আমতার গ্রামে গণধর্ষণ
ঘরছাড়াদের ফেরানো গেলে হয় তো এড়ানো
যেত এমন ঘটনা, বলছেন সিপিএম নেতারা
পুলিশ-প্রশাসনের কাছে বার বার স্মারকলিপি দিলেও ঘরছাড়াদের ফেরানো যায়নি গ্রামে। সিপিএমের অভিযোগ, পরিবারের পুরুষ সদস্যেরা বাড়ি থাকলে হয় তো একই পরিবারের দুই মহিলাকে এ ভাবে গণধর্ষণে সাহস করত না দুর্বৃত্তেরা।
মঙ্গলবার রাতে আমতার মুক্তিরচক গ্রামে সিপিএম পরিবারের দুই মহিলা সদস্যকে গণধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে তৃণমূলের স্থানীয় নেতা বরুণ মাকাল ও তাঁর সাগরেদদের বিরুদ্ধে। ওই গ্রামে প্রায় ৭০ জন পুরুষ সদস্য গত পঞ্চায়েত ভোটের পর থেকে এলাকা ছাড়া বলে দাবি সিপিএমের। এক সময়ে আমতা পঞ্চায়েতের এই এলাকা ‘লাল দুর্গ’ বলে পরিচিত ছিল। কংগ্রেস এবং তৃণমূলের কেউ সেখানে কোনও ভোটে দাঁত ফোটাতে পারেনি। এমনকী, পঞ্চায়েত ভোটে আমতার ক্ষমতা বামেদের হাতছাড়া হলেও মুক্তিরচক গ্রামের দু’টি বুথে জয়ী হন সিপিএম সমর্থিত নির্দল প্রার্থীরা। গ্রামের দু’টি বুথে ভোটার প্রায় ১০০০। কিন্তু এখানে দু’টি বুথ মিলিয়ে তৃণমূল ভোট পেয়েছিল মাত্র শ’খানেক। সিপিএমের দাবি, তৃণমূলের সন্ত্রাসের জন্য তাদের প্রার্থীরা দলীয় টিকিটে মনোনয়ন জমা দিতে পারেনি। সে জন্যই নির্দল হয়ে দাঁড়াতে হয়েছিল। জিতেও যান তাঁরা। কিন্তু উন্নয়নের কোনও কাজে ওই দুই সদস্যকে সামিল করা হত না বলে অভিযোগ বামেদের। উল্টে, পঞ্চায়েত ভোটের পর থেকে তৃণমূলের হুমকি, সন্ত্রাস বাড়তে থাকে। যার প্রতিরোধের সামর্থ্য জোটাতে না পারায় ঘর ছাড়তে হয় জনা সত্তর পুরুষকে। সিপিএম নেতৃত্বের দাবি, মুক্তিরচকে তাদের সংগঠনের ভিত্তি বরাবরই যথেষ্ট ভাল। সেটাই তৃণমূলের চক্ষুশূল হয়ে উঠেছিল। রাজনৈতিক ভাবে মোকাবিলা করতে না পেরে তৃণমূল মিথ্যা মামলায় সিপিএমের লোকজনকে ফাঁসাচ্ছে। এ বার তো গণধর্ষণ করে আতঙ্ক ছড়াতে চাইল।
গ্রেফতারের দাবিতে গণতান্ত্রিক মহিলা সমিতির অবরোধ। ছবি: সুব্রত জানা।
মঙ্গলবারের ঘটনায় এক নির্যাতিতার স্বামীও ছিলেন ঘরছাড়াদের মধ্যে। তাঁদের গ্রামে ফেরাতে প্রশাসন-পুলিশের কাছে বার বার দরবার করেও ফল মেলেনি বলে অভিযোগ সিপিএমের। যদিও জেলা পুলিশের (গ্রামীণ) এক কর্তা বলেন, “ওই গ্রামে উত্তেজনা থাকায় পুলিশ পিকেট বসানো হয়েছিল। গ্রামে ফিরলে নিরাপত্তা দেওয়ার আশ্বাসও দেওয়া হয়েছিল সকলকে। কিন্তু যে কোনও কারণেই হোক, ঘরছাড়ারা নিজেরাই ফিরতে চাননি।”
কী হতে পারে সেই কারণ?
তৃণমূল নেতা বিশ্বনাথ লাহার ব্যাখ্যা, “সিপিএমের আমলে এই কয়েক জন ছিল সন্ত্রাসের সামনের সারিতে। ওদের অত্যাচারেই এক সময়ে আমাদের দলের লোকজন অতিষ্ঠ ছিল। ওদের বিরুদ্ধে থানায় একাধিক মামলাও আছে। গ্রামে ফিরলে সাধারণ মানুষের ক্ষোভের মুখে পড়তে হতে পারে, এই ভয়ে ওরা নিজেরাই ফিরতে চাইত না।”
সিপিএমের জেলা সম্পাদক বিপ্লব মজুমদারের দাবি, হাওড়া জেলা জুড়ে তাঁদের প্রায় ৬০০ লোক ঘরছাড়া। বহু বার সকলকে গ্রামে ফেরানোর জন্য পুলিশ-প্রশাসনের কর্তাদের কাছে স্মারকলিপি দিয়েও কাজ হয়নি। আমতার ঘটনার প্রেক্ষিতে সকলকেই বাড়ি ফেরানোর দাবি নতুন করে তুলেছেন তাঁরা। এ বিষয়ে তাঁদের সাহায্য চাওয়া হলে ভাবনাচিন্তা হবে বলে জানান প্রশাসনের এক কর্তা।
বস্তুত, গণধর্ষণের শিকার বছর আঠাশের ওই মহিলার পরিবারের উপরে মূল অভিযুক্ত বরুণ মাকালের পুরনো রাগ থাকা অস্বাভাবিকও নয়। তৃণমূল পরিচালিত আমতা পঞ্চায়েত সমিতি গত ১৭ ডিসেম্বর মুক্তিরচকে একটি রাস্তার কাজ করাচ্ছিল। গ্রামের সিপিএম সমর্থিত দুই নির্দল পঞ্চায়েত সদস্যকে সেই কাজের সঙ্গে কোনও ভাবে যুক্ত করা হয়নি বলে অভিযোগ ছিল সিপিএমের। পঞ্চায়েত সমিতির তৃণমূল সদস্যদের ওই দিন মারধর করে গ্রামের কিছু লোকজন। বরুণ নিজেও প্রহৃত হয়। নির্যাতিতা মহিলার স্বামী-সহ ৩৮ জনের বিরুদ্ধে মারধরের অভিযোগ দায়ের হয় থানায়। বরুণ এর আগে নিজে পঞ্চায়েত ভোটে দাঁড়িয়েও হেরেছিল। সিপিএমের দাবি, সে সব কারণেই তার রাগ ছিল গ্রামের কিছু সিপিএমের লোকের উপরে।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.