একদিকে শরীরে টান, অন্যদিকে টাকায়। বলভরসা একটাই, মনের জোর। আর সেই মনের জোর সম্বল করেই এভারেস্টে পাড়ি দিতে চান দুর্গাপুরের পরেশচন্দ্র নাথ।
আগেও বহুবার হিমালয়ের নানা শৃঙ্গ মাথা নুইয়েছে পরেশবাবুর কাছে। তবে এ বার এভারেস্ট জয়ের স্বপ্ন নিয়ে তাঁর চিন্তা একটাই, টাকা জোগাবেন কোথা থেকে। নানা সংস্থা, ব্যক্তির কাছে সাহায্যের আবেদন জানিয়েছেন তিনি।
বছর পঞ্চাশের পরেশবাবু পেশায় দর্জি। থাকেন ইস্পাতনগরীর বি জোনে চণ্ডীদাস বাজারের কাছে শরৎচন্দ্র অ্যাভিনিউয়ে। ১২ বছর বয়সেই দুর্গাপুজোয় বাজি ফাটাতে গিয়ে বাঁ হাত জখম হয়। বকাবকির ভয়ে শুরুতে বাড়িতে জানান নি। পরে যখন জানাজানি হয় তখন আর চিকিৎসার সময় ছিল না। সপ্তম শ্রেণিতে পড়ার সময়েই বাঁ হাত কেটে বাদ দিতে হয় তাঁর। সংসারের অভাবে পড়াশোনাও করতে পারেননি বেশি দূর। শুরু করেন দর্জির কাজ। দোকানেই আলাপ হয় সরোজ দে-র সঙ্গে। পর্বতারোহী সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত সরোজবাবুই মাথায় ঢুকিয়ে দেন পাহাড়ে চড়ার নেশা।
|
জম্মু কাশ্মীরের জওহর ইনস্টিটিউট অফ মাউন্টেনিয়ারিং, দার্জিলিংয়ের হিমালয়ান ইনস্টিটিউট অফ মাউন্টেনিয়ারিং থেকে একাধিক কোর্স করেন পরেশবাবু। ১৯৮৯ সালে প্রথম অভিযান। গাড়োয়াল হিমালয়ের সপ্তশৃঙ্গে আরোহণ করতে চাইলেও পারেননি। তারপর অবশ্য অদম্য ইচ্ছের কাছে হার মেনেছে পাহাড়ও। ১৯৯১ সালে হিমাচল প্রদেশের সিটিধর (উচ্চতা ৫২৯৪ মিটার) শৃঙ্গে চড়েন। ১৯৯৩ সালে ওঠেন গাড়োয়াল হিমালয়ের থালু (৬০০০ মিটার) ও কোটেশ্বরে (৬০৩৫ মিটার)। এখনও পর্যন্ত ২৬ বার অভিযানে বেরিয়েছেন পরেশবাবু॥
চার দশকেরও পুরনো পর্বতারোহী সংগঠন ‘দুর্গাপুর মাউন্টেনিয়ার্স অ্যাসোসিয়েশন’-এর সাধারণ সম্পাদক সাগরময় চৌধুরী জানান, এভারেস্ট অভিযানের সুযোগ পেতে বহু কাঠখড় পোড়াতে হয়। পরেশবাবু সেই সুযোগ পেয়েছেন। সংগঠন তাঁর পাশে আছে। সাগরময়বাবু বলেন, “পরেশবাবু ইতিমধ্যেই দুর্গাপুরকে বহুদূর এগিয়ে দিয়েছেন। এভারেস্ট জয়ে সবাই তাঁর পাশে দাঁড়ান।” |