ভলিবলে ক্রমশ কমজোরি হচ্ছে গ্রামীণ বাংলা
শীতের রাতে আলো জ্বেলে ভলিবল খেলা চলছে গ্রামীণ হাওড়ার আনাচে-কানাচে। সন্ধ্যা থেকে শুরু হয়ে কোথাও-কোথাও গভীর রাত পর্যন্ত চলছে খেলা। কিন্তু এর পরেও ভলিবল প্রতিযোগিতাগুলিতে গ্রামীণ হাওড়ার ভলিবল দলের দেখা পাওয়াই ভার। সেখানে মাঠ দাপাচ্ছে শহর হাওড়ার ক্লাবগুলি।
গত ১২ জানুয়ারি মধ্য হাওড়ার কৈলাস ব্যানার্জি লেনে সরস্বতী ক্লাবের মাঠে চলছিল প্রদীপ্ত মেমোরিয়াল ভলিবল প্রতিযোগিতা। ২০১২ সালে বিশাখাপত্তনমে এক পথ দুর্ঘটনায় মারা গিয়েছিলেন বছর বাইশের খেলা অন্ত প্রাণ যুবক প্রদীপ্ত মণ্ডল। তাঁর স্মৃতিতে এই নিয়ে দ্বিতীয় বছর সরস্বতী ক্লাবের সহযোগিতায় প্রতিযোগিতা ব্যবস্থা করেছেন প্রদীপ্তর বাবা সুমন্ত মণ্ডল ও মা পাপিয়াদেবী। আটটি ভলিবল দলের মধ্যে সাতটি দলই ছিল হাওড়া শহর এলাকার। সুমন্তবাবু জানালেন, গত বছর প্রতিযোগিতার আটটি দলের সব ক’টি এবং এ বছর আট দলের সাতটিই ছিল হাওড়া শহরের।
গ্রামের দিকে কমে যাচ্ছে এমন দৃশ্য। মধ্য হাওড়ায় একটি ক্লাবের খেলা। —নিজস্ব চিত্র।
শুধু সেখানে নয়, জেলার যেখানেই ভলিবল প্রতিযোগিতা হচ্ছে, সর্বত্র প্রায় একই ছবি। জেলা ভলিবল দলেও গ্রামীণ হাওড়ার খেলোয়াড়ের সংখ্যা শহরের তুলনায় অনেক কম। অথচ কয়েক বছর আগেও হাওড়া জেলা ভলিবল দলের ‘সাপ্লাই লাইন’ ছিল গ্রাম। জেলা ভলিবল সংস্থার কর্তারা জানান, আশির দশকের মাঝামাঝি, এমনকী নব্বই দশকের গোড়াতেও ব্লকভিত্তিক টুর্নামেন্ট চালু ছিল। বাউড়িয়া, উলুবেড়িয়া, জুজারসাহা, বালি-জগাছা, ডোমজুড়ের বেশ কিছু ক্লাব জেলা লিগে নিয়মিত খেলত। কিন্তু সে সব এখন অতীত। জেলা ভলিবল সংস্থা সূত্রে জানা যায়, সেই লিগে গ্রামীণ হাওড়ার দলের সংখ্যা এখন মোটে দুই। গ্রামে ভলিবল টুর্নামেন্টের সংখ্যাও আগের থেকে অনেক কমে গিয়েছে। স্কুলগুলিতে আগে যে উৎসাহে ভলিবল খেলা হত, তা-ও আর হয় না বললেই চলে।
জেলা ভলিবল সংস্থার অন্যতম কর্তা বরুণ দাস জানান, শীতের বিকেল ও রাতে গ্রামগুলিতে যে খেলা হয়, তার ৯০ শতাংশই শখের ভলিবল। খেলার বেশির ভাগ নিয়ম না মেনে নিছক বিনোদনের জন্যই খেলা। তবে তার মধ্যেই কখনও-কখনও ভাল প্রতিভার খোঁজ মেলে। কিন্তু গ্রামের মাঠে ভাল কোচ ও নিয়মিত অনুশীলনের পরিকাঠামো না থাকায় তারা হয় হারিয়ে যায়, নয়তো শহরের দলে ‘খেপ’ খেলতে শুরু করে। অনেক সময়ে গ্রামের কোনও ক্লাব শহরের টুর্নামেন্টে খেলতে নামলেও তাদের দলে ভূমিপুত্রের সংখ্যা থাকে হাতে-গোনা। বেশির ভাগই বহিরাগত।
আবার গ্রামের খেলোয়াড়দের অভিযোগ, জেলা ভলিবল সংস্থা মূলত হাওড়া শহরের ক্লাবগুলিকে নিয়েই কাজ করে। গ্রামীণ হাওড়ায় এখনও অনেক প্রতিভাবান খেলোয়াড় আছে। মূলত ‘গাইড’-এর অভাবেই তারা বেশি দূর যেতে পারে না। ডোমজুড়ের ভাণ্ডারদহ নিউ অ্যাথলেটিক ক্লাবের ছেলেরা গ্রামেরই একটি মাঠে সারা শীতকাল রোজ রাতে অনুশীলন করেন। ওই ক্লাবের খেলোয়াড় মৃণেন্দু নস্করের মতে, “গ্রামের ভলিবলে প্রধান সমস্যা হল ভাল কোচের অভাব। তা ছাড়া, কেউ যদি খুব ভাল খেলেও, সে জেলাস্তরে সুযোগ পাবে কী করে? যাঁরা জেলার দল গড়েন, তাঁরা মাঝে-মধ্যে গ্রামের মাঠগুলিতে এলে ভাল হয়।”
জেলার কর্তাদের দাবি, গ্রামের যে ক্লাবগুলি নিয়মিত ভলিবল অনুশীলন করে, তারা যদি সামান্য টাকা খরচ করতে রাজি থাকে (কোচের যাতাযাত ও খাওয়া খরচ বাবদ), তারা কোচ দিতে প্রস্তুত। কিন্তু ক্লাবগুলিকে আগে পরিকাঠামো তৈরি করতে হবে। জেলা ভলিবল সংস্থার সম্পাদক চঞ্চল গড়াই মনে করেন, গ্রামে যাঁরা ভলিবল খেলেন, তাঁরা সাধারণত লিগ খেলতে আগ্রহী হন না। শুধু নকআউট টুর্নামেন্ট খেলতে চান। কিন্তু ভাল খেলোয়াড় হতে গেলে লিগ খেলা জরুরি। চঞ্চলবাবু বলেন, “জেলা লিগে খেলার জন্য যদি গ্রামের কোনও ক্লাব আমাদের কাছে আবেদন করে, নিশ্চয়ই ভেবে দেখব। এ ছাড়া, জেলা সংস্থার উদ্যোগে গ্রামীণ হাওড়ায় নকআউট টুর্নামেন্ট চালুর চেষ্টাও চলছে।”





First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.