পুরসভার অন্তর্গত হওয়ার পরে কেটে গিয়েছে দু’দশক। তবু মেলেনি বিদ্যুৎ।
আসানসোলের ৩১ নম্বর ওয়ার্ডের বেশ কিছু এলাকা এখনও সন্ধ্যা নামলেই ডুবে যায় আঁধারে। পুর এলাকায় বাস করেও এখনও বিদ্যুৎ সংযোগ আসেনি এই ওয়ার্ডের ভুঁইয়া পাড়া, আদিবাসী পাড়া, শিবানী বাউরিপাড়া ও বনসড়াকডিহির একাংশে। শুধু বিদ্যুৎ না মেলাই নয়, জলের সঙ্কট ও বেহাল যোগাযোগ ব্যবস্থা নিয়েও ক্ষুব্ধ এলাকাবাসী। পুরসভার তরফে অবশ্য আশ্বাস, সমস্যা মিটবে শীঘ্রই।
আসানসোল পুরসভায় সব থেকে বড় এই ৩১ নম্বর ওয়ার্ড। এক সময়ে এই এলাকা নিয়ে ছিল গাড়ুই গ্রাম পঞ্চায়েত। পুরসভা সূত্রে জানা যায়, ১৯৯৪ সালে ৩০টি ওয়ার্ডের সঙ্গে রানিগঞ্জ ও বারাবনি বিধানসভার গাড়ুই-সহ ৬টি পঞ্চায়েত এবং বার্নপুর নোটিফায়েড এলাকা যুক্ত করে ৫০টি ওয়ার্ড গঠন করে আসানসোল পুরসভাকে পুরনিগমে উন্নীত করা হয়। স্থানীয় বাসিন্দারা অভিযোগ করেন, পুরসভায় অধীনে আসার পরেও এলাকার উন্নয়ন তেমন কিছু হয়নি।
|
বিদ্যুৎ নেই এই স্কুলেও। —নিজস্ব চিত্র। |
বিদ্যুৎ সংযোগ ছাড়াই চলছে পলাশডিহা নিম্ন বুনিয়াদি প্রাথমিক বিদ্যালয়। বিশেষত গরমে নাকাল হয় খুদে পড়ুয়াদের। অথচ দু’শো ফুট দূরেই বিদ্যুতের খুঁটি পোঁতা আছে, যা দিয়ে সংযোগ গিয়েছে অন্য এলাকায়। বাসিন্দাদের আরও অভিযোগ, প্রশাসনের কোনও তরফেই এই বিস্তীর্ণ এলাকায় পরিস্রুত পানীয় জলের বন্দোবস্ত করা হয়নি। অথচ, প্রধান রাস্তার পাশে জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতরের পাইপলাইন দিয়ে জল যাচ্ছে কাল্লা পর্যন্ত। এলাকার বুক চিরে নিয়ে যাওয়া পাইপলাইনের দু’টি জায়গায় ছিদ্র করে এলাকার কিছু লোকজন জলের কলের খুঁটি বসিয়ে নিয়েছেন। সেখান থেকেই শীতলা, বনসড়াকডিহি, পলাশডিহা, বড়পুকুরিয়া, মৌজুরি ও লাগোয়া এলাকার মানুষজন জল নিয়ে যান বলে এলাকাবাসীর দাবি।
বনসড়াকডিহির খ্রিস্টানপাড়ার বাসিন্দা শিখা সাধুর দাবি, জলের অভাবে দীর্ঘদিনের বসতবা়টি ছেড়ে এডিডিএ নির্মিত উপনগরীতে বাড়ি কিনতে বাধ্য হয়েছেন। পলাশডিহার বাসিন্দা পূর্ণেন্দু ভকত জানান, সাইকেলে করে জল বয়ে আনতে হয়। বাউরিপাড়ার বিমল সিংহ, বাচ্চু গরাই ও বরুণ বাউরিদের আক্ষেপ, পঞ্চায়েত থেকে পুরসভার অন্তর্ভুক্ত হওয়ার পরে তাঁরা এলাকায় উন্নয়নের স্বপ্ন দেখেছিলেন। কিন্তু বাস্তবে তা হয়নি বলে তাঁদের অভিযোগ। তাঁদের আরও দাবি, ধাদকা রেলপাড় থেকে বনসড়াকডিহি হয়ে পাঁচগাছিয়া পর্যন্ত তিনটি বাস চলত। এলাকা পুরসভার অন্তর্ভুক্ত হওয়ার কিছু দিন পরেই সব বাস বন্ধ করে দেওয়া হয়। এখন প্রধান রাস্তা সেনর্যালে হয়ে সব বাস যাচ্ছে। এর ফলে অনেক বেশি ভাড়া দিয়ে অটোয় যাতায়াত করতে বাধ্য হচ্ছেন বাসিন্দারা। এলাকাবাসীর ক্ষোভ, প্রতিটি নির্বাচনের আগে নেতাদের প্রতিশ্রুতি ছাড়া কাজের কাজ কিছু হচ্ছে না।
ওই এলাকার কাউন্সিলর, ফরওয়ার্ড ব্লক থেকে সদ্য তৃণমূলে যোগ দেওয়া অরুণ মণ্ডল জানান, বিধায়ক তহবিলের টাকায় এলাকায় বিদ্যুদয়নের কাজ দ্রুত শুরু হবে। এলাকার জল সমস্যা নিরসনে কৃষিমন্ত্রী তথা আসানসোলের বিধায়ক মলয় ঘটক জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতরের সঙ্গে বৈঠক করেছেন বলেও জানান তিনি। অরুণবাবুর আশ্বাস, “সঙ্কট কেটে যাবে।”
|