|
|
|
|
হস্তশিল্পীকে পরিচয়পত্র দেওয়ার লক্ষ্য অধরাই |
বরুণ দে • মেদিনীপুর |
পটের জেলা পশ্চিম মেদিনীপুর। মাদুরের জেলা পশ্চিম মেদিনীপুর। হস্তশিল্পে বরাবরই এগিয়ে এই জেলা। কিন্তু হস্তশিল্পীদের পরিচয়পত্র বিলির কাজে পিছিয়ে পড়ছে দিন দিন। সম্প্রতি দু’হাজারেরও বেশি পরিচয়পত্র রাজ্য থেকে এলেও তা শিল্পীদের মধ্যে বিলি হয়নিজেলা এবং ব্লকস্তরে পড়ে রয়েছে। গাফিলতিটা দু’পক্ষেরই। শিল্পীদের যেমন পরিচয়পত্র নেওয়ায় বিশেষ হেলদোল নেই, তেমনই সরকারি কর্মীদেরও শিল্পীদের এই নিয়ে সচেতন করায় আগ্রহ নেই। জেলা শিল্প কেন্দ্রের জেনারেল ম্যানেজার প্রহ্লাদ হাজরা বলেন, “পরিচয়পত্র দেওয়ার কাজ এগোচ্ছে। আশা করছি, খুব শীঘ্রই লক্ষ্যমাত্রার কাছাকাছি পৌঁছনো সম্ভব হবে। যে সংখ্যক পরিচয়পত্র রাজ্য থেকে চলে এসেছে, সেগুলোও শীঘ্রই শিল্পীদের দেওয়া হবে। প্রয়োজনে শিবির করে পরিচয়পত্র দেওয়া হবে।”
পশ্চিম মেদিনীপুরের লক্ষাধিক মানুষ হস্ত-কুটির শিল্পের সঙ্গে জড়িত। কুটির শিল্পে বরাবরই এ জেলার মানুষের একটা আলাদা আগ্রহ রয়েছে। কেউ মাদুর শিল্পের সঙ্গে জড়িত, কেউ পটশিল্পের সঙ্গে, কেউ বার বাঁশ-সাবুই শিল্পের সঙ্গে। এক সময় সমস্ত হস্তশিল্পীকেই পরিচয়পত্র দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল রাজ্য সরকার। এই পরিচয়পত্র দেখিয়ে শিল্পীরা সরকারি সুযোগ-সুবিধে পেতে পারেন। প্রাথমিক ভাবে ঠিক হয়েছিল, গোটা রাজ্যে সাড়ে ৫ লক্ষ হস্তশিল্পীকে পরিচয়পত্র দেওয়া হবে। এর মধ্যে পশ্চিম মেদিনীপুরের ছিলেন এক লক্ষ শিল্পী। সিদ্ধান্ত মতো, ২০১০-’১১ আর্থিক বছরের শেষের দিকে জেলায় পরিচয়পত্র দেওয়ার কাজ শুরু হয়। ওই বছর জেলায় সব মিলিয়ে প্রায় ৭ হাজার শিল্পীকে পরিচয়পত্র দেওয়া হয়েছিল। আর চলতি আর্থিক বছরের ফেব্রুয়ারিতে ওই সংখ্যাটা হয়েছে প্রায় ৬৪ হাজার।
পরিচয়পত্র পাওয়ার জন্য শুরুতে শিল্পীদেরই ব্লকস্তরে আবেদন করতে হয়। পরে ওই আবেদন জেলায় আসে। সমস্ত দিক খতিয়ে দেখে জেলা থেকে ওই আবেদন রাজ্যে পাঠানো হয়। এরপর রাজ্যই আবেদন খতিয়ে দেখে শিল্পীদের পরিচয়পত্র তৈরি করে। পরে তা জেলায় আসে। পরিচয়পত্রের জন্য পশ্চিম মেদিনীপুর থেকে এখনও পর্যন্ত সব মিলিয়ে ৬৯ হাজার ৫৯৮টি আবেদন রাজ্যে পাঠানো হয়েছে। সমস্ত দিক খতিয়ে দেখে রাজ্য ৬৬ হাজার ১৮২টি আবেদন মঞ্জুর করে। সেই মতো পরিচয়পত্র তৈরি করে জেলায় পাঠানো হয়। এর মধ্যে ৬৪ হাজার ৪৪ জন শিল্পী পরিচয়পত্র পেয়েছেন। অর্থাৎ, ২ হাজার ১৩৮টি পরিচয়পত্র জেলা এবং ব্লকস্তরে পড়ে রয়েছে। অথচ, এখনও শিল্পীদের মধ্যে বিলি হয়নি।
নয়াগ্রামে যেমন ৮০০টি পরিচয়পত্রের মধ্যে ৪৯৮টি দেওয়া হয়েছে। গোপীবল্লভপুর-১ এ ৯৬৬টির মধ্যে ৯৪৪টি দেওয়া হয়েছে। বিনপুর ২-এ ১ হাজার ৬৯৮টির মধ্যে ১ হাজার ২৮১টি, দাঁতন ২-এ ১ হাজার ৩০০টির মধ্যে ১ হাজার ৫২টি, সবংয়ে ৩৭ হাজার ৪০টির মধ্যে ৩৬ হাজার ৬১২টি দেওয়া হয়েছে। কেন এখনও লক্ষ্যমাত্রার কাছাকাছি পৌঁছনো গেল না? জেলা শিল্প কেন্দ্রের এক আধিকারিক বলেন, “পরিচয়পত্রের জন্য শুরুতে শিল্পীদেরই আবেদন করতে হয়। কিছু ক্ষেত্রে এ নিয়ে শিল্পীদের মধ্যে সচেতনতার অভাব আছে। তাই তাঁরা আবেদন করছেন না। সর্বত্র সমান সচেতনতা গড়ে তোলার চেষ্টা চলছে। একাংশ কর্মীও হয়তো যে ভাবে কাজ করা উচিত, সে ভাবে করছেন না। শিল্পীদের কাছে পৌঁছনোও জরুরি। তাঁদের বোঝাতে হবে। তবেই তাঁরা এগিয়ে আসবেন।”
কৃষির পর ক্ষুদ্র শিল্পের মাধ্যমেই সব থেকে বেশি কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা সম্ভব। রাজ্য সরকারও তাই ক্ষুদ্র শিল্পের উপর বাড়তি গুরুত্ব দিচ্ছে। ক্ষুদ্র শিল্পে ঋণের জন্য সরকারি প্রকল্প রয়েছে। যেমন, প্রধানমন্ত্রী কর্মসংস্থান সৃষ্টি প্রকল্প বা কর্মসৃজন প্রকল্প। হস্তশিল্পীর পরিচয়পত্র না থাকলেও এই প্রকল্পে ঋণ মেলে হয়তো। তবে, এই সুবিধা পেতে পরিচয়পত্র নেওয়ার উপরে চিরকালই জোর দিয়ে এসেছে প্রশাসন। |
|
|
|
|
|