন্নি রামের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেছেন। মৃতার বাবা অশোক ঘোষের অভিযোগ, “নাতনি হওয়ার পর থেকে জামাই মেয়েকে প্রচন্ড মারধোর করত। অনেক বার মেয়ে পুড়িয়ে মারার চেষ্ঠা করেছিল জামাই। জামাইয়ের অত্যাচারের ভয়ে মেয়ে বহুবার নাতনিকে নিয়ে আমাদের বাড়ি চলে এসেছিল। বুধবারও আসছিল। জামাই মেয়েকে পুড়িয়ে মেরেছে।” আর ছবিদেবীর মা শকুন্তলাদেবী কাঁদতে কাঁদতে বলেন, “মারা যাওয়ার আগে আমার মেয়ে আমাকে বলেছে, সঞ্জয় আমার গায়ে কেরোসিন তেল ঢেলে আগুন লাগিয়েছে। আমি ওকে জাপটে ধরেছিলাম। সঞ্জয়ও জখম হয়েছে।” পুলিশ সুপার কল্যাণ মুখোপাধ্যায় বলেন, “মেয়ের বাবার অভিযোগের ভিত্তিতে তিনজনের বিরুদ্ধে বধূ হত্যার মামলা দায়ের করা হয়েছে। অভিযুক্তদের সবাইকে গ্রেফতার করা হবে। মূল অভিযুক্ত চিকিৎসাধীন।” |
শোকার্ত পরিজনেরা। বৃহস্পতিবার মালদহের বালুচরে মনোজ মুখোপাধ্যায়ের তোলা ছবি। |
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, চার বছর আগে মালদহ শহরের উত্তর বালুচর এলাকার বাসিন্দা অশোকবাবুর ছোট মেয়ে ছবির সঙ্গে মহানন্দা নদীর ওপারে সাহাপুর সেতু মোড়ের সঞ্জয় রামের বিয়ে হয়। সঞ্জয়বাবু মালদহ শহরের মুম্বই রোড়ে একটি ময়দার পাইকারি দোকানে কাজ করেন। বিয়ের একবছর পর তাদের একটি কন্যা সন্তান হয়। সাহাপুরের সেতু মোড়ের কাছে সঞ্জয় রামের বাড়ি। চারভাই একই জায়গায় থাকলেও সঞ্জয় রাম স্ত্রী ও কন্যা নিয়ে পাশেই আলাদা থাকত।
তার দাদা অনিল রাম বলেন, “রাতে চিৎকার শুনে বাইরে বার হয়ে দেখি, আমার ভাইয়ের স্ত্রীর গায়ে আগুন জ্বলছে। আমরা ছুটে গিয়ে আগুন নেভানোর চেষ্টা করি। কীভাবে তা লাগল জানি না।” মৃতার শাশুড়ি রামবতি রাম বলেন, “ছবি নিজের গায়ে নিজেই আগুন ধরিয়েছে। ছেলে কিছু করেনি। নাতনি হওয়ার পর ওদের মধ্যে গোলমাল হত এটা ঠিক।” |