দলের বিধায়কদের একাংশকে শেষ পর্যন্ত ধরে রাখা যাবে কি না তা নিয়ে আলোচনায় বৃহস্পতিবার দিন ভর সরগরম মালদহ ও জলপাইগুড়ির জনজীবন। রাত পর্যন্ত চেষ্টা করেও দলের দুই বিধায়কের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেননি দলের জেলা নেতৃত্ব। মালদহে অবশ্য আবু নাসের খান চৌধুরীকে নিয়ে ততটা উদ্বেগ দেখা যায়নি। জেলা কংগ্রেস সভাপতি মৌসম বেনজির নুর দাবি করেছেন, তাঁর মামা আবু নাসের খান চৌধুরী শেষ পর্যন্ত তৃণমূলে যোগ দেবেন না। লোকসভা ভোটের মুখে বিধায়কদের একাংশ দল বদলালে সমস্যা হবে না?
আরএসপি সূত্রের খবর, গত ৩ ফেব্রুয়ারি কলকাতা রওনা দেওয়ার আগে অনন্তবাবু ময়নাগুড়ি জোনাল দফতরে বসে নানা দায়িত্ব সামলেছেন। দলের নেতা ও কর্মীদের সঙ্গে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে বৈঠক করেছেন। দলের কৃষক সংগঠন সংযুক্ত কিষানসভার জলপাইগুড়ি জেলা সম্পাদক তথা প্রাক্তন বিধায়ক বাচ্চামোহন রায় বলেন, “আমরা ঘুণাক্ষরে টের পাইনি। অনন্তবাবু তলে তলে এত বড় সিদ্ধান্ত নিয়ে বসে আছেন। কলকাতায় যাওয়ার আগে দলীয় দফতরে এসেছেন। কাজ করেছেন। কই তেমন কিছু তো দেখলাম না। দশরথ তিরকির ঘটনাও জানতাম না।” এর পরেই প্রাক্তন বিধায়কের স্বীকারোক্তি, অনন্তবাবু এ ভাবে চলে গেলে দলের ক্ষতি হবে।” সাংসদ তথা দলের জলপাইগুড়ি জেলা সম্পাদকমণ্ডলী সদস্য মনোহর তিরকি বলেন, “এ সব কী শুনছি বুঝতে পারছি না। ওঁদের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেছিলাম। লাভ হয়নি।”
অথচ দলের নেতারা না জানলেও অনন্তবাবুরা গত ২৯ জানুয়ারি থেকে তৃণমূলের সর্বভারতীয় সম্পাদক মুকুল রায়ের সঙ্গে কয়েক দফায় বৈঠক করেন বলে আরএসপির নিচুতলার কর্মীদের অনেকেই স্বীকার করেছেন। সেখানে দলত্যাগের সিদ্ধান্ত পাকা হয়। এর পরে বৃহস্পতিবার সকালে নবান্নে যান অনন্ত ও দশরথ। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে দেখা করে দলত্যাগের সিদ্ধান্তও জানান বলে দল সূত্রে খবর। অনন্তবাবু বলেন, “দিদিকে বলেছি সিপিএমের দাদাগিরির জন্য ময়নাগুড়ির উন্নয়ন কেমন করে ব্যাহত হয়েছে।” তিনি জানান, ২ ফেব্রুয়ারি তৃণমূল ভবনে একান্ত আলোচনার সময় মুকুলবাবু তাঁর কাছে দাবির কথা জানতে চান। ওই সময় তিনি ময়নাগুড়িকে পুরসভা ঘোষণার আবেদন জানান। ওই আবেদন শুনে মুকুলবাবু জেলাশাসকের সঙ্গে যোগাযোগ করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দেন বলে তৃণমূল সূত্রের খবর। তৃণমূল সূত্রের দাবি, সব ঠিকঠাক থাকলে এ মাসের ৮ তারিখে অনন্তবাবু তৃণমূলে যোগ দিচ্ছেন। ১১ ফেব্রুয়ারি মালবাজারে মুখ্যমন্ত্রীর সভায় মঞ্চে থাকবেন তিনি। ওই সভা থেকে মুখ্যমন্ত্রী ময়নাগুড়িকে পুরসভা ঘোষণা করতে পারেন।
বিধানসভায় আরএসপির ৭ জন সদস্য রয়েছে। তাঁর মধ্যে জলপাইগুড়ি জেলা থেকে ৩ জন অনন্তবাবু এবং দশরথবাবু তৃণমূলে যোগ দিলে জেলায় ওই দলের একমাত্র বিধায়ক থাকবেন বীরপাড়া-মাদারিহাট এলাকার কুমারী কুজুর। এই পরিস্থিতিতে অনন্তবাবুদের বিধায়ক পদ থেকে ইস্তফা দিতে হবে। আরএসপির রাজ্য কমিটির সদস্য দেবব্রত ঘোষ বলেন, “যা শুনছি সেটা সত্যি হলে ওঁদের পদত্যাগ করতে হবে।” বৃহস্পতিবার নবান্ন থেকে বেরিয়ে টেলিফোনে অনন্তবাবু বলেন, “আমাকে পদত্যাগ করতে হবে। লোকসভা নির্বাচনের সঙ্গে এলাকায় উপ নির্বাচন হবে।” কেন তৃণমূলে যাচ্ছেন? বিধায়কের সাফ জবাব, “দলের প্রতি আমার অভিমান নেই। জনপ্রতিনিধি হয়ে কাজ করতে পারছি না। এর চেয়ে বড় যন্ত্রণা কি হয়ে?”
মালদহে আবু নাসের খান চৌধুরীর দলবদলের সম্ভাবনা নিয়ে সমালোচনা শুরু হয়েছে। জেলা কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক নরেন্দ্রনাথ তেওয়ারি এই দিন অভিযোগ করে বলেন, “আবু নাসের খান চৌধুরী বরাবরই কোতুয়ালিতে থেকে কোতুয়ালির বিরুদ্ধে গিয়েছে। ক্ষমতার লোভে যে কংগ্রেসে ছেড়ে তৃণমূল কংগ্রেসে যোগ দেওয়া নতুন কিছু নয়। উনি তৃণমূলে যোগ দিতেই পারেন।” আবু নাসের খান চৌধুরী জেলা কংগ্রেসের সহ সভাপতি ছিলেন। জানুয়ারিতে এআইসিসি আবু হাসেম খান চৌধুরীকে সরিয়ে মৌসমকে জেলা কংগ্রেস সভাপতি পদে বসালে তৃণমূলে যোগ দেওয়ার ইচ্ছে প্রকাশ করেছিলেন তিনি। এরপরেই তাঁর সঙ্গে কথা বলতে দলের এক নেতাকে পাঠানন সাবিত্রী মিত্র। তাঁর দলবদলের ভাবনার সূত্রপাত সেখান থেকেই। |