গ্রামের ভিতর দিয়েই চলে গিয়েছে ভাগীরথীর জল প্রকল্পের পাইপ লাইন। কিন্তু সে জল গ্রামবাসীদের ধরা ছোঁয়ার বাইরে। বছর দশেক আগে জনস্বাস্থ্য কারিগরী দফতরের উদ্যোগে গোটা দশেক নলকূপ বসেছিল নাকাশিপাড়ার কড়কড়িয়া গ্রামে। কিন্তু বছর চারেক ধরে সে সব নলকূপ থেকে জল পড়ে না। সরকারি উদ্যোগে গোটা চারেক টিউবওয়েলও বসেছিল গ্রামের রায়পাড়া, মাঝেরপাড়া, গুঁইপাড়া ও প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কাছে। কিন্তু একটি বাদে সবগুলি বিকল হয়ে পড়ে রয়েছে। ফলে গ্রামের চার পাড়ার প্রায় হাজার খানেক মানুষ বছর খানেক ধরে তীব্র
জলকষ্টে রয়েছেন।
দিন কয়েক আগে শীতের এক দুপুরে গ্রামে গিয়ে জলাভাবের চিত্রটা চোখে পড়ল। গঙ্গার ধারে দাঁড়িয়ে গ্রামের এক মাঝবয়সী ব্যক্তি জানালেন, কাঁদোয়ার পাশে টাইম কলের পাইপ ভেঙে গিয়েছে। পড়শি গ্রাম তেঁতুলবেড়িয়ার পাম্প থেকে জল আসে। ওখানকার কর্মীদের বার বার তাগাদা দেওয়া সত্ত্বেও বছর খানেক ধরে ওঁরা পাইপ সারাচ্ছেন না। তাই আমরা জলও পাচ্ছি না। কাঁদোয়ার কাছে জলের পাইপ লাইন গিয়েছে মাটির উপর দিয়ে। আশপাশে রয়েছে চাষের জমি। আছে একটি খাল। গ্রামের লোকজনের অভিযোগ, এলাকার চাষিরা জমিতে জল নেওয়ার জন্য পাইপ ফাটিয়ে দেয়। জন স্বাস্থ্য কারিগরি দফতরের আধিকারিকদের ওখানে লোহার পাইপ দেওয়ার কথা বলেও কোনও ফল মেলেনি। অন্যদিকে কাশিয়াডাঙাতে ভাগিরথীর জল শোধন করে এলাকার বিভিন্ন জায়গায় পৌঁছে দেওয়ার জন্য পাইপ লাইন গিয়েছে গ্রামের ভিতর দিয়ে। কিন্তু সেই প্রকল্পের মাধ্যমে এলাকার লক্ষাধিক লোকজন জল পান। কিন্তু কড়কড়িয়াতে সে জল যায় না। মাস খানেক আগে অবশ্য দু’টি নলকূপ বসেছে। কিন্তু প্রশাসনের গড়িমসিতে এখনও পর্যন্ত সেখান থেকে জল পাচ্ছেন না গ্রামের লোকজন।
এই অবস্থায় সবেধন নীলমনি গ্রামের রায়পাড়ার টিউবওয়েল থেকে জল আনতে সকাল-বিকেল ভিড় জমান গ্রামের মহিলারা। ঘণ্টা দু’য়েক অপেক্ষার পর সেখান থেকে জল মেলে। গ্রামেরই এক মহিলা জয়ন্তী রাহা বললেন, “দীর্ঘ প্রতিক্ষার পর একটি বালতি জল মেলে। অনেক সময় তাড়া থাকলে বাধ্য হয়ে অপরিশোধিত গঙ্গার জল আনি।” গ্রামের বাসিন্দা দুর্লভ রাহা, দীপঙ্কর রাহা, মধুসূদন দত্তরা জানান, গঙ্গার জল ফুটিয়ে খেয়েও হরেক কিসিমের পেটের গোলমাল লেগেই থাকে। দুর্লভবাবুর বক্তব্য, “গঙ্গার জল পান করে পেটের অসুবিধা হচ্ছিল। বর্ধমানের পূর্বস্থলীর কমলনগরে রোজ নদী পেরিয়ে তাঁতের কাজ করতে যাই। ফেরার সময় এক জার জল নিয়ে আসি।” অনেকে আবার প্রায় চার কিলোমিটার মেঠো পথ জড়িয়ে কাশিয়াডাঙায় ভাগীরথীর জল প্রকল্পের এলাকা থেকে পরিশ্রুত পানীয় জল নিয়ে আসেন। গ্রামের বাসিন্দা বছর ষাটেকের মধুসূদন গুহ বলেন, “গ্রামে জলের আকাল। তাই কাশিয়াডাঙা থেকে রোজ জল আনি।” যাঁদের সামর্থ্য আছে তাঁরা আবার পাশ্ববর্তী ধর্মদা বাজার থেকে জল কিনে আনেন। দীপঙ্কর রাহা, কার্তিকরা রাহারা কেনা জল খান।
নাকাশিপাড়া পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি সিপিএমের রিতা সরকার বলেন, “কড়কড়িয়া সহ এলাকার বেশ কিছু জায়গায় পাইপ ফেটে গেছে। বিষয়টি জনস্বাস্থ্য কারিগরী দফতরের কর্তাদের মৌখিকভাবে জানিয়েছি। কিন্তু ওঁরা পদক্ষেপ করছেন না।” |