বামেদের প্রার্থী হিসেবে ভোটে জেতার পরেও গত আড়াই বছরে তৃণমূলের বিরুদ্ধে মুখ খুলতে বা কোনও আন্দোলনে সামিল হতে বিশেষ দেখা যায়নি তাঁকে। বরং, রাজ্যের নানা মন্ত্রীর ঢালাও প্রশংসাই শোনা যেত তাঁর গলায়। ফরওয়ার্ড ব্লক সূত্রের দাবি, বছরখানেক ধরে দলের সঙ্গেও তেমন যোগাযোগ ছিল না গলসির বিধায়ক সুনীল মণ্ডলের। তিনি তৃণমূলে যোগ দিতে চলেছেন, বৃহস্পতিবার কানাঘুঁষো এই খবর শোনা যেতেই সুনীলবাবুর বাড়ির সামনে বিক্ষোভ দেখালেন এক দল ফরওয়ার্ড ব্লক কর্মী-সমর্থক। সুনীলবাবুর যদিও দাবি, নিচুতলার কর্মীদের মতামত নিয়েই তৃণমূলে যোগ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
কাঁকসা হাটতলায় কাঁকসা থানার কাছে বাড়ি সুনীলবাবুর। কাঁকসা হাইস্কুলের বাংলার শিক্ষক তিনি। সীমানা পুনর্বিন্যাসের পরে কাঁকসা বিধানসভা দু’ভাগ হয়ে যায়। তিনটি পঞ্চায়েত পড়ে দুর্গাপুর পূর্ব কেন্দ্রে। কাঁকসা, ত্রিলোকচন্দ্রপুর, বিদবিহার, বনকাটি এই চারটি পঞ্চায়েত পড়ে গলসি বিধানসভায়। ২০১১ সালে সেখানেই প্রার্থী হন সুনীলবাবু। তৃণমূল প্রার্থী জয়দেব সাহাকে ১১ হাজারের বেশি ভোটে হারিয়ে দেন তিনি। এলাকার ফরওয়ার্ড ব্লক কর্মী-সমর্থকদের একাংশের অভিযোগ, এর পর থেকেই তিনি তৃণমূলের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ হতে শুরু করেন। রাজ্যের স্বাস্থ্য বিধায়ক বিধানসভার স্ট্যান্ডিং কমিটির সদস্যও হন তিনি। |
বিধায়কের বাড়ির সামনে প্রহরা। —নিজস্ব চিত্র। |
বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই সুনীলবাবুর দলত্যাগের সম্ভাবনার খবর ছিল এলাকায়। সপরিবার তাঁর অনুপস্থিতি তা আরও জোরালো করে। বিকেলের দিকে ফরওয়ার্ড ব্লক কর্মী-সমর্থকেরা দলীয় বিধায়কের ভূমিকার সমালোচনা করে তাঁর বাড়ির সামনে গিয়ে ক্ষোভে ফেটে পড়েন। বিধায়কের বাড়ির সামনে পুলিশ মোতায়েন করে প্রশাসন। ফরওয়ার্ড ব্লকের কাঁকসা জোনাল সম্পাদক অনল দাসের দাবি, “এক বছর ধরে দলের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছিলেন না উনি। অর্থের লোভে তৃণমূলে যোগ দিয়েছেন।” যদিও সুনীলবাবু এ দিন সন্ধ্যায় ফোনে বলেন, “বামফ্রন্টের নাম করে শরিক দলগুলির সিপিএমের তাঁবেদারি করা অর্থহীন। আড়াই বছর বিধায়ক রয়েছি, বামফ্রন্টের কোনও বৈঠকে ডাক পাইনি। নিচুতলার কর্মীরাই সব। তাঁদের সঙ্গে কথা বলেই তৃণমূলে যোগ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।” বাড়ির সামনে ক্ষোভ-বিক্ষোভের ঘটনা আমল দিতে চাননি তিনি।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, বিধায়ক হিসেবে এলাকার বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজের জন্য তিনি বিধানসভায় সওয়াল করেছেন একাধিক বার। তবে সামনে দাঁড়িয়ে আন্দোলনে নেতৃত্ব দিতে তাঁকে সে ভাবে দেখা যায়নি। শুধু গত বছর অগস্টে স্থানীয় বাসিন্দাদের নিয়ে কাঁকসার সুভাষপল্লিতে দুর্ঘটনার সম্ভাবনার অভিযোগে এসার অয়েল প্রকল্পের পাইপ লাইন পাতার কাজ বন্ধে নেতৃত্ব দেন। পরে অবশ্য আলোচনার মাধ্যমে সমস্যা মিটে যায়।
কাঁকসার সিপিএম নেতারা জানান, গত বিধানসভা নির্বাচনের আগে সুনীলবাবু কোনও দিন সক্রিয় রাজনীতিতে যুক্ত ছিলেন না। সিপিএমের প্রাক্তন কাঁকসা জোনাল সম্পাদক তথা দলের জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য বীরেশ্বর মণ্ডলের দাবি, “বামফ্রন্ট প্রার্থী হিসেবে তাঁর হয়ে আমরা প্রচার করেছিলাম। প্রার্থীর পরিচিতি কী, সে প্রশ্নে জেরবার হয়ে গিয়েছিলাম।” সুনীলবাবু তৃণমূলে যোগ দিতে পারেন শুনে তাঁর প্রতিক্রিয়া, “এ তো হওয়ারই ছিল!” তৃণমূলের কাঁকসা ব্লক যুব সভাপতি পল্লব বন্দ্যোপাধ্যায়ের পাল্টা বক্তব্য, “সুনীলবাবু মানুষের জন্য কাজ করতে চান। সেটা কোন দলে থেকে ভাল করা যাবে, তা উপলব্ধি করেই উপযুক্ত সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তিনি।”
|