দেড় মাসে জুড়ল নয়াগ্রাম-সাঁকরাইল
সেতুর মাধ্যমে সরাসরি জুড়ল পশ্চিম মেদিনীপুরের সাঁকরাইল ও নয়াগ্রাম ব্লক। জেলা পরিষদের সহযোগিতায় ও দুই বিডিও-র উদ্যোগে মাত্র দেড় মাসের মধ্যে সুবর্ণরেখার উপর তৈরি হয়ে গিয়েছে একটি নতুন ফেয়ার ওয়েদার ব্রিজ। নয়াগ্রামের দেউলবাড় থেকে সাঁকরাইলের গড়ধরার মধ্যে সংযোগকারী ওই ফেয়ার ওয়েদার ব্রিজটির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনের আগেই পথচারী ও যানবাহন চলাচলের জন্য খুলে দিয়েছে প্রশাসন। এ বার ওই রুটে যাত্রীবাহী বাস ও ট্রেকার চালাতে উদ্যোগী হচ্ছেন দুই বিডিও।
পশ্চিম মেদিনীপুর জেলায় কংসাবতী ও সুবণর্র্রেখা নদীর উপর একাধিক ফেয়ার ওয়েদার সেতু রয়েছে। বর্ষাকাল বাদে বছরের বাকি ৭-৮ মাস এই সেতু দিয়ে যাতায়াত করা যায়। লালগড়ে কংসাবতী নদীর উপর আমকলা ঘাটে ফেয়ার ওয়েদার ব্রিজের কাছেই রাজ্য সরকারের উদ্যোগে স্থায়ী সেতু তৈরি হচ্ছে। আবার নয়াগ্রাম-কেশিয়াড়ি সংযোগকারী ভসরাঘাট ফেয়ার ওয়েদার ব্রিজের কাছেও স্থায়ী সেতু তৈরি হচ্ছে। নয়াগ্রামে ওই সেতুর কাজ ৩৫ শতাংশ এগিয়েছে।
নতুন ফেয়ার ওয়েদার ব্রিজ। ছবি: দেবরাজ ঘোষ।
লালগড় ও নয়াগ্রামের ফেয়ার ওয়েদার ব্রিজ দিয়ে একাধিক বাস-ট্রেকার রুট রয়েছে। কিন্তু নয়াগ্রাম ও সাঁকরাইল ব্লকের মধ্যে সরাসরি সংযোগকারী স্থায়ী ও অস্থায়ী কোনও সেতু এতদিন ছিল না। গোপীবল্লভপুরে সুবর্ণরেখার উপর স্থায়ী সেতু রয়েছে। নয়াগ্রাম থেকে গোপীবল্লভপুর হয়ে সাঁকরাইলের দূরত্ব প্রায় একশো কিমি। এতদিন পর্যন্ত সাঁকরাইলের গড়ধরা ঘাট ও নয়াগ্রামের দেউলবাড় ঘাটের মধ্যে ডিঙিতে ও খানিকটা বালিয়াড়ি পথ হেঁটে যাতায়াত করতে হত নিত্যযাত্রীদের। ওই এলাকায় তাই সেতুর দাবি দীর্ঘ দিনের। কিন্তু এই মুহূর্তে জঙ্গলমহলের লালগড় ও নয়াগ্রামে দু’টি কংক্রিটের সেতু তৈরি হচ্ছে। ফলে সুবর্ণরেখায় নতুন কংক্রিটের সেতু তৈরির কোনও পরিকল্পনা ছিল না রাজ্য সরকারের।
এই প্রেক্ষিতে নয়াগ্রাম ও সাঁকরাইলের মধ্যে ফেয়ার ওয়েদার ব্রিজ তৈরি করার পরিকল্পনা নেন দুই বিডিও। সাধারণত, ফেয়ার ওয়েদার ব্রিজ তৈরি করার জন্য জেলা পরিষদ থেকে টেন্ডার ডাকা হয়। সর্বনিম্ন দরখাস্তকারীকে বরাত দেওয়া হয়। সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার নিজের খরচে ব্রিজটি তৈরি করেন। এরপর জেলা পরিষদের নির্দিষ্ট হারে সব ধরনের যানবাহন থেকে মাশুল আদায় করে ব্রিজ তৈরির খরচ ও লাভ তুলে নেন ঠিকাদার। কিন্তু এ ক্ষেত্রে নয়াগ্রাম ও সাঁকরাইলের মধ্যে সরাসরি কোনও বাস-ট্রেকার রুট না থাকায় সেতু বানানো লাভজনক মনে হচ্ছিল না ঠিকাদারদের।
