|
|
|
|
ওষুধ বণ্টন ব্যবস্থায় ভিন্ রাজ্যের দিশারি বাংলা
সোমনাথ চক্রবর্তী • কলকাতা |
পশ্চিমবঙ্গ আবার পথপ্রদর্শকের ভূমিকায়। এ বার ওষুধের ক্ষেত্রে। বাংলায় সরকারি হাসপাতালে ওষুধ ব্যবস্থাপনার নীতিকে ‘মডেল’ করতে চাইছে অন্য তিন রাজ্য। স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্যের দাবি, শুধু তিনটি রাজ্য নয়, কেন্দ্রীয় সরকারও এ পশ্চিমবঙ্গের ওষুধ কেনার পদ্ধতিকে আদর্শ করতে চেয়েছে।
বিনামূল্যে ওষুধ সরবরাহ এবং ন্যায্য মূল্যে ওষুধের জোগান, দু’টি ক্ষেত্রেই পশ্চিমবঙ্গের সাফল্য অন্যান্য রাজ্যকে আকর্ষণ করছে। কী ভাবে এ রাজ্যের সরকারি হাসপাতালগুলিতে সাধারণ মানুষ বিনা পয়সায় ওষুধ পাচ্ছেন, কী ভাবে ই-টেন্ডার প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা বজায় রেখে ওষুধ কেনা হচ্ছে, কোন পদ্ধতিতে সরবরাহকারীরা তাঁদের বকেয়া টাকা পাচ্ছেন সব কিছু খতিয়ে দেখতে আসছেন তামিলনাড়ু সরকারের প্রতিনিধিরা। একই ভাবে সিকিম এবং অন্ধ্রপ্রদেশ সরকারের প্রতিনিধিরাও এ রাজ্যে এসে এখানকার ওষুধ সরবরাহের পদ্ধতি বুঝে নিতে চাইছেন। ওই তিন রাজ্যের স্বাস্থ্যকর্তাদের সঙ্গে বাংলার স্বাস্থ্যকর্তাদের কথাও হয়েছে।
বাংলায় সরকারি হাসপাতালে ওষুধ সরবরাহে বিশেষত্ব কী?
রাজ্যের স্বাস্থ্য দফতরের কর্তারা জানান, বাম আমলে পঞ্চায়েত সমিতির সভাধিপতি, জেলাশাসক এবং মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিকের নেতৃত্বাধীন কমিটি দরপত্র ডেকে সরকারি হাসপাতালের ওষুধ কিনত। তখন একই ওষুধ অনেকে সরবরাহ করতেন। ওষুধের গুণমান ঠিকমতো যাচাই করা সম্ভব হত না।
ওই স্বাস্থ্যকর্তাদের বক্তব্য, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার ক্ষমতায় আসার পরে ব্যবস্থাটা বদলে গিয়েছে। জেলাশাসক এবং মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিকের নেতৃত্বে গড়া একটি কমিটি কোন হাসপাতালে এক বছরে কী কী জরুরি ও জীবনদায়ী ওষুধ লাগবে, তার তালিকা তৈরি করে। স্বাস্থ্য দফতর থেকে ই-টেন্ডার ডেকে তা জেলায় জেলায় সরবরাহ হয়। স্বাস্থ্য ভবনে বসে কম্পিউটারে ক্লিক করলেই কোন জেলায় কত টাকার ওষুধ বিক্রি হয়েছে, কত টাকা ছাড় দেওয়া হয়েছে, ক’টা প্রেসক্রিপশন ওষুধের দোকানে এসেছে সবই জানা যায়। সেই সঙ্গে হাসপাতাল থেকেও নজরদারি করা সম্ভব। স্বচ্ছতা বজায় রাখতেই এই পদ্ধতি চালু করা হয়েছে বলে স্বাস্থ্যকর্তাদের দাবি।
অন্যান্য রাজ্য এখানকার ওষুধ ব্যবস্থা অনুসরণ করতে চায় কেন?
স্বাস্থ্য দফতরের এক শীর্ষ কর্তার ব্যাখ্যা, ২০১২ সালের গোড়ার দিকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা তদানীন্তন স্বাস্থ্যসচিব সঞ্জয় মিত্রের সহযোগিতায় সরকারি হাসপাতালে ওষুধ কেনায় স্বচ্ছতা রাখতে ‘স্টোর ম্যানেজমেন্ট ইনফর্মেশন সিস্টেম’ চালু করেন। এই ব্যবস্থায় কোন হাসপাতালে কী ওষুধ পাঠানো হচ্ছে, একটি জায়গায় বসেই তার উপরে নজরদারি করা সম্ভব। সফটওয়্যারের মাধ্যমেই ঠিক হয়ে যাচ্ছে, কোন কোন ওষুধের গুণমান পরীক্ষা হবে। সেই অনুযায়ী ওষুধের ব্যাচ নম্বর ধরে পরীক্ষা করানো হচ্ছে। এর ফলে ওষুধের গুণগত মান ঠিক থাকছে। এই পদ্ধতিটাই অন্যান্য রাজ্যকে আকর্ষণ করছে। বিশেষ ভাবে এটাই খুঁটিয়ে দেখে নিতে চাইছেন সেখানকার স্বাস্থ্যকর্তারা।
স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী চন্দ্রিমাদেবী জানান, কেন্দ্রও অন্যান্য রাজ্যকে পশ্চিমবঙ্গের ওষুধ কেনা ও সরবরাহের পদ্ধতিকে মডেল করতে বলছে। নতুন পদ্ধতিতে ওষুধ বিক্রেতাদের হয়রানিও কমেছে। মন্ত্রী বলেন, “আগে ওষুধ দেওয়ার পরে পাওনা আদায়ের জন্য বিক্রেতাদের বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে বেড়াতে হত। এখন তা হচ্ছে না। কম্পিউটারে বিল তৈরি হচ্ছে। সরবরাহকারীরা ব্যাঙ্কের মাধ্যমে টাকা পেয়ে যাচ্ছেন।”
মন্ত্রীর দাবি, শুধু সরকারি হাসপাতালে ওষুধ কেনাতেই অভিনব পদ্ধতি চালু হয়নি। সরকারি হাসপাতালে ন্যায্য মূল্যের ওষুধ বিক্রির ক্ষেত্রেও দেশে নজির সৃষ্টি করেছে পশ্চিমবঙ্গ। গরিব মানুষ কম পয়সায় ওষুধ পাচ্ছেন। গ্রামীণ হাসপাতাল থেকে মেডিক্যাল কলেজ পর্যন্ত সর্বত্রই ধাপে ধাপে ন্যায্য মূল্যে ওষুধ বিক্রি শুরু হয়েছে।
|
|
|
|
|
|