টানা দশ বছর ধরে চেষ্টা চালাচ্ছে ‘সুইস’ আর ‘সাক্ষী’। তিরতির করে বয়ে চলেছে ফাঁসখাওয়া নদী। এক দিকে জয়ন্তীর জঙ্গল, অন্য দিকে ভুটান পাহাড়। চারপাশে গাছগাছালি। মধ্যে একফালি পাথুরে জমি। আগাছা পরিষ্কার করে ওই জমিতেই তৈরি হয়েছে পর্যটন কেন্দ্র। শীতের মরসুমে সেখানে পিকনিক করার ভিড় লেগেই রয়েছে। পর্যটকদের দিনভর বেড়ানোর জায়গা হিসেবেও কম আকর্ষণীয় নয় কুমারগ্রামের ওই পর্যটন কেন্দ্র।
ডুয়ার্সের কুমারগ্রাম ব্লকের তুরতুরি খণ্ড গ্রাম পঞ্চায়েতের বক্সা বনাঞ্চল লাগোয়া নদীর পাড়ের আগাছায় ঘেরা জমি একসময় সাপ, জোঁকের ডেরা বলে পরিচিত ছিল। ২০০৪ সালে নদী পাড়ের পরিত্যক্ত ওই জমির আগাছার জঙ্গল সাফ করে পিকনিক স্পট তৈরির পরিকল্পনা করেন ‘সুইস’ ও ‘সাক্ষী’ এই দুই স্বনির্ভর গোষ্ঠীর সদস্যেরা। নিজেরাই পাথর ফেলে তাঁরা ওখানে যাওয়ার রাস্তা তৈরি করেছেন। খড়ের ছাউনি দেওয়া বিশ্রাম ঘর হয়েছে। বেঞ্চ, অস্থায়ী শৌচাগারেরও ব্যবস্থা করেছেন স্বনির্ভর গোষ্ঠীর সদস্যেরা।
সদস্যেরা জানিয়েছেন, শুরুর পরে প্রথম তিন মাসে আয় হয়েছিল মাত্র ১৯০০ টাকা। এক দশক পরে আয়ের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১ লক্ষ ৩০ হাজার টাকা। তবে পিকনিক বা পর্যটক দলের মাথা পিছু ১০ টাকা প্রবেশ মূল্য এক দশকেও বাড়ানো হয়নি। যদিও গোষ্ঠীর সদস্যদের দাবি, ওই এলাকার উন্নতিতে সরকারি সাহায্য না মিললে বাসিন্দাদের ঘুরে দাঁড়ানো সম্ভব নয়। তাঁরা জানান, বছরে মাত্র তিন মাস পিকনিক স্পষ্ট চালু থাকে। খরচ-খরচা বাদ দিয়ে খুব একটা টাকা কেউই পান না।
গোষ্ঠী সদস্য বিনয় তিরকে, সঞ্জয় বাসফোর, লেলেন এক্কার মত একদল তরুণ-তরুণীর উদ্যোগের কথা জানেন বনমন্ত্রী বিনয় বর্মন এবং বন উন্নয়ন নিগমের চেয়ারম্যান রবীন্দ্রনাথ ঘোষ। বিনয়বাবু বলেন, “স্বনির্ভর গোষ্ঠীর সদস্যেরা ওই বিষয়ে নিজেদের মত করে চেষ্টা করছেন জেনে ভাল লাগছে। খোঁজ নিয়ে, প্রয়োজনে নিজে গিয়ে সরকারি ভাবে পরিকল্পনা নেওয়া যায় কি না তা খতিয়ে দেখব।” রাজ্যের বন উন্নয়ন নিগমের চেয়ারম্যান রবীন্দ্রনাথ ঘোষ বলেন, “সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব পেলে নিগমের মাধ্যমে আমরাও ওখানে কিছু করার চেষ্টা করব।” আলিপুরদুয়ার কলেজের স্নাতক বিনয় তিরকে বলেন, “জলের সুব্যবস্থা, রাস্তাঘাটের উন্নয়ন থেকে স্থায়ী কটেজ তৈরির প্রয়োজন রয়েছে।” বিডিও শিলাদিত্য চক্রবর্তী বলেন, “ভৌগোলিক কারণে এলাকায় নলকূপ কিংবা কুয়ো খোঁড়ার সমস্যা রয়েছে। পর্যটনের স্বার্থে অন্য ভাবে সমস্যা মেটানোর চেষ্টা করা হচ্ছে।” |