বেহিসেবি বালি তোলায় বন্যার আশঙ্কা
ই নদীই তাঁদের বাঁচিয়ে রেখেছে। আবার সেই নদীর দিকে তাকিয়েই ভয়ে বুক কাঁপছে এলাকার বাসিন্দাদের। তাঁদের আশঙ্কা, নদী থেকে অত্যধিক পরিমাণে বালি তোলায় ভবিষ্যতে বন্যায় উজাড় হয়ে যেতে পারে গ্রামকে গ্রাম। তাই নদী থেকে বেহিসেবি বালি তোলা বন্ধ করার দাবিতে একজোট হয়ে পথে নামলেন এলাকার আদিবাসী সম্প্রদায়ের মানুষ। বৃহস্পতিবার মহম্মদবাজারের খইরাকুড়িতে তিলপাড়া জলাধারের উত্তর প্রান্তে রানিগঞ্জ-মোরগ্রাম ৬০ নম্বর জাতীয় সড়কের ঘটনা। ময়ূরাক্ষী নদীকে ঘিরে তাঁদের ওই আশঙ্কা ঘিরে প্রায় আড়াই ঘণ্টা ধরে চলল অবরোধ। পরে পুলিশের কাছ থেকে প্রয়োজনীয় আশ্বাস পেয়ে তাঁরা অবশ্য আন্দোলন প্রত্যাহার করে নেন।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, এ দিনের অবরোধকারীদের অধিকাংশই ছিলেন ভুতুরা পঞ্চায়েতের দুমুনি ও পাঁচপাথুর গ্রামের। তিলপাড়া জলাধারের পরেই ময়ূরাক্ষী নদী থেকে আর একটি শাখা নদী বের হয়। যা কানা নদী নামে পরিচিত। দুই নদী মুখের সামনেই গ্রাম দু’টি অবস্থিত।
ময়ূরাক্ষী নদীর পাড় থেকে বেআইনি ভাবে তুলে নেওয়া হচ্ছে বালি।
গ্রাম দু’টির বাসিন্দাদের অভিযোগ, যে হারে নদী থেকে বালি তোলা হচ্ছে, তাতে বর্ষায় বন্যার আশঙ্কা তৈরি হচ্ছে। কিন্তু সংশ্লিষ্ট জায়গায় এ নিয়ে বহুবার আবেদন করেও তাঁরা কোনও ফল পাননি। স্থানীয় বাসিন্দা সিধু সোরেন, পবন টুডু, হপন কিস্কু, দেবাংশী হেমব্রমদের অভিযোগ, “দীর্ঘদিন থেকে এই ভাবে বালি তোলা বন্ধের দাবি জানিয়ে এসেছি। তা নিয়ে পঞ্চায়েত ও ভূমি দফতরের কাছে গিয়েছি। কিন্তু কেউ-ই ব্যবস্থা নেয়নি।” তাঁরা জানান, এ দিন সকালেও নদী বাঁধের গা ঘেঁষে কয়েকটি গাড়ি বালি তুলছিল। তাদেরকে গ্রামবাসী বারণ করলে উল্টে গাড়ির লোকেরাই তাঁদের উপর হম্বিতম্বি করে বলে অভিযোগ। পবনরা বলেন, “ওদের চোখ রাঙানি দেখে মনে হল যেন আমরাই অপরাধ করছি! এরপরেই ক্ষুব্ধ গ্রামের মানুষ দু’টি ট্রাক্টর আটকে পথ অবরোধ শুরু করেন। সকাল ৯টা থেকে স্থানীয় খইরাকুড়ি বাস স্টপেজের কাছে শুরু হয় অবরোধ।
প্রশাসনিক ব্যবস্থার দাবিতে অবরোধ জাতীয় সড়কে।
