মিজোরামে অপহৃত টেলিকম কর্মী দীপ মণ্ডলকে জঙ্গিরা খুনের হুমকি দেওয়ার পর থেকেই কার্যত নাওয়া খাওয়া বন্ধ হয়েছে ইন্দাসের দিবাকরবাটিতে তাঁর পরিজনদের। জঙ্গি হুমকি শুনে উদ্বিগ্ন তাঁর কলেজের বন্ধু থেকে শিক্ষক, পাড়া পড়শি, আত্মীয়স্বজন। উত্কন্ঠা বাড়ছে ইন্দাসের আমজনতার।
দীপ মণ্ডল
|
‘টেলিকম নেটওয়ার্ক সলিউশন’-র কর্মী দীপ ভাইফোঁটার দিন গুয়াহাটি রওনা দেন। গত ২১ নভেম্বর সেখান থেকে তিনি মিজোরামের মামিট জেলায় যান মোবাইল টাওয়ারের কাজে। মিজোরামের জঙ্গল থেকে গত ২৩ নভেম্বর থেকে নিখোঁজ দিবাকরবাটির বাসিন্দা দীপ মণ্ডল। দীপের মুক্তির বিনিময়ে মোটা অঙ্কের মুক্তিপণ দাবি করেছে জঙ্গিরা। কিন্তু পরিজনেরা অত টাকা জোগাড় করতে পারেননি। গত মঙ্গলবার তাঁর পিসতুতো দাদা অর্ণব মণ্ডলকে জঙ্গিরা ফোন করে জানায়, এত কম টাকার বিনিময়ে দীপকে তারা ছাড়তে পারবে না। টাকা না পেলে দীপকে তাদের বাঁচিয়ে রাখা সম্ভব নয়। |
অ্যাসবেসটসের ছাউনি দেওয়া ইটের একতলা বাড়ি ও বিঘে দুয়েক জমিই সম্বল দীপের পরিবারের। চাষাবাদের সঙ্গে বাড়ির পাশে একটি প্যাথলজি ল্যাবরেটরিতে কাজ করেন তাঁর বাবা নিখিল মণ্ডল। তাঁর কথায়, “বাড়ির অবস্থা ভাল নয় দেখেই আমার ছেলে এতদূরে কাজে গিয়েছিল। জঙ্গিরা ওকে খুন করার হুমকি দেওয়ায় আমাদের মনোবল তলানিতে গিয়ে ঠেকেছে।” তাঁর কাতর আর্জি, “আমরা যে খুব গরীব তা অপহরণকারীরা জেনেছেন। এখন ওরা দীপকে বিনা শর্তে মুক্তি দিক এটাই আমরা চাইছি।”
বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই দিবাকরবাটির মণ্ডল পরিবারে হাঁড়ি চড়েনি। নিখিলবাবুর ভাগ্নে বিশ্বজিত্ কুণ্ডু বাড়িতেই সামান্য কিছু খাবার মুখে তুলেছেন দীপের মা অঞ্জনাদেবী ও বোন মধুমন্তী। চরম উত্কন্ঠার মধ্যে তাঁদের প্রতিটা ঘণ্টা কাটছে। ফোন বাজলেই চমকে উঠছেন, কী খবর আসে! তাঁদের সান্ত্বনা দিতে এসেছিলেন কয়েকজন পড়শি। দীপের বোন মধুমন্তী বলেন, “দাদা তো অভাবের তাড়নায় বেসরকারি কোম্পানির কাজে এতদূর গিয়েছে। জঙ্গিরা ওকে কেন যে অপহরণ করে রেখেছে বোধগম্য হচ্ছে না।”
দীপের মুক্তির দাবিতে তাঁর পরিবারের পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন এলাকার বিভিন্ন শ্রেণির মানুষ। ইতিপূর্বে অনশন, ধর্না অবস্থানের পাশাপাশি এলাকায় বন্ধ পালন করেছেন তাঁরা। সেই আন্দোলনে সামিল হয়েছেন দীপের বন্ধু, শিক্ষক থেকে ব্যবসায়ী-- সকলেই। দীপের মুক্তির দাবিতে সোচ্চার সেই আন্দোলনের নেতা বিশ্বরূপ ভট্টাচার্য, মানস রায় বৃহস্পতিবার বলেন, “দীপের জন্য ইন্দাসের সর্বস্তরের মানুষ উদ্বিগ্ন। এতদিন ধরে জঙ্গিরা আটকে রেখেছে, টাকা দাবি করছে। এখন খুনের হুমকি দেওয়ায় আমরা রীতিমতো বিচলিত। আমাদের দাবি, দীপকে উদ্ধারের ব্যাপারে প্রশাসন যথেষ্ট সক্রিয় ভূমিকা নিক।” বাঁকুড়ার জেলাশাসক বিজয়ভারতী এ দিন দাবি করেন, “দীপ মণ্ডলকে উদ্ধারের ব্যাপারে আমাদের তরফে চেষ্টার কোনও ত্রুটি নেই। রাজ্যের স্বরাষ্ট্রসচিব বাসুদেব বন্দ্যোপাধ্যায় মিজোরাম সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন। রাজ্য সরকারের তরফে বাংলাদেশ হাইকমিশনকেও বিষয়টি জানানো হয়েছে।” |