তুহিন খুনে চার্জ গঠন, বিচারের অপেক্ষায় পরিবার
ংগ্রেস কর্মী তুহিন সামন্ত হত্যার সাত বছরের মাথায় অবশেষে বিচার প্রক্রিয়া শুরু হতে চলেছে। বৃহস্পতিবার কাটোয়ার অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা বিচারক শুভ্রজ্যোতি বসুর এজলাসে মামলার চার্জ গঠন করা হয়েছে।
২০০৭ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি একটি স্কুল নির্বাচনের সময়ে যিনি নিজের পিস্তল থেকে তুহিনকে গুলি করেন বলে অভিযোগ, বর্ধমানের কাটোয়া থানার সেই প্রাক্তন ওসি দেবজ্যোতি সাহা এ দিন আদালতে হাজির ছিলেন। সিআইডি-র তরফে সরকারি কৌঁসুলি অসীম রায়চৌধুরী যখন তাঁর বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করে খুন এবং অস্ত্র আইনের ধারায় মামলা রুজু করার কথা জানাচ্ছেন, কাঠগড়ায় মাথা নিচু করে দাঁড়িয়েছিলেন ছাই রঙের ফুলস্লিভ জামা এবং কালো ট্রাউজার্স পরা দেবজ্যোতি।
পরে বিচারকের প্রশ্নের উত্তরে দেবজ্যোতি অবশ্য বলেন, “আমি নির্দোষ।” আদালতে হাজির ছিলেন এই মামলায় অভিযুক্ত সিপিএমের নানা স্তরের নেতারাও। সরকারি কৌঁসুলি জানান, তাঁদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করে খুন ও ভীতি প্রদর্শনের অভিযোগ আনা হয়েছে। তবে সিপিএম নেতারাও আদালতে দাবি করেন, তাঁদের মিথ্যা ভাবে ফাঁসানো হয়েছে।
এখনও শুকোয়নি চোখের জল। তুহিন সামন্তের স্ত্রী ও ছেলে। ছবি: অসিত বন্দ্যোপাধ্যায়।
সাত বছর আগে সেই দিনটায় কাটোয়ার নন্দীগ্রামে তুহিনদের বাড়ি থেকে চার কিলোমিটার দূরে চান্ডুলী উচ্চ বিদ্যালয়ে অভিভাবক প্রতিনিধি নির্বাচন ছিল। মুর্শিদাবাদের কান্দিতে বিমলচন্দ্র আইন কলেজের শিক্ষক তুহিনও সেখান গিয়েছিলেন। ভোট চলাকালীন স্কুলের ভিতর সিপিএম ও কংগ্রেসের মনোনীত প্রার্থীদের মধ্যে গোলমাল বাধে। তা সামলাতে সাদা পোশাকে কংগ্রেসের শিবিরে ঢুকে দেবজ্যোতি একেবারে কাছ থেকে তুহিনকে গুলি করেন বলে অভিযোগ। গুলি বুক ফুঁড়ে যায়। ঘটনাস্থলেই তুহিন মারা যান।
কাটোয়া থানার তৎকালীন সাব-ইনস্পেক্টর জুলফিকার আলি নিজেকে ‘প্রত্যক্ষদর্শী’ বলে দাবি করে ওসি-র বিরুদ্ধে অনিচ্ছাকৃত মৃত্যু ঘটানোর অভিযোগ দায়ের করেন। গ্রেফতার হলেও এক সপ্তাহের মধ্যে দেবজ্যোতি জামিন পেয়ে যান। পুলিশ-প্রশাসনের ভূমিকায় ক্ষুব্ধ হয়ে তুহিনের ভাই তুষার সামন্ত কাটোয়া আদালতে দেবজ্যোতি ও সাত সিপিএম নেতার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করে খুনের অভিযোগ দায়ের করেন। প্রবল সমালোচনার মুখে পড়ে তৎকালীন বাম সরকার সিআইডি-কে তদন্তভার দেয়। তারা কলকাতার গড়িয়া থেকে ফের দেবজ্যোতিকে গ্রেফতার করে। কিন্তু ৯০ দিনের মধ্যে সিআইডি চার্জশিট জমা দিতে না পারায় সমস্ত অভিযুক্ত জামিন পেয়ে যান।
ঘটনার ২৭ মাস পরে সিআইডি আদালতে চার্জশিট পেশ করে জানায়, ৮৭ জনের বয়ান নেওয়া হয়েছে। তার মধ্যে চার জন প্রতক্ষ্যদর্শী। যে নাইন এমএম পিস্তল থেকে গুলি চালানো হয়েছিল, দেবজ্যোতির কাছ থেকে তা বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। রিভলভার ও গুলি পরীক্ষার জন্য মুম্বইয়ে ভাবা অ্যাটমিক রিসার্চ সেন্টারে পাঠানো হয়েছিল। সেখানকার বিশেজ্ঞেরা জানান, ওই রিভলভারের গুলিতেই ফুটো হয়েছিল তুহিনের জামা।
চার্জশিট জমার পরে চার্জ গঠন হতে পাঁচ বছর সময় লাগল কেন?

দেবজ্যোতি সাহা

তুহিন সামন্ত
সিআইডি-র বক্তব্য, চার্জশিট জমা পড়ার পরে বিভিন্ন কারণ দেখিয়ে আদালতে হাজির হচ্ছিলেন না সব অভিযুক্ত। এ ভাবে বছরখানেক কাটার পরে ২০১০-এ নিরাপত্তাজনিত কারণ দেখিয়ে মামলাটি বর্ধমান আদালতে স্থানান্তরের আবেদন জানান অভিযুক্ত সিপিএম নেতা হরিনারায়ণ সামন্ত। কয়েক মাস শুনানির পরে আদালত তা খারিজ করে। এর পরে দেবজ্যোতি বর্ধমান আদালতে জানান, কাটোয়ায় তাঁর আইনজীবী পেতে অসুবিধা হচ্ছে। মামলাটি স্থানান্তরিত করা হোক। গত বছর জানুয়ারিতে ওই আর্জিও খারিজ হয়। এর পরে দীর্ঘ সময় কাটোয়া আদালতে কোনও অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা বিচারক ছিলেন না। আগামী ২২ মে সাক্ষ্যগ্রহণ শুরুর দিন হিসেবে নির্ধারিত হয়েছে।
তুহিন যখন খুন হন, তাঁর এক মাত্র সন্তান ত্রিদিবের বয়স ছিল আড়াই বছর। এখন সে প্রায় দশ। কিছু দিন আগেও সে জানত না, তার বাবা আর ফিরবে না। এ দিন বিকেলে বাড়িতে তাকে কোলে নিয়ে বসে তুহিনের স্ত্রী নিষাদ বলেন, “আইনি লড়াইয়ের আরও একটা ধাপ এগোল। বুকের মধ্যে অনেক কষ্ট নিয়ে আছি।” বলতে-বলতে চোখ বেয়ে জল গড়িয়ে পড়ে তাঁর। ত্রিদিব বলে ওঠে, “কেঁদো না মা, খুনি ঠিক শাস্তি পাবে।”

পুরনো খবর:



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.