সাজা হলে জ্বালা জুড়োবে, বলছেন নিষাদ
রও একটা ধাপ পেরিয়ে কিছুটা স্বস্তি কাটোয়ার নন্দীগ্রামের সামন্ত পরিবারে।
তার যখন তিন বছর বয়স, গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান বাবা। প্রায় সাত বছর পরে বৃহস্পতিবার কংগ্রেস কর্মী তুহিন সামন্ত হত্যা মামলার চার্জ গঠনের খবর শুনে বাবার ছবির দিকে তাকিয়ে সেই ছেলে ত্রিদিব বলে, “আমার বাবাকে কে মেরেছে জানি না। তবে তার শাস্তি চাই।”
কয়েক মাস আগেই সামন্ত-বাড়ির দোতলায় টাঙানো হয়েছে তুহিনের ছবি। এ দিন যখন চার্জ গঠনের খবর আসে, তুহিনের স্ত্রী নিষাদদেবী সেই ছবির তলায় দাঁড়িয়েছিলেন। জানতে পারেন, মূল অভিযুক্ত তৎকালীন কাটোয়া থানার ওসি দেবজ্যোতি সাহা ছাড়াও সিপিএমের বর্ধমান জেলা কমিটির সদস্য তপন কোনার, কাটোয়া জোনাল সদস্য ঈশ্বর দাস, শেখ কামালউদ্দিন, বিকাশ কোনার, কাটোয়া ২ পঞ্চায়েত সমিতির প্রাক্তন সভাপতি হরিনারায়ণ সামন্ত, কৃষক নেতা আশিস হাজরা ও বৃন্দাবন ঘোষের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছে। খবর শুনেই কেঁদে ফেলেন নিষাদদেবী। বলেন, “বুকে অনেক কষ্ট নিয়ে আছি। ওরা সাজা পেলে মনের জ্বালা কিছুটা হলেও কমবে।”
দশ বছরের ত্রিদিব এখন মেঝিয়ারিতে একটি বেসরকারি স্কুলে চতুর্থ শ্রেণির ছাত্র। একই শ্রেণিতে পড়ে তার খুড়তুতো বোন তৃষা। ঘটনার পরে সাত বছরে তুহিনদের বাড়িতে অনেক পরিবর্তন এসেছে। বাড়ি ঢোকার মুখে দু’টি গোলা ছিল। এখন রয়েছে একটি। বাড়ির ভিতরে আর একটি মাটির বাড়িতে থাকতেন তুহিনের ঠাকুমা। তিনি গত বছর মারা গিয়েছেন। সেই সঙ্গে ভাঙা পড়েছে মাটির বাড়িটিও। কিন্তু এখনও ওই বাড়ির একতলায় তুহিনের কোনও ছবি নেই। এই তলায় থাকেন তুহিনের বাবা, অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক শরদিন্দুবাবু ও মা কল্পনাদেবী। তাঁরা বলেন, “বড় ছেলে দেওয়ালে ছবি হয়ে ঘরে রয়েছে, তা কি দেখা যায়!”
