কাঁটাতারের বেড়ার ও পারে ভারতীয় ভূখন্ডে বসবাসকারীদের মূল ভূখন্ডে স্থানান্তরের জন্য দক্ষিণ দিনাজপুরের সীমান্ত এলাকায় জমি চিহ্নিত করতে উদ্যোগী জেলার ভূমি ও ভূমি রাজস্ব দফতর। কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে সম্প্রতি সীমান্তবর্তী জেলাগুলিকে দ্রুত এ নিয়ে পদক্ষেপ করতে বলা হয়েছে। প্রাথমিক ভাবে ও পারে বাংলাদেশের দিকে উন্মুক্ত এ রাজ্যের ১৪২ গ্রামকে চিহ্নিত করতে জেলাগুলির ভূমি ও ভূমি রাজস্ব দফতরে তালিকা পাঠিয়ে দিয়েছে সীমান্তরক্ষী বাহিনী। জেলা ভূমি ও ভূমি রাজস্ব আধিকারিক তথা অতিরিক্ত জেলাশাসক সুবলচন্দ্র রায় বলেন, “কাঁটা তারের এ পারে জমি খোঁজার কাজ শুরু হয়েছে। ব্লক ভূমি ও ভূমি রাজস্ব আধিকারিকদের এই নিয়ে সমীক্ষা করতে বলা হয়েছে।”
দক্ষিণ দিনাজপুরে হিলি সীমান্তে ২০, বালুরঘাটে ৩, গঙ্গারামপুরে ২টি, কুমারগঞ্জে ১টি গ্রামের মানুষ কাঁটা তারের ও পারে বসবাস করেন। শিক্ষা, চিকিৎসা থেকে প্রশাসনিক সুবিধা পেতে তাদের এ পারে আসতে হয়। সন্ধ্যা ৬টার পর সরকারি নিয়মে ওই গেট বন্ধ হয়ে যায়। পরবর্তী ১২ ঘণ্টা এলাকার বাসিন্দারা মূল ভারত ভূখন্ড থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে রাত কাটান। রাতে কেউ অসুস্থ হয়ে পড়ল সমস্যায় পড়েন তাঁরা। পর দিন সকাল ৬টায় ফের কাঁটাতারের বেড়ার গেট খুললে পরে এ পারে হাসপাতাল, পুলিশের সঙ্গে তাদের যোগাযোগ সম্ভব হয়। হিলি সীমান্তের কাঁটাতারের বেড়ার ও পারে থাকা উজাল, হাড়িপুকুর, হিন্দুমিশন পাড়া, উত্তর আগ্রা গ্রামগুলিতে গড়ে ৩০-৪০ ঘর লোকের বাস। বাসিন্দারা জানান, কাঁটাতারের গেট পেরিয়ে এ পারের মূল ভূখন্ডে এসে তাঁরা ভোট দেন। ছেলেমেয়েরা স্কুলে যায়। চাষিরা কৃষিপণ্য নিয়ে বাজারে যান। কিন্ত সন্ধ্যা ৬টা আগেই তাদের ফিরতে হয়। এক বার গেট বন্ধ হলে সেই দিনের মতো তাঁদের আর ঘরে ফেরা হয় না। পাশাপাশি কাঁটাতারে ঘেরাও হয়ে মূল ভারত ভূখন্ড থেকে বিচ্ছিন্ন থাকায় গ্রামগুলিতে বাংলাদেশি দুষ্কৃতীর হানা লেগেই থাকে বলে তাঁরা জানিয়েছেন।
তাঁদের নলিশ, নিজভূমে পরবাসী হয়ে থাকতে হয় তাঁদের। এই সমস্যার সমাধান করতে ও সীমান্তের ওই সমস্ত গ্রামের মানুষের মানবাধিকার প্রতিষ্ঠায় গুরুত্ব দিয়ে মূল ভূখন্ডের সঙ্গে তাঁদের যুক্ত করতে তৎপর ভারত সরকার। তবে সীমান্তে সেই পরিমাণ খাসজমি না থাকার জন্য বাসিন্দাদের স্থানান্তরের ক্ষেত্রে সমস্যা হতে পারে বলে প্রশাসন সূত্রের খবর। প্রয়োজনে সীমান্তের ওই সমস্ত এলাকা থেকে দুই কিলোমিটারের মধ্যে খাস জমি খুঁজে বাসস্থানের ব্যবস্থা করতে বলে কেন্দ্র। অতিরিক্ত জেলাশাসক সুবলবাবু বলেন, “বেড়ার ও পারে ভূমিহীন বাসিন্দার একাংশের জন্য রাজ্য সরকারের ‘নিজ গৃহ নিজ ভূমি’ প্রকল্পে এই পারে বাড়ি তৈরি করে দেওয়া সম্ভব। বাকি জমি কিনতে হবে। আপাতত ওই কর্মসূচি কার্যকর করতে কাঁটাতারের বেড়ার এ পারে কতটা জমি প্রয়োজন তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে তিনি জানিয়েছেন। |