|
|
|
|
কলেজে অনলাইনে ভর্তি আবশ্যিক করছে রাজ্য
নিজস্ব সংবাদদাতা • কলকাতা |
ছাত্র ভর্তি নিয়ে গোলমাল রুখতে কলেজে ভর্তির ক্ষেত্রে অনলাইন প্রক্রিয়া বাধ্যতামূলক করছে রাজ্য সরকার। বৃহস্পতিবার নিউটাউনে প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয় ক্যাম্পাসের শিলান্যাস অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এই ঘোষণা করেছেন।
এ দিনের অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “কলেজের ভাবমূর্তি অক্ষুণ্ণ রাখতে কলেজে কলেজে অনলাইন ভর্তির ব্যবস্থা শুরু হোক। এর ফলে যেমন ছাত্রছাত্রীরা বাড়িতে বসে ভর্তি হতে পারবে, সে রকমই ভর্তির ব্যপারে স্বচ্ছতাও বাড়বে। কিছু কলেজে এই ব্যবস্থা চালু হয়েছে ঠিকই। কিন্তু সব কলেজেই তা চালু করতে হবে।”
রাজ্যের অনেক কলেজেই অনলাইন ভর্তির পদ্ধতি চালু আছে। আবার অনেক জায়গায় তা কাযর্কর করা যায়নি। ছাত্র সংগঠনগুলির বিরোধিতাই এর মূল কারণ। তৃণমূল কংগ্রেস ছাত্র পরিষদের (টিএমসিপি) বিরুদ্ধে অনলাইন প্রক্রিয়া চালু করায় বাধা দেওয়ার অভিযোগ সর্বাধিক। নিজেদের পছন্দের ছাত্রছাত্রী ভর্তির জন্য কলেজ কর্তৃপক্ষের উপরে চাপ দেওয়া, এমনকী তাঁদের ঘেরাও করে, চড়াও হয়ে আন্দোলনের নজিরও বিরল নয়। অনেক ক্ষেত্রে আবার ছাত্র ভর্তিকে কেন্দ্র করে টাকাপয়সা লেনদেনের অভিযোগও উঠছিল।
টিএমসিপি-র রাজ্য সভাপতি শঙ্কুদেব পণ্ডা অবশ্য এ দিন মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষণার সমর্থনে কিছু বলেননি। বস্তুত, এ নিয়ে কোনও মন্তব্যই করতে চাননি তিনি। তবে সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক তমোঘ্ন ঘোষ অনলাইন ভর্তিকে স্বাগত জানান। এসএফআইয়ের রাজ্য সম্পাদক দেবজ্যোতি দাসও এই উদ্যোগকে অভিনন্দন জানিয়েছেন। তবে তিনি বলেন, “স্বচ্ছতা ফেরানোর জন্য রাজ্য সরকারের সদিচ্ছা থাকতে হবে। না হলে টিএমসিপি-র জোরাজুরি চলতেই থাকবে।”
গত বছর মালদহ কলেজে অনার্সের আসন বৃদ্ধির দাবিতে টিএমসিপি-র আন্দোলনের জেরে পদত্যাগ করেন ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ প্রভাস চৌধুরী। রাজ্য জুড়ে ছোট-বড় এমন বেশ কিছু ঘটনায় টিএমসিপি-র নাম জড়িয়ে পড়ায় রাজ্য সরকার তথা দলের ভাবমূর্তি নষ্ট হচ্ছে বলে তৃণমূলের অন্দরেই ক্ষোভ তৈরি হচ্ছিল। শিক্ষায় স্বচ্ছতা বজায় রাখার প্রতিশ্রুতি দিয়ে ক্ষমতায় আসা রাজ্য সরকার সেই প্রবণতায় রাশ টানতেই তড়িঘড়ি অনলাইন ভর্তি-প্রক্রিয়া বাধ্যতামূলক করতে চলেছে বলে শিক্ষাজগতের অনেকের ধারণা।
শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু আগেই অনলাইন ব্যবস্থা চালু করার কথা বলেছেন। সম্প্রতি দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক মুকুল রায়ও জানিয়েছেন একই কথা। বৃহস্পতিবার মুখ্যমন্ত্রী স্বয়ং এ কথা ঘোষণা করায় কলেজের অধ্যক্ষদের দুশ্চিন্তা অনেকটাই কমল বলে জানিয়েছেন অধ্যক্ষ পরিষদের সভাপতি মানিক ভট্টাচার্য। উচ্চ মাধ্যমিক ও দ্বাদশ শ্রেণির অন্যান্য পরীক্ষার ফল প্রকাশের পরে জুন মাস থেকে বিভিন্ন কলেজে স্নাতক স্তরে ছাত্রভর্তি শুরু হয়। তার আগে মুখ্যমন্ত্রীর এই ঘোষণায় তাঁরা স্বস্তি পেয়েছেন বলে মানিকবাবুর দাবি। তিনি বলেন, “ছাত্রভর্তিকে
কেন্দ্র করে অধ্যক্ষদের উপর দিয়ে ঝড় বয়ে যায়। কিন্তু অনলাইন মানে সম্পূর্ণ স্বচ্ছ ভাবে মেধার ভিত্তিতে ভর্তি চালু হওয়া। মুখ্যমন্ত্রীর এই রক্ষাকবচ অধ্যক্ষদের বহু অশান্তির হাত থেকে বাঁচাবে।”
তবে মানিকবাবু যতটা আশ্বস্ত, অনেক অধ্যক্ষ ততটা নন। কলকাতারই একটি কলেজের অধ্যক্ষ বলেন, “মুখ্যমন্ত্রী বললেও কতটা সফল ভাবে অনলাইন ভর্তি চালু হবে, তা নিয়ে প্রশ্ন আছে। বিভিন্ন মহল থেকে বাধা পেয়ে কলেজে অনলাইন ভর্তি চালু করা যায়নি। তাই, এখনই নিশ্চিন্ত হওয়া যাচ্ছে না।” জেলার কলেজগুলিতে অনলাইন ভর্তির জন্য প্রয়োজনীয় পরিকাঠামোর সংস্থান করা এবং ছাত্রছাত্রীদের এই পদ্ধতিতে সড়গড় করে তোলা কতটা সম্ভব হবে, তা নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে। যদিও মানিকবাবু বলেন, “আধুনিক প্রজন্মের কাছে অনলাইন ভর্তির পদ্ধতি রপ্ত করাটা কোনও বড় ব্যাপার নয়। আর এখনও হাতে অনেক সময় আছে। কলেজগুলি চাইলেই পরিকাঠামো তৈরি করতে পারবে।” |
|
|
|
|
|