প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, মাস ছয়েক আগে, নয়াগ্রামের বিডিও তাপস ভট্টাচার্য যোগাযোগ করেন সাঁকরাইলের বিডিও সৌরভ চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে। গত নভেম্বরে আলোচনার ভিত্তিতে তাঁরা যৌথ ভাবে প্রস্তাব পাঠান জেলা পরিষদের কাছে। জেলা পরিষদের পূর্ত স্থায়ী সমিতিতে প্রকল্পটির অনুমোদন দেওয়া হয়। জেলা পরিষদ থেকে টেন্ডারও ডাকা হয়। কিন্তু নতুন ওই অলাভজনক রুটে ফেয়ার ওয়েদার ব্রিজ বানানোর ঝুঁকি নিতে চাইছিলেন না ঠিকাদারেরা। শেষে দুই বিডিও-র উদ্যোগে এলাকাবাসীর স্বার্থে কাজটা ধরেন নয়াগ্রামের এক ঠিকাদার। ডিসেম্বর মাসে সেতুর কাজ শুরু হয়। নদীর মাঝে ৮০ মিটার কাঠের সেতু-সহ দু’দিকে মাটি ফেলে অ্যাপ্রোচ রাস্তা তৈরির কাজ সিংহভাগই হয়ে গিয়েছে। খরচ হয়েছে প্রায় কুড়ি লক্ষ টাকা। দু’দিকের অ্যাপ্রোচ রাস্তা দু’টি অবশ্য জেলা প্রশাসনের বিশেষ অনুমতিক্রমে একশো দিনের প্রকল্পে করা হয়েছে।
নতুন ফেয়ার ওয়েদার ব্রিজটি তৈরি হওয়ায় বর্ষাকাল বাদে বছরের বাকি সময় সহজে যাতায়াত করা যাবে। এর ফলে যানবাহনে নয়াগ্রাম থেকে সাঁকরাইল ব্লকের মধ্যে প্রায় ৭০-৮০ কিমি দূরত্ব কমে যাচ্ছে। নয়াগ্রামের বাসিন্দা পেশায় সাঁকরাইল ব্লকের একটি স্কুলের শিক্ষিকা সুমনা মাহাতো বলেন, “নতুন সেতুটি হওয়ায় এখন সহজে স্কুলে যেতে পারছি।” ব্যবসায়ী সুধাংশু জানার বক্তব্য, “নতুন ফেয়ার ওয়েদার ব্রিজটির ফলে নয়াগ্রাম থেকে সড়কপথে জেলা সদর মেদিনীপুর ও খড়্গপুরের দূরত্বও প্রায় ৮০-৯০ কিলোমিটার কমে গিয়েছে। সাঁকরাইলের দিক থেকে নয়াগ্রাম হয়ে ওড়িশার যোগাযোগও সহজ হয়ে গেল।”
পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা পরিষদের সভাধিপতি উত্তরা সিংহের বক্তব্য, “আমরা দ্রুত মানুষকে পরিষেবা দিতে চাইছি। বিডিও-রা এভাবে সক্রিয় হলে পরিষেবা দানের কাজটাও আরও সহজ হয়।” কৃতিত্ব নিতে নারাজ দুই বিডিও-ই বলছেন, “নতুন রুটটি লাভজনক করতে না-পারলে পরেব বার ব্রিজটি তৈরি করা কঠিন হবে। গড়ধরা-দেউলবাড় নতুন রুটে বাস ও ট্রেকার চালানোর জন্য পরিবহন দফতর ও বাস-ট্রেকার সংগঠনগুলির সঙ্গে আলোচনা চালানো হচ্ছে।”


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.