পুর-নির্বাচন হয়ে গিয়েছে দু’মাস হল। এখনও গড়া হয়নি হাওড়ার পূর্ণাঙ্গ মেয়র পরিষদ। রাজ্যের পুরমন্ত্রী বলছেন, পুরবোর্ডে কারা থাকবেন, তা নিয়ে এখনও আলোচনা চলছে।
এ দিকে, মেয়র পারিষদদের নাম ঘোষণা না হওয়ায় বন্ধ হয়ে গিয়েছে হাওড়া পুরসভার বিভিন্ন কাজ। বিপাকে পড়েছেন সাধারণ মানুষ। পুরসভা সূত্রে খবর, গত বছর ২২ নভেম্বর নির্বাচনের আগে থেকেই প্রায় বন্ধ হয়ে রয়েছে সম্পত্তি ও জমির নকশা অনুমোদন, মিউটেশন, অ্যাসেসমেন্ট-সহ পুরসভার অন্যান্য কাজ। একই ভাবে প্রায় অকেজো বরো অফিসগুলি। কারণ এখনও পর্যন্ত বরো চেয়ারম্যান নির্বাচিত না হওয়ায় বরো অফিসগুলির আর্থিক লেনদেন সংক্রান্ত সমস্ত কাজই থমকে। দিনের পর দিন বরো অফিস ও পুরসভায় এসে নাজেহাল হচ্ছেন মানুষ। কোটি কোটি টাকা রাজস্ব আদায় থেকে বঞ্চিত হচ্ছে পুরসভাও।
দু’মাস পরেও কেন ঘোষণা হল না মেয়র পারিষদদের নাম? পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম বলেন, “সরকারি পদ্ধতি মেনে মেয়র পরিষদের সংখ্যা বাড়াতে গিয়েই দেরি হচ্ছে। তবে গেজেট নোটিফিকেশন হয়ে গিয়েছে। কে কে মেয়র পারিষদ হবেন তা নিয়ে এখনও কথা চলছে। আশা করছি খুব শীঘ্রই নাম ঘোষণা করা হবে।”
গত নির্বাচনে বামফ্রন্টকে পরাজিত করে হাওড়ার পুর-বোর্ড গড়ে তৃণমূল। ৫০টি ওয়ার্ডের মধ্যে ৪৫টিই তারা দখল করে। নতুন বোর্ডের মেয়র ও কাউন্সিলরদের শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানও হয়ে যায় গত ১১ ডিসেম্বর। সেই সঙ্গে তৃণমূলের পক্ষ থেকে জানানো হয়, এ বার মেয়র পারিষদদের সংখ্যা বাড়িয়ে ৫ থেকে ১০ করা হবে। বরোর সংখ্যা ৫ থেকে বেড়ে হবে ৭। এ সব করার জন্য যে সরকারি পদ্ধতি রয়েছে, তা-ও শুরু হয়েছে বলে দলের তরফে খবর।
পুর-নিবার্চনে জেতার পরেই নতুন বোর্ডের জন্য হাওড়ার উন্নয়ন খাতে ১১০ কোটি টাকা বরাদ্দ করেছে রাজ্য। মেয়রের নেতৃত্বে উন্নয়নের কাজও শুরু হয়েছে। এরমধ্যে দরপত্র ডেকে ৪৫টি রাস্তা মেরামতের কাজ-সহ ত্রিফলা লাগানোর কাজ শুরু হয়েছে পুর-এলাকা জুড়ে। কাজ শুরু হয়েছে বর্ষার আগেই নিকাশির উন্নতির জন্যও।
মেয়র পারিষদদের নাম ঘোষণা না হওয়ায় মূলত বিপাকে পড়েছেন সাধারণ মানুষ। কারণ পুরসভার নিয়ম অনুযায়ী মেয়র পরিষদ বৈঠক বা বরো কমিটির বৈঠকে নকশা বা মিউটেশন অনুমোদিত না হলে কোনও নির্মাণকাজ করা যায় না। অনুমোদিত নকশা জমা না দিলে ঋণ মেলে না ব্যাঙ্কেও। মেয়র পারিষদদের নাম না ঘোষণা হওয়ায় এবং দফতর বণ্টন না হওয়ায় সব কাজই থমকে গিয়েছে বলে অভিযোগ। প্রতিনিয়ত খোঁজ নিতে এসে নাজেহাল হচ্ছেন আবেদনকারীরা।
যেমন ৪৬ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা গৌতম কুণ্ডু। অভিযোগ, গত পাঁচ মাস ধরে পুরসভায় ঘোরাঘুরির পরেও তাঁর জমির নকশা অনুমোদিত হয়নি। ফলে বাড়ি তৈরির কাজও করতে পারেননি। গৌতমবাবু বলেন, “গত দু’মাস ধরেই শুনছি মেয়র পরিষদ বৈঠক হলেই নকশার অনুমোদন পেয়ে যাব। কিন্তু আজ পর্যন্ত মেয়র পরিষদের বৈঠক হল না।” একই অবস্থা ৭ নম্বর ওয়ার্ডের প্রবীণ বাসিন্দা প্রৌঢ়া রমা দাসের। তিনি বলেন, “শুরুতেই নতুন বোর্ড এমন করছে কেন জানি না। এর ফলে শুধু আমাদের হয়রানি হচ্ছে তা নয়, নকশা বা মিউটেশন বাবদ অর্থও পুরসভা আয় করতে পারছে না।”
মেয়র পারিষদ গঠিত না হওয়ায় যে পুরসভা রাজস্ব আদায়ে বঞ্চিত হচ্ছে, তা মানছেন পুরকর্তারাও। এক পুরকর্তা বলেন, “এটা ঠিকই গত কয়েক মাসে পুরসভা বহু টাকা রাজস্ব ক্ষতি হয়েছে। পুরসভায় এসে কাজ না পেয়ে মানুষও নাজেহাল হচ্ছেন।”
যদিও মেয়র পরিষদ গঠন না হওয়ায় পুরসভা পরিচালনায় সমস্যা হচ্ছে না বলেই দাবি মেয়র রথীন চক্রবর্তীর। তিনি বলেন, “এ জন্য উন্নয়নের কাজ করতে গিয়ে বা পুরসভা চালানোর ক্ষেত্রে তেমন সমস্যা হচ্ছে না। আমার মনে হয় খুব শীঘ্রই মেয়র পরিষদ গড়া হয়ে যাবে।” |