স্বনির্ভর গোষ্ঠী মানেই জ্যাম, আচার, বড়ি তৈরি বা কোনও খাবারের দোকান চালানো, এটাই ছিল চলতি ধারণা। এই গতে বাঁধা ধারণাটাকেই বদলে দিতে চান মালতি, শাবানার মতো মেয়েরা। উত্তরবঙ্গের গ্রামের স্বনির্ভর গোষ্ঠীর সদস্যারা আধুনিক স্পা-এর প্রশিক্ষণ নিয়ে স্বনির্ভর হতে চাইছেন। দার্জিলিং জেলা গ্রাম উন্নয়ন দফতর তথা ডিআরডিসির উদ্যোগে ২০ জন মেয়েকে তিন মাসের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। প্রশাসনের উদ্যোগেই মেয়েদের কলকাতায় সরস মেলায় পাঠানো হয়। ভবিষ্যতে আগ্রহীদের দোকান খোলার জন্য সাহায্যের কথাও জেলা প্রশাসনের চিন্তায় রয়েছে।
সেলাই-এর প্রশিক্ষণ নিয়েও কাজে লাগাতে পারেননি মাটিগাড়ার উত্তর কোটিয়া গ্রামের মালতি ঘোষ। গোষ্ঠীর অন্য সদস্যরা হাতের কাজ বা আচার তৈরির কাজ করলেও ২০০৮ সালে উচ্চমাধ্যমিক পাশ করা মালতীর সে সবে আগ্রহ ছিল না। তাঁর ভাল লাগত সাজাতে। পাড়াপড়শি বা পরিচিতদের বাড়ির বিয়েতে কনেকে সাজাতে ভরসা ছিলেন মালতিই। গোষ্ঠীর মাধ্যমে স্পা-এর প্রশিক্ষণের কথা শুনেই রাজি হয়ে যান তিনি। গত বছরের সেপ্টেম্বর মাস থেকে ৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত প্রতিদিন শিলিগুড়ির বাঘাযতীন পার্ক লাগোয়া একটি বেসরকারি কেন্দ্রে বিউটিশিয়ান কোর্স ও স্পা-এর প্রশিক্ষণ নেন মালতিদেবী। প্রশিক্ষণের পরে বাড়িতে আধুনিক পার্লার খুলতে চেয়ে ডিআরডিসি কর্তৃপক্ষের কাছে আর্জিও জানিয়েছেন তিনি। মালতিদেবীর কথায়, “উচ্চ মাধ্যমিকের পরে বিয়ে হয়ে যাওয়ায় আর পড়াশোনা করা হয়ে ওঠেনি। তবে বরাবরই নিজের কিছু করার ইচ্ছে ছিল। পার্লারের কাজ বেশি ভাল লাগত। বিউটিশিয়ানের সঙ্গে স্পা-এর প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে শুনে সোজা প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে হাজির হয়ে যাই।” বাড়ির সামনে একটি ঘরে স্পা তৈরির পরিকাঠামো গড়ছেন মালতি।
আদিনা গোষ্ঠীর সদস্যা দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী শাবানা বেগমও স্পা-এর প্রশিক্ষণ নেন। তাঁর কথায়, “নিজে কিছু করব বলে অনেকদিন ধরেই ঠিক করে রেখেছিলাম। কিন্তু মনের মতো কিছু খুঁজে পাচ্ছিলাম না। গোষ্ঠীতে জড়িত হয়েও বসেই ছিলাম। স্পা-এর প্রশিক্ষণ নিয়েছি। এবার নিজের কিছু করব বলে ঠিক করেছি।” একটি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে মহিলাদের স্পা-এর প্রশিক্ষণ দিয়েছে জেলা গ্রাম উন্নয়ন সংস্থা। ডিআরডিসির দার্জিলিং জেলার প্রকল্প আধিকারিক পদম সুমনের কথায়, “গোষ্ঠীর সব মেয়েরা একই ধরনের কাজ করতে চান না। কেউ হাতের কাজ তৈরি করতে ভালবাসেন, কেউ বা আবার আধুনিক ফ্যাশনে উৎসাহী। সে কারণেই স্পা-এর মতো আধুনিক ধারণাকে বেছে নেওয়া হয়। যদি দেখা যায়, কেউ খুব ভাল কাজ করছেন, তবে তাঁকে আরও প্রশিক্ষণের জন্য বাইরে পাঠানো হবে। তাঁদের দোকান তৈরিতেও সাহায্য করা হবে।” ডিআরডিসি সূত্রে জানা গিয়েছে, তিন মাসের ওই প্রশিক্ষণে প্রায় দেড় লক্ষ টাকা ব্যয় করা হয়েছে।
শিলিগুড়িরই একটি সংস্থায় বিভিন্ন ধরণের স্পা-এর প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। ফুল, ফল এবং আর্য়ুবেদিক স্পা-এর প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে সকলকে। ওই সংস্থার কর্ণধার তাপসী পালের কথায়, “বর্তমানে আয়ুর্বেদিক স্পা-এর বিপুল চাহিদা তৈরি হয়েছে। মূলত শহরেই এর চাহিদা অবশ্য বেশি। তবে প্রশিক্ষণের পরে গ্রামের মেয়েরা যেমন শহরে এসে নিজেদের পার্লার খোলার কথা চিন্তাভাবনা করতে পারবে, তেমনিই স্পা-পার্লার হলে ওই মেয়েদের হাত ধরেই হাল ফ্যাশন গ্রামেও ঢুকে পড়বে।” |