এই স্কুল গেটের সামনেই মারা গিয়েছিলেন তুহিনবাবু। —নিজস্ব চিত্র।
তুহিনের ছেলের নামে কাটোয়া-বর্ধমান ও কাটোয়া-আগড়ডাঙা রুটে দু’টি বাস রয়েছে। আছে ২৫ বিঘার মত খেত জমি। বাড়িতে বিশ্বকর্মা পুজো হত। কার্তিকের মূর্তি আসত। সরস্বতী পুজোও হত। পুজো ঘিরে জমজমাট থাকত বাড়ি। এখন আর এ বাড়িতে পুজো হয় না। কথা বলার সময়ে বাইরে থেকে মাইকে ভেসে আসছিল সরস্বতী পুজোর বিসর্জনের আওয়াজ। কল্পনাদেবী বলেন, “মাইকের আওয়াজ ভাল লাগে না। দরজা-জানলা বন্ধ করে ঘরের ভিতরে থাকি। ত্রিদিব, তৃষারাও কোনও অনুষ্ঠানে যেতে চায় না।” কোনও অনুষ্ঠানে যান না নিষাদদেবীও। তিনি বলেন, “সংসারের কাজের পাশাপাশি মা ও দেওরকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাওয়া আমার দায়িত্ব।” তিনি আবার কাটোয়া ২ পঞ্চায়েত সমিতির শিক্ষা কর্মাধ্যক্ষ। জিতেছেন কংগ্রেসের হয়েই। তাঁর কথায়, “ওখানেও আমাকে সময় দিতে হয়। সবাই খুব সম্মান করেন।”
শরদিন্দুবাবু বলে চলেন, “ছেলের মৃত্যুর পরে দু’বছর খুবই ভেঙে পড়েছিলাম। এক দিন নাতিকে নিয়ে বাড়ির সামনে রাস্তায় ঘুরছি, তখন আমার এক ছাত্র বলে, ‘স্যার নাতিকেই ছোট তুহিন মনে করে বড় করুন। মনের জোর ফিরে পাবেন।’ ত্রিদিবকে বড় করাই আমার লক্ষ্য। পড়াশোনায় মন রয়েছে। ওর বাবাও তো পড়াশোনা করত।” বৃদ্ধ দম্পতি জানান, নাতির মনে যাতে বিরূপ প্রতিক্রিয়া তৈরি না হয় সে জন্য তুহিনের মৃত্যুর ঘটনা নিয়ে বাড়িতে কোনও কথা হয় না। তাঁদের কথায়, “খুনিদের নিশ্চিত শাস্তি হবে— এ বিশ্বাস রয়েছে।”
কাটোয়ার বিধায়ক রবীন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায় বলেন, “আইনের প্রতি আমাদের ভরসা রয়েছে। আইনই খুনিদের শাস্তি দেবে।” সিপিএমের বর্ধমান জেলা কমিটির সদস্য তথা তুহিন-হত্যা মামলায় অন্যতম অভিযুক্ত তপন কোনার বলেন, “আমরা নির্দোষ। আইনের পথেই মোকাবিলা করব।”
তুহিন হত্যা মামলা
চাণ্ডুলি গ্রামে স্কুল ভোট চলাকালীন খুন হন কংগ্রেস কর্মী তথা কান্দি বিমল চন্দ্র আইন কলেজের শিক্ষক তুহিন সামন্ত। গুলি চালানোর অভিযোগ ওঠে ওসি দেবজ্যোতি সাহার বিরুদ্ধে। ওই দিনই কাটোয়া থানায় ওই ওসির বিরুদ্ধে ‘অনিচ্ছাকৃত মৃত্যু ঘটানোর’ (৭/২০০৭) অভিযোগ করেন এক এস আই।
নিহতের ভাই তুষার সামন্তের অভিযোগের ভিত্তিতে কাটোয়ার এসিজেএম আদালত দেবজ্যোতি সাহা ও সিপিএমের সাত নেতার বিরুদ্ধে ‘ষড়যন্ত্র করে খুন’-এর মামলা দায়ের করার জন্য পুলিশকে নির্দেশ দেয় (৬৬/২০০৭)।
কলকাতার গড়িয়া থেকে দেবজ্যোতি সাহাকে গ্রেফতার করে সিআইডি।
সিআইডির আবেদনের ভিত্তিতে আদালত পুলিশের ও নিহতের ভাইয়ের অভিযোগ দুটিকে ‘একত্র’ (ট্যাগ) করার নির্দেশ দেয়।
জামিন পান দেবজ্যোতি সাহা-সহ অন্য অভিযুক্তেরা।
কাটোয়া এসিজেএম আদালতে চার্জশিট জমা দেয় সিআইডি। ষড়যন্ত্র করে খুন করার অভিযোগ আনা হয় সমস্ত অভিযুক্তের বিরুদ্ধে।
বর্ধমান জেলা আদালতে মামলা স্থানান্তরের জন্য বারবার আবেদন করেন অভিযুক্তেরা। যদিও আবেদন খারিজ করে দেন বিচারক।
কাটোয়ার জেলা ও দায়রা বিচারকের এজলাসে হল চার্জ গঠন।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.