কোথাও মনমোহন সিংহ। কোথাও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আবার কোথাও বা স্বামী বিবেকানন্দ। সাদা অথবা হাল্কা নীল ডিমের খোলার উপর কেবলমাত্র একটি সরু সূচ দিয়ে শিল্পকর্ম ফুটিয়ে তোলেন কালনা শহরের শ্যামগঞ্জ পাড়ার যুবক প্রসেনজিৎ দাস।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, ত্রিশোর্ধ্ব প্রসেনজিৎবাবুর কোনও প্রথাগত বিদ্যা নেই। শিল্পকর্ম তাঁর পেশাও নয়। ভাল লাগে বলেই ডিমের খোলার উপর সূচ দিয়ে নিত্য নতুন শিল্পকর্ম তৈরি করেন তিনি। কালনা আদালতে ঢোকার মুখে রাস্তার পাশেই বাড়ি প্রসেনজিৎবাবুর। টিনের ছাউনি দেওয়া এক চিলতে ঘরের মেঝে, বিছানা, শো কেস, আলমারিতে ছড়ানো বিভিন্ন আকৃতির ডিমের খোলা। সঙ্গী বলতে শুধু একটি তুরপুন। মাথায় লাগানো একটি সরু সূচ। তা দিয়েই কোনও ডিমের খোলায় এঁকে ফেলছেন শ্রীরামকৃষ্ণ। কোথাও বা নেতাজি, মান্না দে বা লতা মঙ্গেশকর। প্রসেনজিৎবাবুর কথায়, “মন যখন যা করতে চায় তখন ডিমের খোলাতেই তা এঁকে ফেলি। মান্না দে মারা যাওয়ার পরেই ডিমের খোলায় তাঁর ছবি এঁকে ফেলেছিলাম।” |
প্রসেনজিৎবাবু জানান, ডিমের খোলার উপর আঁকার বিষয়টি প্রথম মাথায় আসে আট বছর আগে। ডিমের খোলার মধ্যে মোম এবং ভিনিগার পুরে ছোট ছুরি দিয়ে আঁকার চেষ্টা করেন তিনি। তবে সে বার সফল হননি। এ বারের পুজোয় একটি গয়নার দোকানে তুরপুন দেখে তাঁর মনে হয়েছিল, তুরপুনের সাহায্যে ডিমের খোলার উপর আঁকা যেতেই পারে। এর পরে ওই ধরনের একটি তুরপুন জোগাড় করে একের পর এক আঁকার কাজ করে চলেছেন প্রসেনজিৎবাবু। কী বলছেন প্রসেনজিৎবাবুর স্ত্রী? চম্পাদেবীর কথায়, “স্বামী দুর্গাপুরের একটি বেসরকারি সংস্থায় কাজ করেন। শনিবার বাড়ি ফেরেন। রবিবার রাতে কর্মস্থলে ফিরে যান। যে দু’দিন তিনি বাড়িতে থাকেন, তার বেশির ভাগটাই আঁকার উপর ব্যয় করেন।”
প্রসেনজিৎবাবুর বাবা সজল দাস পেশায় রাজমিস্ত্রী। মা শেফালি দাস বিড়ি বাঁধেন। মাত্র ১২ বছর বয়সেই ছেলের আঁকার প্রতি আগ্রহের বিষয়টি লক্ষ্য করেন তাঁরা। ১২ বছর বয়সে স্থানীয় এক শিল্পীর কাছে ছেলেকে আঁকা শিখতে পাঠিয়েছিলেন তাঁরা। ঠাকুমা সন্ধ্যা দাস জানান, প্রাথমিক স্কুলে পড়ার সময়েই তাঁর নাতি আনন্দবাজার পত্রিকা মাথায় যে ভাবে লেখা থাকে, সে ভাবে হাতে এঁকে ফেলতো। এর পরে কখনও দশ পয়সার উপর দুর্গা প্রতিমা, আবার কখনও চকের মধ্যে দেব-দেবী, মণিষির মূর্তি এঁকেছে সে।
কালনা মহকুমা রেফারি অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি তপন দেবনাথ বলেন, “এ বার সরস্বতী পুজোয় প্রসেনজিতের তৈরি শিল্পকর্ম যাতে কোনও মণ্ডপে ঠাঁই পায় তার চেষ্টা চলছে।” কী বলছেন প্রসেনজিৎবাবু? “একটু বড় রাজহাঁসের ডিম খুঁজছি। তাতে আরও একটি মুখ্যমন্ত্রীর মূর্তি তৈরির করার ইচ্ছে আছে। সেটি রাজ্যের ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প দফতরের স্বাধীন দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রী স্বপন দেবনাথের মারফৎ নতুন বছরে মুখ্যমন্ত্রীকে উপহার হিসেবে পাঠানোর পরিকল্পনা রয়েছে।” |