এমনিতে তিলপাড়া জলাধারের সেতুর কাছাকাছি একাধিক বালি তোলার ঘাট আছে। অভিযোগ, তার সব ক’টাই অবৈধ। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই সঠিক নিয়ম ও পদ্ধতি না মেনেই বালি তোলা হয়। অতীতে এ ভাবে বালি তোলার জেরেই এলাকার মানুষ একাধিক বার বড় রকমের বন্যার মুখেও পড়েছে। কিন্তু তার পরেও এই চিত্র বদলায়নি একটুকুও। এ ভাবে ব্যাপক হারে বালি তোলার ফলে এখনও নদীর পাড় ভাঙছে। ফের তৈরি হচ্ছে বন্যার আশঙ্কা। আন্দোলনকারীদের আরও দাবি, বালি তোলার ঘাটের রাস্তা করতে গিয়ে নদী পাড়ের গাছও যথেচ্ছ ভাবে কেটে নেওয়া হচ্ছে। সব মিলিয়ে বন্যায় নদীর আশপাশের গ্রামগুলি নিশ্চিহ্ন হয়ে যাওয়ার আশঙ্কায় ভুগছেন। কিন্তু তার পরেও এ নিয়ে প্রশাসনের কোনও হুঁশ নেই বলেই স্থানীয় দুমনি, নরসিংহ পুর, কানিয়ারা আদিবাসী পাড়ার বাসিন্দাদের দাবি। তার জেরেই এ দিন দুই গ্রামের মানুষ একজোট হয়ে প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে পথ অবরোধ করেন বলে এলাকার মানুষ জানিয়েছেন।
আদিবাসীদের পথ অবরোধের খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে হাজির হন বীরভূম জেলা আদিবাসী গাঁওতা সংগঠনের নেতারাও। পৌঁছয় পুলিশও। গাঁওতার নেতারা ও পুলিশ আন্দোলনকারীদের সঙ্গে কথা বলে। তারপরেই ওই গ্রামবাসীরা আন্দোলন তুলে নেন। গাঁওতা নেতা সুনীল সোরেন বলেন, “গ্রামবাসীদের দাবি ন্যায্য। তবে তাঁরা জাতীয় সড়ক অবরোধ করতে চাননি। বাধ্য হয়েই করেছেন। পরে বুঝিয়ে বলাতে তাঁরা অবরোধ তুলে নেন।” এ দিনের ঘটনার পরেও প্রশাসন যদি নদীর বালি তোলা নিয়ে কোনও ব্যবস্থা না নেয়, তা হলে তাঁরাও এ নিয়ে বৃহত্তর আন্দোলনে নামবেন বলে জানিয়েছেন তিনি। এ দিনই পুলিশ দু’টি ট্রাক্টর ও চালকদের আটক করেছে।
এ দিকে, স্থানীয় ভুতুরা পঞ্চায়েতের বেহিড়া সংসদের তৃণমূল সদস্য সিরাজ খানের অভিযোগ, “ওই এলাকায় দীর্ঘদিন ধরেই অবৈধ ভাবে বালি হয়। এমনকী, কিছু অসাধু বালি ব্যবসায়ীনদী বাঁধের গাছ কেটে নেওয়া এবং বাঁধের গা থেকেও বালি তুলে ব্রিক্রি করে দিচ্ছে।” অন্য দিকে, মহম্মদবাজারের ভূমি ও ভূমি সংস্কার আধিকারিক অলোক দাস বলেন, “ঘটনার কথা জেলা ভূমি ও ভূমি সংস্কার আধিকারিককে জানিয়েছি। এ ব্যাপারে যা বলার তিনি বলবেন।” জেলা ভূমি ও ভূমি সংস্কার আধিকারিক শ্যামাশিস রায় অবশ্য জানিয়েছেন, অবরোধের খবর পেয়েই পুলিশকে ব্যবস্থা নিতে বলা হয়। তাঁর দাবি, “তিলপাড়া জলাধারের ৫ কিলোমিটারের মধ্যে বালি তোলা নিষেধ। সেই এলাকায় কেউ যদি বালি তোলেন, তা হলে তা অবৈধ। বিষয়টি দেখছি।”

—নিজস্ব চিত্র।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.