|
|
|
|
আপের জোড়া তদন্তের ধাক্কা, ভোটের আগে প্যাঁচে কংগ্রেস
নিজস্ব সংবাদদাতা • নয়াদিল্লি
৬ ফেব্রুয়ারি |
একই দিনে শরিক কংগ্রেসকে জোড়া ধাক্কা দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়ালের।
এক দিকে ১৯৮৪ সালের শিখ দাঙ্গা কাণ্ডে বিশেষ তদন্ত ট্রাইবুন্যাল (সিট) গড়ার জন্য উপরাজ্যপাল নজীব জঙ্গকে সুপারিশ করলেন কেজরিওয়াল। অন্য দিকে দিল্লির পূর্বতন মুখ্যমন্ত্রী শীলা দীক্ষিতের বিরুদ্ধে দুর্নীতি মামলায় তদন্ত মামলাও শুরু করার নির্দেশ দিল প্রশাসন। ২০১০ সালের কমনওয়েলথ গেমসের সময়ে রাস্তায় আলো লাগানো নিয়ে শীলা দীক্ষিত সরকারের বিরুদ্ধে যে দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছিল, আজ তা তদন্ত করে দেখার জন্য দুর্নীতিদমন শাখাকে নির্দেশ দিয়েছেন কেজরিয়াল। এর আগে সরাসরি শীলা সরকারের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ তুলেছিল কনট্রোলার অ্যান্ড অডিটর জেনারেল (সিএজি) ও শুংলু কমিশন।
নির্বাচনের আগে যে কংগ্রেসের দুর্নীতির বিরুদ্ধে সব থেকে সরব ছিলেন অরবিন্দ কেজরিওয়াল, সরকার গঠনে তাদেরই সমর্থন নিতে হয়েছে তাঁকে। তাই আপ নেতৃত্ব কংগ্রেসের দুর্নীতির তদন্ত আদৌ করবে কি না, সেই প্রশ্নে প্রথম থেকেই সরব রয়েছে বিজেপি শিবির। আজ ওই তদন্ত শুরু করার নির্দেশ দিয়ে সাময়িক ভাবে বিজেপির মুখ বন্ধ করলেন কেজরিওয়াল। আজ দিল্লি সরকার জানিয়েছে, সে সময়ে সিএজি ও শুংলু কমিটি তাদের রিপোর্টেও বলেছিল, কমনওয়লেথ গেমসের আগে একাধিক অযোগ্য সংস্থাকে রাস্তায় আলো লাগানোর বরাত দেওয়া হয়। অযোগ্য সংস্থাগুলিকে বরাত দিতে নিয়ম পরিবর্তনেও পিছপা হয়নি শীলা সরকার। আজ রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী মণীশ সিসৌদিয়া বলেন, “ইতিমধ্যেই দুর্নীতিদমন শাখা তদন্ত চালিয়ে ওই মামলায় দুর্নীতির প্রমাণ পেয়েছে। তাদের আজ অভিযোগ দায়ের করে তদন্ত শুরু করতে বলা হয়েছে।” প্রাথমিক ওই অভিযোগে শীলা দীক্ষিতের নাম না-থাকা নিয়েও অবশ্য আজ আগাম যুক্তি দিয়েছেন সিসৌদিয়া। তিনি বলেছেন, “কোনও ব্যক্তিকে নিশানা করাটা আমাদের লক্ষ্য নয়। নিরপেক্ষ তদন্ত হবে।”
দুর্নীতির তদন্তের পাশাপাশি আজ কেজরিওয়ালের মন্ত্রিসভা শিখ দাঙ্গার ঘটনায় ‘বিশেষ তদন্ত ট্রাইব্যুনাল’ (সিট) গঠনের বিষয়েও ঐকমত্যে পৌঁছয়। মন্ত্রিসভার ওই সুপারিশ পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে উপ-রাজ্যপালকেও। ওই সুপারিশে বলা হয়েছে আহুজা কমিটির রিপোর্ট অনুযায়ী ইন্দিরা গাঁধী হত্যার পরে দিল্লির দাঙ্গায় ২৭৩৩ জন মারা যান, যাদের অধিকাংশই শিখ। কিন্তু দেখা গিয়েছে গত ত্রিশ বছরে খুব অল্প সংখ্যক মামলাতেই দোষীরা শাস্তি পেয়েছেন। কোনও ব্যক্তি, বিশেষ করে কোনও রাজনৈতিক নেতার বিরুদ্ধে প্রতিপত্তি খাটিয়ে প্রমাণ নষ্ট করার অভিযোগ উঠলে তাঁর বিরুদ্ধেও নতুন করে অভিযোগ দায়েরের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। সরকার জানিয়েছে, ওই ট্রাইব্যুনাল গঠনের এক বছরের মধ্যে তাদের তদন্ত শেষ করতে হবে।
একই দিনে জোড়া ধাক্কায় আজ কিছুটা হলেও অস্বস্তিতে কংগ্রেস। দলের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, তদন্ত হোক। তাদের কিছু লুকোনোর নেই। কিন্তু যে ভাবে কেজরিওয়াল সরকার আজ শরিক দলেরই প্রতি যুদ্ধ ঘোষণা করেছে, তাতে ওই জোট কত দিন টেঁকে তা নিয়েও প্রশ্ন উঠে গিয়েছে। অনেকের মতে, আপ-এর ওই পদক্ষেপে দোটানায় কংগ্রেস। এই পরিস্থিতিতে সরকার থেকে সমর্থন তুললে তদন্ত হয়তো বন্ধ হবে, কিন্তু পাল্টা আক্রমণে বিরোধীরা বলবে দুর্নীতি ফাঁসের ভয়েই সমর্থন তুলেছে কংগ্রেস। আবার সমর্থন তুলে নেওয়ার অর্থ, ফের বিধানসভা ভোট। তা হলে রাজধানী থেকে সম্পূর্ণ মুছে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে কংগ্রেসের।
স্বস্তিতে নেই আপ-শিবিরও। আজ ফের বিতর্কের মুখে তাঁদের জন লোকপাল বিল। দু’দিন আগে দিল্লি মন্ত্রিসভায় এই বিল পাশ করে সরকার। নিয়মমতো তাতে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক ও রাষ্ট্রপতির সম্মতি থাকা প্রয়োজন হলেও তা নেননি তাঁরা। তাই আজ বিলের ভবিষ্যৎ নিয়ে প্রশ্ন তুলে দেশের সলিসিটর জেনারেল মোহন পরাশরন জানান, এতে কেন্দ্রের সম্মতি প্রয়োজন। আপ চাইছে ১৬ ফেব্রুয়ারি বিধানসভার বিশেষ অধিবেশনে ওই বিল পাশ করাতে। কেন্দ্রের সম্মতি ছাড়াই কেজরিওয়াল সরকার যদি ওই বিল পাশ করে, তা হলে পাশ হওয়া বিল আদৌও আইন হিসাবে গণ্য হবে কিনা, তা নিয়েও প্রশ্ন তৈরি হয়েছে।
|
|
|
|
|
|