স্কুলে সরস্বতী পুজোর খাবার খেয়ে অসুস্থ হয়ে পড়ল বেশ কিছু ছাত্রছাত্রী। খাবারে বিষ মেশানোর অভিযোগ তুলে এক পার্শ্বশিক্ষককে বেধড়ক মারধর করেন কিছু অভিভাবক ও গ্রামবাসী। দুই শিক্ষিকাকেও চুলের মুঠি ধরে মারধর করা হয়। পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে এলে হেনস্থা করা হয় জেলা প্রাথমিক স্কুল শিক্ষা দফতরের মহিলা পরিদর্শককেও।
বৃহস্পতিবার দুপুরে হুগলির চণ্ডীতলার কৃষ্ণরামপুরের সতীরানি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের এই ঘটনায় পার্শ্বশিক্ষক সঞ্জিৎ কোলের বিরুদ্ধে এফআইআর করেন প্রধান শিক্ষক। সঞ্জিৎবাবুকে ভর্তি করানো হয়েছে চণ্ডীতলা গ্রামীণ হাসপাতালে। তাঁকে আটক করা হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। ওই হাসপাতালেই ৫৫ জন শিশুকে প্রাথমিক চিকিৎসার পরে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে বলে জানান চণ্ডীতলা ২ বিএমওএইচ অমিত সরকার। তিনি বলেন, “খাদ্যে বিষক্রিয়ার জেরেই শিশুদের শরীর খারাপ হয়েছে বলে মনে হচ্ছে।” |
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, চণ্ডীতলা ১ ব্লকের ওই স্কুলে এ দিন সরস্বতী পুজোর খাওয়াদাওয়া চলছিল। মেনু ছিল লুচি, আলুর দম, চাটনি এবং রসগোল্লা। খাওয়া সেরে বাড়ি ফিরে কয়েক জন ছাত্রছাত্রী অসুস্থ বোধ করতে থাকে। গলা-বুক জ্বালা শুরু হয় তাদের। আতঙ্কিত হয়ে পড়েন অভিভাবকেরা। শিশুদের একে একে আনা হয় হাসপাতালে।
এ দিকে, ঘটনার খবর এলাকায় ছড়িয়ে পড়তেই উত্তেজিত কিছু গ্রামবাসী এবং অভিভাবক স্কুলে চড়াও হন। খাবারে বিষ মেশানোর অভিযোগ তুলে বেধড়ক মারধর করা হয় সঞ্জিৎবাবুকে। অন্য দুই শিক্ষিকার উপরেও জনরোষ গিয়ে পড়ে। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে এসেছিলেন সংশ্লিষ্ট প্রাথমিক সংসদের স্কুল পরিদর্শক জয়শ্রী বিশ্বাস। হেনস্থা করা হয় তাঁকেও। চণ্ডীতলা থানা থেকে বিশাল বাহিনী গিয়ে পরিস্থিতি সামাল দেয়। বিডিও পৃথ্বীশ সামন্তও স্কুলে আসেন। চণ্ডীতলা ১ বিএমওএইচ পার্থপ্রতিম গুহর নেতৃত্বে পরে চিকিৎসক দল স্কুলে
গিয়ে খাবারের নমুনা সংগ্রহ করে। পার্থপ্রতিমবাবু বলেন, “খাবারে কিছু মেশানো হয়েছিল বলেই মনে হচ্ছে। তবে পরীক্ষার পরে তা স্পষ্ট ভাবে জানানো যাবে।” হুগলি জেলা প্রাথমিক শিক্ষা সংসদের চেয়ারম্যান পরেশ সামন্তের প্রাথমিক প্রতিক্রিয়া, “খুবই ভয়ঙ্কর ঘটনা। পূর্ণাঙ্গ তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
স্কুল সূত্রের খবর, প্রধান শিক্ষক হিমাদ্রিপ্রসাদ আদকের সঙ্গে সঞ্জিতের বিবাদ দীর্ঘদিনের। এ দিনের ঘটনার সঙ্গে তার কোনও যোগসূত্র আছে কিনা, তা নিয়েও অনেকের প্রশ্ন আছে। বিডিও বলেন, “ব্যাপারটা শুনেছি। খতিয়ে দেখা হচ্ছে।” প্রধান শিক্ষক এবং সঞ্জিৎবাবু এ ব্যাপারে মন্তব্য করতে চাননি।
|