পাইপ বসানোর কাজের সময় জখম হয়েছিলেন এক ঠিকা শ্রমিক। হাসপাতালে তাঁর মৃত্যু হয়। ওই ঘটনাকে সামনে রেখে ক্ষতিপূরণ ও পোষ্যের চাকরি নিয়ে দরকষাকষির জেরে একটি পাইপ তৈরির কারখানায় ভাঙচুর চালিয়ে কর্মীদের মারধর করল একদল লোক। তৃণমূলের বিরুদ্ধে অভিযোগের তির কারখানা কর্তৃপক্ষের। নিরাপত্তার কারণে কারখানা আপাতত বন্ধ করে দিয়েছেন কর্তৃপক্ষ। বৃহস্পতিবার এই ঘটনা ঘটেছে পুরুলিয়ার শিল্পাঞ্চল রঘুনাথপুরে। যে অঞ্চলে শিল্পায়ন এখন রাজ্য সরকারের অন্যতম লক্ষ্য।
রঘুনাথপুর থানা এলাকার গোবরান্দা গ্রামে জলের পাইপ তৈরির এই কারখানায় স্থায়ী-অস্থায়ী মিলে প্রায় ১১৫ জন কর্মী কাজ করেন। রঘুনাথপুরের এসডিপিও কুন্তল বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “রাতে পুলিশের কাছে অভিযোগ দায়ের হয়েছে। ওই এলাকায় পুলিশি টহল রয়েছে।” পুলিশ সূত্রের খবর, রঘুনাথপুর ২ ব্লক তৃণমূল সভাপতি বরুণ মাহাতা-সহ কয়েক জনের নামে এফআইআর হয়েছে। |
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রের খবর, গোবরান্দা গ্রামেরই বাসিন্দা বিনোদ বাউরি (২৭) একটি ঠিকাদারি সংস্থায় শ্রমিকের কাজ করতেন। ওই ঠিকা সংস্থা এবং পাইপ তৈরির কারখানার মালিকপক্ষ একই। গত ২ ফেব্রুয়ারি বোরোয় পাইপলাইনের কাজ করতে গিয়ে জখম হন বিনোদ। কলকাতার হাসপাতালে তাঁর মৃত্যু হয় ওই রাতেই। ময়নাতদন্ত করে দেহ গ্রামের বাড়িতে আনতে মৃতের পরিবারকে প্রচণ্ড কাঠখড় পোড়াতে হয়। স্থানীয় থানার ‘নো-অবজেকশন’ শংসাপত্র ছাড়া দেহ আনা যাচ্ছিল না। পরিবারের অভিযোগ, বোরো থানায় যোগাযোগ করলে তারা বলে, ঘটনার কথা তাদের জানা না থাকায় ওই শংসাপত্র দেওয়া সম্ভব নয়। অন্য দিকে, রঘুনাথপুর থানার যুক্তি ছিল, ঘটনাস্থল যেহেতু বোরো, তাই তাদেরও কিছু করার নেই। পরে রঘুনাথপুর থানার হস্তক্ষেপেই বৃহস্পতিবার দেহ গ্রামে পৌঁছয়।
বৃহস্পতিবার গোবরন্দা গ্রামে বিনোদের দেহ এসে পৌঁছয়। এর পরে চাকরি ও ক্ষতিপূরণের দাবিতে পাইপ কারখানার সামনে রঘুনাথপুর-চেলিয়ামা রাস্তায় মৃতদেহ রেখে অবরোধ শুরু করেন তৃণমূলের নেতা-কর্মীরা। ওই বিক্ষোভে তৃণমূল নেতা বরুণ মাহাতা উপস্থিত ছিলেন বলেও কারখানা কর্তৃপক্ষের অভিযোগ। অবরোধে রাস্তায় যানজট শুরু হয়ে যায়। কারখানা কর্তৃপক্ষের অবশ্য দাবি, আহত হওয়ার পরে দ্রুত চিকিতসার প্রয়োজনেই তাঁরা বিনোদকে প্রথমে বাঁকুড়া মেডিক্যাল ও পরে কলকাতায় নিয়ে গিয়েছিলেন। মৃতদেহ পেতে যে হয়রানি হয়েছে, তাতে তাঁদের কোনও ভূমিকা নেই।
পুলিশ এসে অবরোধ তুলে দেয়। এর পর বিক্ষোভকারীরা মৃতদেহ নিয়ে কারখানায় ঢুকে পড়েন। কারখানার কর্মীরা জানান, দুর্ঘটনায় মৃত্যুর বদলে তাঁরা মৃতের পরিবারের জন্য দু’টি চাকরি ও পাঁচ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণের দাবি তোলা হয়। কারখানার মালিক অঞ্জন মজুমদার বলেন, “মৃত্যু অবশ্যই দুর্ভাগ্যজনক। দুর্ঘটনার ফলে তা ঘটে গিয়েছে। আমরা মৃতের অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রীকে চাকরি ও তাঁর সন্তানের লেখাপড়ার যাবতীয় দায়িত্ব নিতে চেযেছিলাম। আর্থিক ক্ষতিপূরণও দেব বলে জানিয়েছিলাম। তবে পাঁচ লক্ষ টাকা আমাদের পক্ষে দেওয়া সম্ভব ছিল না।” এই দর কষাকষি কিছুক্ষন চলার পরে আচমকা কারখানায় ভাঙচুর শুরু হয়। অফিসের ও বিভিন্ন ঘরের কাচের জানালা ভেঙে দেওয়া হয়। কয়েক জন কর্মীকে মারধর করা হয় বলেও অভিযোগ। গোটা ঘটনায় তৃণমূল নেতা বরুণ মাহাতো ইন্ধন জুগিয়েছেন বলে কারখানা কর্তৃপক্ষ এবং কর্মীদের একাংশের অভিযোগ।
মৃত বিনোদের দাদা কালীপদ বাউরি বলেন, “ক্ষতিপূরণের টাকার অঙ্কে কারখানা কর্তৃপক্ষ রাজি হচ্ছিলেন না। এ সব নিয়ে কথাবার্তার মাঝেই লোকজন ভাঙচুর শুরু করে দেয়। কারা ভাঙচুর করেছে, জানি না।” অঞ্জনবাবু বলেন, “নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন আমাদের কর্মীরা। আমরা কারখানা বন্ধ করে দিতে বাধ্য হয়েছি।” স্থানীয় সূত্রের খবর, কারখানা বন্ধের খবর ছড়িয়ে পড়তেই কারখানার শ্রমিকেদের বিক্ষোভের মুখে পড়তে হয় এলাকার তৃণমূল নেতৃত্বকে।
ঘটনার পরে বারবার চেষ্টা করেও তৃণমূল নেতা বরুণবাবুর সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি। পুরুলিয়া জেলা তৃণমূলের কাযর্করী সভাপতি সুজয় বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “এক জন স্থানীয় মানুষের মৃত্যু হয়েছে। তাতে মানুষের ক্ষোভ হওয়া স্বাভাবিক। তবে তার জেরে ভাঙচুরের ঘটনা কাম্য নয়। আমি ঘটনাটি শুনেছি। ঠিক কী ঘটেছিল, তা খবর নেব। বরুণ মাহাতার সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করছি, কিন্তু তাঁর মোবাইল বন্ধ।” |